জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে শুরু হয়েছে আবেগ আর নতুন ইতিহাস গড়ার লড়াই। কেউ আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজের মাঠ দখলে ব্যস্ত আবার কেউ নতুন ইতিহাস গড়ার প্রস্তুত নিয়ে মাঠ দখলের শুরু করেছেন চেষ্টা।
উভয় পক্ষের এ মাঠ দখলের প্রতিযোগিতায় সঙ্গী হয়েছেন নিজস্ব কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ও দলীয় সমর্থক।ফলে আবেগ নতুন আর ইতিহাস গড়ার লড়াই যেন পুরো নির্বাচনী এলাকাকে জমিয়ে তুলেছে। দীর্ঘদিন পরে এক পক্ষের দখলে থাকা বিএনপির এ আসনে কিছুটা হলে ও উত্তাপ শুরু হয়েছে। পুরো আসন জুড়ে এখন একটাই আলোচনার শীর্ষে কে হচ্ছেন ধানের শীষের কান্ডারী।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি,নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাই ছিলেন সিলেট ২ আসনের একা দাবীদার। কিন্তু গত মাস তিনেক আগ থেকে লুনার দুর্গে ভাগ বসালেন হুমায়ুন কবির।
যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরও এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি হুমায়ুন কবিরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্বনাথ।
বিশ্বনাথের একটি জনসভায় হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করে তিনি তার এই আসন তাঁকে ফিরিয়ে দেবেন।’ তাঁর এই বক্তব্য সাধারণ মানুষ অন্যভাবে নিয়েছে। বিএনপির দু’জন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে তার এই বক্তব্য দেয়ায় বিষয় আরও বিতর্কেও সৃষ্টি করেছে।
তাহসিনা রুশদীর লুনা হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা, সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন এম. ইলিয়াস আলী। রহস্যজনকভাবে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর এ আসনে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। ইলিয়াস আলীর অনুপস্থিতিতে তার উত্তরসূরি তাহসিনা রুশদীর লুনা মাঠে সক্রিয়।
ওসমানীনগর উপজেলার একাধিক বাসিন্দা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হলেন হুমায়ুন কবির।তিনি এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই মাঠে নেমেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত ব্যক্তি হুমায়ুন কবির যদি এমপি নির্বাচিত হন, তা শুধু আমার উপজেলা কিংবা সিলেটের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের জন্য হবে সম্মান ও গৌরবের। তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদেশের সুনাম বাড়বে। তাই তিনি মনে করেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে হুমায়ুন কবিরের মতো ব্যক্তিকে মনোনীত করা উচিত।
বিশ্বনাথ উপজেলার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ইলিয়াছ আলী শুধু সিলেটের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন জাতীয় রাজনীতির এক প্রান পুরুষ। তার অবর্তমানে স্ত্রী লুনাই এ আসনের প্রকৃত দাবীদার। আমরা ইলিয়াছ আলী হারানোর শোককে শক্তিতে পরিনত করতে তাহসিনা রুশদীর লুনাকে এ আসনের এমপি হিসেবে দেখতে চাই।
তবে সাধারন ভোটারদের মতে, ইলিয়াস পত্নী কখনো বিএনপির রাজনীতিক উত্তরসূরী হতে পারেন না, তবে পারিবারিক উত্তরসূরি তিনি। আবেগ দিয়ে আওয়ামীলীগ ধ্বংস হয়েছে,তাই নতুন বাংলাদেশে দরকার সেই ধারার বিপরীতে রাজীনিতিক যোগ্য উত্তরসূরী নির্বাচন। ইলিয়াস আলীকে দিয়ে কেবল নিবার্চনী এলাকার উন্নয়ন হয়নি, গোটা দেশে সুনাম বয়ে এনেছিলেন তিনি। দেশ ও জাতির অনন্য এক মুখপাত্র ছিলেন তিনি। সে ধারাবাহিকতা রক্ষায় উচিত ধানের শীষের প্রার্থী নির্বাচন।
এদিকে, হুমায়ুন কবির প্রায় তিনমাস ধরে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর আসনে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এতদিন নিজের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো ঘোষণা দেননি। এনিয়ে জনমনে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে বিশ্বনাথের ওই সুধী সমাবেশে তার নিজ মুখে সংসদ সদস্য প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে সেই জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটান।
এদিকে এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ধরে তাহসিনা রুশদীর লুনা নেতাকর্মীদের আগলে রেখে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তিনিও এই আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখে সভা-সমাবেশ করছেন।
আলাপকালে হুমায়ুন কবির বলেন,সিলেট ২ আসনে কাজ করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমার অবস্থান থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি আগামীর সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, নিখোজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াছ আলী ছিলেন সিলেট ২ আসনের মাটি ও মানুষের নেতা।
দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ধরে নেতাকর্মীদের আগলে রেখে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। সুখে দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি।
এ আসনের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য
আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য কাজ করছি। তিনি এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।