জনতার চোখে ছিলেন ‘হৃদয়ের পুলিশ’, বদলির খবরে এলাকায় আবেগ ও বিস্ময়ের ঢেউ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ, পিপিএম নামটি এখন কোম্পানীগঞ্জবাসীর আবেগ, আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। দায়িত্ব নেওয়ার পর খুব অল্প সময়েই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এলাকার মানুষের ‘হৃদয়ের পুলিশ’। তার সম্ভাব্য বদলির খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাজুড়ে যে আবেগ ও শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রমাণ করে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলে তার মূল্যায়ন কতটা গভীর হতে পারে।
কোম্পানীগঞ্জের জনসাধারণ বলছেন, এই উপজেলার জটিল পরিবেশে পুলিশি দায়িত্ব পালন করা সহজ নয়। পাথর কোয়ারি এলাকা, পর্যটনকেন্দ্র, শ্রমজীবী মানুষের ঘনত্ব, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা সব মিলিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। এর মাঝেও দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ওসি রতন শেখ মাঠপর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
তার নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযান, জুয়া ও চাঁদাবাজি দমন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল বৃদ্ধি সব ক্ষেত্রেই ছিল তার সরাসরি উপস্থিতি। স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা আগে কখনো দেখিনি একজন ওসি রাতে–ভোরে নিজে অভিযান চালাচ্ছেন। তার কারণে পরিবেশ অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছিল।
তবে তাকে নিয়ে মানুষের ভালোবাসার আসল কারণ শুধু কঠোরতা নয় ছিল তার মানবিকতা। থানায় গেলে মানুষ পেতেন সুশৃঙ্খল সেবা। যেকোনো প্রয়োজনেই তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। থানার বাইরে বসে অভিযোগ শোনা, বৃদ্ধ–অসহায়দের সাহায্য করা, আজানের ধ্বনি শোনা মাত্র মসজিদে যাওয়া এসব কারণে তিনি হয়ে ওঠেন মানুষের চোখে ‘নিজের মানুষ’।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ওসি স্যারকে দেখে কখনো মনে হয়নি তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি আমাদের বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন।
এভাবে মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার ক্ষমতা থেকেই তাকে এলাকায় ডাকত ‘হৃদয়ের পুলিশ’।
তার কাজের স্বীকৃতিও এসেছে। তিনি পেয়েছেন, আইজিপি পদক (বার), জাতিসংঘ শান্তি মিশন পদক, শুদ্ধাচার পুরস্কার, সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ওসি (কোম্পানীগঞ্জের কার্যক্রমের জন্য) এসব পুরস্কার প্রমাণ করে, তিনি শুধু জনপ্রিয় নন কর্মদক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন অফিসার।
কোম্পানীগঞ্জে তার বদলির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বাজার, টং দোকান, স্কুল–কলেজ সব জায়গায় আলোচনা। অনেকে বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, এমন কর্মকর্তা খুব বিরল। যিনি মানুষের ভালোবাসার জন্য কাজ করেছেন। অনেকে আবেগে কেঁদে ফেলেছেন, কেউ কেউ স্মৃতি হিসেবে ছবি পোস্ট করেছেন।
এক স্থানীয় নারী বলেন, থানায় গেলে ভয় লাগত। কিন্তু উনি আসার পর মনে হয়েছে আমরাও মানুষের মতো সেবা পেতে পারি।
বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি রতন শেখ বলেন, পুলিশের চাকরিতে বদলি নিয়মিত বিষয়। আমি যেখানেই থাকি মানুষের জন্য সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব। কোম্পানীগঞ্জবাসীর ভালোবাসা আজীবন মনে থাকবে।
মানুষের প্রত্যাশা, তিনি যেখানে যান, সেখানেও তার মতো একজন সৎ ও মানবিক পুলিশ কর্মকর্তাকে পাবে সাধারণ জনগণ। আর কোম্পানীগঞ্জের মানুষ মনে করছেন, কিছু মানুষ চলে গেলে জায়গা শূন্য হয়ে যায়। রতন শেখ তেমনই একজন।

জুনেদ আহমদ 



















