, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেটের বিশ্বনাথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ চাচা গ্রেপ্তার বর্ণাঢ্য আয়োজনে সিলেট প্রেসক্লাব মেম্বারস ফ্যামিলি ডে উদযাপন মৌলভীবাজারে বাছুরসহ গাভি চুরি, বিধবার চোখে নেই শান্তি সিলেটে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের দুই নেতা গ্রেফতার সিলেটের ওসমানীনগরে সিএনজি চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের সিলেটে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ বিস্ফোরক উদ্ধার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পদায়নের আগেই হুমকির মুখে নতুন ইউএনও শাখী ছেপ বিশ্বনাথে জেন্ডার সচেতনা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দিরাইয়ে প্রশাসনের অভিযানে হকারমুক্ত ফুটপাত

মৌলভীবাজারে কচুর লতি চাষে বিপ্লব

তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলায় কচুর লতি চাষে নতুন বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা অন্য অনেক প্রচলিত ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা পূর্বের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা ও কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে লতি চাষ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই–তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকায়ই মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০–৭৫ কেজি লতি বিক্রি করছেন ৪০–৪৫ টাকা দরে। মৌসুম যত বাড়ছে, দামও বাড়ছে। মোট ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি আশা করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে।

গ্রামের আরেক কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি ১ কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বর্তমানে বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জে কচুর চাষে সফল হয়েছেন রঞ্জন কুমার নামের বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে কচুর লতি চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এ কৃষি উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি এখন কচুর লতি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অন্য কৃষকরাও।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ, ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ কওে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খোঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামটিতে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসল। চার-পাঁচ বছর আগে কম ছিল। দুই-তিন বিঘা জমিতে লোকজন লতি কচুর চাষ করতেন। এখন এখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি খুবই লাভজনক একটি ফসল। ফসলটিতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামে লতার চাষ বাড়ছে। এই গ্রামটি যেন লতার গ্রাম হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল। কৃষক অল্প খরচে বেশি লাভবান হচ্ছেন। আমরা লতি চাষ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি।

জনপ্রিয়

সিলেটের বিশ্বনাথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ চাচা গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজারে কচুর লতি চাষে বিপ্লব

প্রকাশের সময় : ০৩:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলায় কচুর লতি চাষে নতুন বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা অন্য অনেক প্রচলিত ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা পূর্বের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা ও কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে লতি চাষ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই–তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকায়ই মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০–৭৫ কেজি লতি বিক্রি করছেন ৪০–৪৫ টাকা দরে। মৌসুম যত বাড়ছে, দামও বাড়ছে। মোট ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি আশা করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে।

গ্রামের আরেক কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি ১ কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বর্তমানে বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জে কচুর চাষে সফল হয়েছেন রঞ্জন কুমার নামের বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে কচুর লতি চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এ কৃষি উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি এখন কচুর লতি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অন্য কৃষকরাও।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ, ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ কওে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খোঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামটিতে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসল। চার-পাঁচ বছর আগে কম ছিল। দুই-তিন বিঘা জমিতে লোকজন লতি কচুর চাষ করতেন। এখন এখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি খুবই লাভজনক একটি ফসল। ফসলটিতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামে লতার চাষ বাড়ছে। এই গ্রামটি যেন লতার গ্রাম হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল। কৃষক অল্প খরচে বেশি লাভবান হচ্ছেন। আমরা লতি চাষ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি।