ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে সরকার। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল চলছে। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় নতুন ইউএনও হিসেবে পদায়ন পান ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাখী ছেপ। তবে যোগদানের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন পোস্ট ও মন্তব্যে তাঁকে গোলাপগঞ্জে যোগদান করতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ‘রক্তের বদলা’ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘হযরত শাহজালালের পুণ্যভূমিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না’। এমন বক্তব্য ঘিরে প্রশাসন ও সচেতন মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে ব্যাপক রদবদল করে। নির্দলীয় ও পেশাদার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে এই পদায়ন দেওয়া হয়। এতে ৩৬তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে পদায়ন পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। কোথাও আবার তাঁদের পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন কর্মকর্তার পদায়ন বাতিল করা হয়। কেউ কেউ দায়িত্ব নিতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েন। এর আগে নারায়ণগঞ্জে পদায়ন পাওয়া এক কর্মকর্তা প্রতিবাদের মুখে যোগদান করতে পারেননি বলেও জানা গেছে।
সর্বশেষ গোলাপগঞ্জে পদায়ন পাওয়া ইউএনও শাখী ছেপকে নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে তাঁর পদায়নের খবর প্রকাশের পর কিছু সংগঠনের কর্মীরা আবারও সক্রিয় হন। অভিযোগ ওঠে, তাঁকে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদিও তাঁর সহকর্মীদের একটি অংশ বলছেন, শাখী ছেপ অতীতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কারণেই এই পদায়ন পেয়েছেন।
এ বিষয়ে সিলেট অঞ্চলের মানবাধিকারকর্মী আরিফ চৌধুরী বলেন, কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া আইন ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। বিষয়টি আরও সংবেদনশীলভাবে দেখার সুযোগ ছিল। প্রশাসনের উচিত আগেভাগেই পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান ইউএনও মিল্টন চন্দ্র পাল বলেন, নতুন পদায়নপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং যোগদানের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছিলেন। তবে পরে তিনি কেন যোগদান করেননি, সে বিষয়ে কিছু জানেন না।
এদিকে প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া গুরুতর অপরাধ। হুমকিদাতাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি 


















