সিলেটের হাওরাঞ্চল বর্ষা মৌসুমে পানি দিয়ে ভরপুর মনে হলেও বাস্তব চিত্র হলো, ভূগর্ভস্থ পানি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কূপ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে গড় পানির স্তর ৮.০২ মিটার থেকে নেমে ৭.০৮ মিটারে পৌঁছেছে। বিশেষ করে ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কূপে পানি মাত্র ২–৪.৫ মিটারের মধ্যে ওঠানামা করছে, যা পানির সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ সময়ে সিলেটে বৃষ্টিপাত বেড়েছে; বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৪২০০ মিলিমিটর থেকে বেড়ে ৫০০০ মিলিমিটরে দাঁড়িয়েছে। তবু ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি পায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন – পুরু কাদামাটি ও কঠিন শিলার স্তর – বৃষ্টির পানি সহজে ভূগর্ভে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা সেচের জন্য মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
২০৫০ সালের পূর্বাভাস আরও আশঙ্কাজনক। গবেষণায় ব্যবহৃত MAKESENS মডেল অনুযায়ী, দক্ষিণ সুরমার কিছু কূপের পানির স্তর সাকশন পাম্পের সক্ষমতার বাইরে নেমে যেতে পারে। বিশেষ করে SY৫৫ নম্বর কূপের পানি ৩.২১ মিটার নিচে এবং SY১১১ কূপের পানি ২.৫১ মিটার নিচে নেমে যেতে পারে।
তবে কিছু এলাকা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। গোলাপগঞ্জ (SY৫৩) ও দক্ষিণ সুরমা (SY৫৭) কূপের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পানির স্তরের গড় মাত্র সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। গবেষকরা বলেন, এসব স্থিতিশীল অঞ্চলকে মডেল হিসেবে ধরে আশপাশের সংকটাপন্ন এলাকায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করছেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও কৃত্রিম রিচার্জ বাড়ানো, আধুনিক সেচ প্রযুক্তি যেমন ড্রিপ ইরিগেশন ও AWD পদ্ধতি ব্যবহার, ফসল বৈচিত্র্যকরণ এবং কঠোর নীতিগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মুক্তারুন ইসলাম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও গবেষক, বলেন, “ভূগর্ভস্থ পানি একটি অদৃশ্য সম্পদ। যদি এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে হাওরের কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।”
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘Environment, Development and Sustainability’-এ, ২০২৫ সালে।

নিজস্ব প্রতিবেদক 


















