সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া এলাকায় স্টেডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন বিএনপি কর্মী এমন তথ্য প্রকাশের পর স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। মোগলাবাজার থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে তাদের গ্রেপ্তার ও ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)।
ভোররাতে ‘টার্গেটেড’ ডাকাতি
পুলিশ জানায়, সোমবার (০১ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে স্টেডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিস লিমিটেডের কাভার্ড ভ্যানটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের লালমাটিয়া এলাকায় পৌঁছালে সামনে দুটি সাদা নোহা মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার ব্যারিকেড দেয়।
এরপর ৬-৭ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল চালক ও হেলপারকে মারধর করে কনটেইনার থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার কুরিয়ার মালামাল লুট করে নেয়। ছিনিয়ে নেয় চালক–হেলপারের দুইটি মোবাইল ফোনও। ঘটনার পরপরই পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির রুট চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করে।
সিসিটিভি থেকে গ্রেপ্তার – অভিযানে চমক
অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়: সাকেল আহমদ (৩৩), পশ্চিমভাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, আক্তার হোসেন (৩৪), পূর্ব শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী, রিহাদ আহমেদ (৩৭), সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা, বিএনপি কর্মী ও গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থী
পুলিশ জানায়, তিনজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক বিতর্ক
স্থানীয় সূত্র বলছে, রিহাদ আহমেদ ও আক্তার হোসেন সিলেট–৩ আসনে ধানের শীষের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজন।
গ্রেপ্তারের পর তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বহু স্থিরচিত্রে তারা উপস্থিত।
নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও দলীয় রাজনৈতিক পোস্ট ও ছবি প্রকাশ করতেন নিয়মিত।
মহানগর ও মোগলাবাজার থানা বিএনপির একাধিক সূত্র বলেছে, তারা দু’জনই দীর্ঘদিনের কর্মী হলেও কোনও সাংগঠনিক পদে নেই।
ডাকাতির মালামাল উদ্ধার ও লুকানো ছিল কচুর ঝোপে
এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনজনই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিহাদের বাড়ির বাউন্ডারির ভেতরে কচুর ঝোপে লুকানো ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে : ৩টি সাদা প্লাস্টিক বস্তা, ২টি কালো পলিথিন বস্তা, ২টি খাকি রঙের কার্টন যার সবগুলোতেই ছিল লুট হওয়া কুরিয়ার মালামাল।
বিএনপির নীরবতা ও স্থানীয় মহলে প্রশ্ন
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো স্বার্থের জন্য দলীয় পরিচয় ব্যবহার করা হয় কিনা, বা এই ডাকাতদলের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না। তবে দলীয় পদ না থাকলেও গ্রেপ্তার দুইজনের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বিষয়টিকে আরও বিতর্কিত করেছে।
ডাকারির ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদক 


















