শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম আজ (৭ অক্টোবর) মঙ্গলবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি ১৯৬৮ সালে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার পানবর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পড়াশুনা শৈশবে গ্রামের স্কুলে, অতঃপর জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে, জামালপুর জেলা স্কুলে, জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেধাবী ছাত্র, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত, মাধ্যমিকে চার লেটারসহ প্রথম বিভাগ প্রাপ্ত, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থানপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, সিলেট থেকে প্রচারিত হয়েছে চারটি বেতার নাটক-‘আলো অন্ধকার’, ‘স্বর্ণালি স্বপ্নের সাধ’, ‘পলাশ শিমুলের গল্প’ মনের মানুষ। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘রণমুখো সেপাই’ (১৯৯২)। প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- বাংলা বানানের কথা (১৯৯৮), বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস: রোমান্স প্রসঙ্গ (২০০৭), ভাষা ও সাহিত্য : কতিপয় প্রবন্ধ (২০০৯), দুজনে দজনার (কাব্য গ্রন্থ, ২০০৯), হৃদয়ামৃত (উপন্যাস, ২০১২) রবীন্দ্র উপন্যাস যোগযোগ প্রসঙ্গে (২০১২)। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থের (২০০৬) সিলেটের উপভাষার অন্যতম লেখক তিনি। এছাড়া বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের ‘ভূমিকা’ (২০১১) লিখেছেন। এক সময় লিখতেন রহিম আজিজ নামে। বাংলাদেশের ভাষা পরিকল্পনার ওপর পি-এইচ.ডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৯২ সালে কর্মজীবনের শুরু ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। ১৯৯৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর, বিভাগীয় প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং সর্বশেষ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম প্রানপ্রতিমাসুতে লেখা কবিতাগুলো পড়লে বুঝা যায় তিনি সাহিত্য ও ভাষার একজন বড় মাপের সাহিত্যিক ছিলেন। বইয়ের মুখবন্ধের মাধ্যমেই তা সহজে ফুটে উঠেছে। এই কবিতাগুলো প্রকাশিত না হলে পৃথিবীর এমন কী ক্ষতি হতো। বরং কালি আর কাগজের পয়সায় কিছু নিরন্ন মানুষের আহার জোগানো যেতো। কবিতা লেখা কি তবে কবির মনের খোরাক জোগানো নাকি অন্য কিছু।পৃথিবীর নানা ঘটনায় মানুষের মনে বিষক্রিয়ার জন্ম দেয়। সকলেই তা প্রকাশ করতে পারেন না। তাই সকলেই কবিতা লেখেন না, কেউ কেউ লেখেন। সকলেই ভাবেন, কিন্তু ভাষা খুঁজে পান না অনেকেই। যৌবনে কবিতা লেখেননি, এমন বাঙালি কম পাওয়া যাবে। অনেক কবিতা হারিয়ে যায় আমাদের অগোচরে। তবু কিছু কবিতা কেউ কেউ রেখে যেতে চান কালের ভেলায়। কালের স্রোতে হয়ত ভেসে যাবে সবি, তবু কারো কারো দু’এক ফোটা অশ্রু দাগ কাটে মনে, কালের কণ্ঠে কেউ কেউ বলে যান মনের ব্যথা, ধারাপাত রেখে যেতে চান সময়ের পাতায়। কবির কাছে পৃথিবীর বিষক্রিয়া হজম করার মাধ্যম কবিতা। ছাপা হওয়াই বড় কথা নয়, কবিতা লেখাটাই বড় কথা। কবিতা কবির মনোরোগ সারায়, পাঠকের মনোরোগকে সারায়। মানব মনের বেদনা লাঘব করার মাধ্যম কবিতা। ‘প্রাণপ্রতিমাসু’ কাব্য গ্রন্থের কবিতাগুলোতে কখনো প্রেমিকা, কখনো সন্তান, কখনো স্বদেশ, কখনো বা স্রষ্টা প্রাণের প্রতিমা হয়ে উঠেছে। সত্য ও সুখ সন্ধানী কবি স্রষ্টার জন্য নিবেদিত প্রাণ। সত্য আর সুন্দরের জন্য লড়াই-ই তাঁর ব্রত। সাহিত্য ও সাংবাদিকতার কারনে এক সময় স্যারের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে, মাঝে মধ্যে কথা হতো। দাওয়াতে এসেছেন আমার ফোরামের অনুষ্ঠানে। নিজ হাতে লেখা বই হাতে তুলে দিয়েছেন, আজ দায় মুক্তিতে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। পরিশেষে সু সাহিত্যিক ড. মো. আব্দুর রহিম স্যার এর মৃত্যুতে সিলেট কেন্দ্রীয় লেখক ফোরামের পক্ষ থেকে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আল্লাহ যেন তাহাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করেন।
লেখক : শফিক আহমদ শফি (সাংবাদিক)