সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে গেল ৯ মাসে ৬২ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও ৬৫ জন। দায়িত্বশীলরা বলছেন, দুর্ঘটনারোধে চালকদের প্রশিক্ষণ, অনিবন্ধিত সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বিভাগের তদারকি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক মেরামত, মোড়ে লুকিং মিরর বসানো ও পর্যাপ্ত সাইন বসানোর যেতে পারে।
গত কয়েক মাসে উদ্বেগজনকভাবে সিলেট– সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব দুর্ঘটনায় সরকারি চাকরিজীবী, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীসহ বহু অভিভাবকের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে নিবন্ধনহীন সিএনজি ও চালক, এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সড়কে বেপরোয়া চলাচল। সরু সড়কের দু’পাশে গাছের ঝুলন্ত ডাল–পালা থাকায় চালকদের অনেক সময় ভুল লেনে যেতে হয়। এছাড়া রাস্তায় বড় বড় গর্ত, এবং মোড়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা না যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে সড়কের গর্তগুলো দ্রুত মেরামত, দু’পাশের গাছের বড় ডাল–পালা ছাঁটাই, মোড়গুলোতে ‘লুকিং মিরর’ স্থাপন, অনিবন্ধিত সিএনজি ও চালক এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করা জরুরি। এ ছাড়া সড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ’র তথ্য মতে, গেল নয় মাসে ৬০টি দূর্ঘটনায় সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৬২ জন। আহত হয়েছেন আরও ৬৫ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ১০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন। আহত হয়েছেন সাত জন। ফেব্রুয়ারিতে ১২ দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ২৮ জন। মার্চ মাসে সাত টি দুর্ঘটনায় আট জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন চার জন। এপ্রিলে ছয়টি দুর্ঘটনায় ছয় জনের প্রাণ গেছে। মে মাসে দুইটি দুর্ঘটনায় দুইজনের প্রাণ গেছে। জুনে পাঁচ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে চারজনের, আহত হয়েছেন পাঁচজন। জুলাই মাসে আট দুর্ঘটনায় সাত জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। আগস্ট মাসে পাঁচটি দুর্ঘটনায় ছয়জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন পাঁচ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচটি দুর্ঘটনায় সাত জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন দুই জন।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুজাউল কবির বলেন, প্রতিটি বাজারে অবৈধ দোকানপাট রয়েছে। সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলো সড়ক থেকে তুলতে হবে। সড়কের দু’পাশের গাছের ডাল—পালা কেটে দিতে হবে। এই ডাল পালার কারণে বাসের চালকদের অনেক সময় সাইট থেকে সরে ভুল লেনে চলে যেতে হয়। এতে ঘটে দুর্ঘটনা। অনিবন্ধিত সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত পরিবহনের জন্যও দুর্ঘটনা বাড়ছে। সব মিলিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আনা গেলে দুর্ঘটনা কমবে।
জয়কলস হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন কুমার বর্মন বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য বিভিন্ন পরিবহন স্টেশনে সচেনতনামূলক সভা করেছি। সড়কে অবৈধ থ্রি হুইলার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ মোতাবেক অনুমোদনবিহীন পরিবহন, লাইসেন্সবিহীন চালক ও ট্রাফিক আইন না মানায় গত তিন মাসে বিভিন্ন রকমের অবৈধ যানবাহনে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) দুইশটি প্রসিকিউশন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ মোটরযান পরিদর্শক শফীকুল ইসলাম রাসেল বলেন, অনিবন্ধিত যান ও চালকের লাইসেন্স না থাকলে ভয় নিয়ে পরিবহন চালান তারা। সম্প্রতি অনিবন্ধিত সিএনজি ও চালকের সংখ্যা বেড়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। এজন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। মঙ্গলবার দু’টি সিএনজি ডাম্পিং করা হয়েছে। এধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ্ বললেন, দুই লেনের সড়কে পরিবহন বেড়েছে। এজন্য দুর্ঘটনাও বেড়েছে। এটি কমাতে সড়ক বড় করতে হবে। আমরা সিলেট সুনামগঞ্জ সড়ক ৪ লেন করার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কাজটি দ্রুত হওয়া প্রয়োজন।