, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সাদাপাথর লুটপাটে সিলেট জামায়াতের নিন্দা : জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্থি দাবি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে : সিলেট বিএনপি স্কলার্সহোম কলেজে বিজ্ঞানমেলা, অলিম্পিয়াড ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ইসলামী ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার কাউন্সিল সফলে প্রস্তুতি সভা শুক্রবার নজিরবিহীন লুটপাটে স্থবির সাদাপাথর, সৌন্দর্য ফেরাতে তৎপর প্রশাসন সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার সিলেটে সাদা পাথর লুটপাট: অভিযানে ৫২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার সুনামগঞ্জে ৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭ জন সিলেট-৬ আসনে আলোচনায় সাবেক এমপি লেচুর মেয়ে আদিবা বালু-পাথর লুটপাট বন্ধে জাফলংয়ে প্রশাসনের অভিযান, ভাঙা হলো ১০০ নৌকা
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

নজিরবিহীন লুটপাটে স্থবির সাদাপাথর, সৌন্দর্য ফেরাতে তৎপর প্রশাসন

কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তবর্তী ধলাই নদীর উৎসমুখে ‘জল-নুড়ি-পাথর’ জমে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া অপরূপ সৌন্দর্যের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ লোভীদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে এভাবেই যেন শেষ হয়ে গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনে-রাতে লুটে নেওয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকার খনিজ সম্পদ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সিলেটে পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জের ‘সাদাপাথর’।মনোমুগ্ধকর সেই ‘সাদাপাথর’ এলাকাটি এখন প্রায় বিবর্ণ, যেন এক বিরাণভূমী। নজিরবিহীন পাথর লুটের ঘটনায় প্রশাসনের দায় দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল।

পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এক বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে সাদা পাথরে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দুই শত কোটি টাকার অধিক।শত শত কোটি টাকার পাথর লুটপাট শেষে যেন ঘুম ভেঙেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সিলেট জেলা প্রশাসনের। বুধবার সাদা পাথরে অভিযান চালিয়েছে দুদক সিলেট কার্যালয়। অপরদিকে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এছাড়াও সাদা পাথর নিয়ে গতকাল পর্যালোচনা সভা করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদক জানায়, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি টিম সাদা পাথর স্পটে গিয়ে তদন্ত করে। সাদা পাথরে গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসেনর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত দল। প্রাথমিক তদন্তে লুটপাটের ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানায় দুদক।

তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাত বলেন, যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবদেন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এ ধরনের লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি। পর্যটন খাতের ক্ষতির সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েকশ’ কোটি টাকার রাষ্ট্রের সম্পদ পাথর আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই পাথরগুলো লুট করা হয়েছে। আমরা এখানে আসার সময় সড়কের দু’পাশে অনেক পাথর দেখে এসেছি, তাছাড়া যারা পাথর লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এতদিন পরে কেন দুদক পরিদর্শনে এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কার্যালয় থেকে এটি অনেক দূরে। স্থানীয় প্রশাসনের অনেক কাছে, তাই তারা আরো সচেতন থাকার কথা ছিল। এছাড়া খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ যেসব বিভাগ এর সাথে যুক্ত, তাদের লুট ঠেকাতে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশপাশে অনেক স্টোন ক্রাশার মিল রয়েছে। এগুলোতে এখান থেকে পাথর নিয়ে ভাঙা হয়। এ ছাড়া এর সাথে এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন, আরো অনেক উচ্চস্থরের ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা জড়িত বলে শুনতে পাচ্ছি। আমরা এসব তথ্য নিয়ে কাজ করব।

পরিদর্শনের প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান রাফি মো. নাজমুস সাদাত। তিনি বলেন, যারা এই লুটের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে সাদাপাথরের পাথর লুট-পাটের ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। সাদা পাথরের পাথর ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবদেন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি সাদা পাথর লুটপাটের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে দুদক অভিযানে নামে এবং সিলেট জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে পাথর লুট শুরু হলেও এতদিন নিস্ক্রিয় ছিল দুদক ও জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ এক বছর ধরে সাদা পাথর লুটপাট চলেছে। এখন ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। পাথর লুট শেষে দুদক অভিযানে নামায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদকের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা অভিযোগ করে আসছেন, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই লুটপাট অব্যাহত রয়েছে, যা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, পর্যটন শিল্পকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এই লুটপাটে সিলেট বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম ঘুরেফিরে গণমাধ্যমে এসেছে। লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার পদও স্থগিত করা হয়েছে। তবুও পাথর লুট বন্ধ হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, লুটেরাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অসৎ’ লোকজন জড়িত। অনেক আপত্তি-অভিযোগ, সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো ফল হয়নি।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খবর প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
সাদাপাথর নিয়ে হৈ চৈ এর মধ্যে লুট হওয়া সব পাথর উদ্ধার করে এ এলাকাকে আগের চেহারায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এটিসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে –

>> চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

>> সাদাপাথর এলাকার পাশাপাশি জাফলং ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

>> গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে চেকপোস্টে যৌথ বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

>> অবৈধ পাথর ভাঙা মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করাসহ বন্ধ করার জন্য অভিযান চলমান থাকবে।

>> পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। পাথর লুট হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ফলে পর্যটকদের আনাগোনাও দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয়রা।

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “এর আগে আসি নাই। তবে মোবাইলে দেখে সৌন্দর্য বিমোহিত হয়ে আসছিলাম সাদাপাথরে। এসে খুবই হাতাশ। সব জায়গায় দেখতেছি পাথর নাই।

“জাফলংয়ে দেখেছি, আমাদের সামনে পাথর নিয়ে যাচ্ছে, পুলিশ কিছু বলতেছে না। অথচ পুলিশ পর্যটকদের নামতে বাধা দিচ্ছে। সাদাপাথরের প্রায় ৮০ ভাগ পাথর নিয়ে গেছে, যে ২০ ভাগ আছে সেটুকু যেন থাকে।”

লুটপাট বন্ধে বাধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে সাদাপাথর ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মো. আলমগীর আলমের অভিযোগ, “প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে যদি লুটপাট চলতে থাকে সাদাপাথরের এক হাজারের বেশি ব্যবসায়ী ও ১৫০ জন ফটোগ্রাফার বেকার হয়ে যাবে। সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেলে তো আর পর্যটক আসবে না।”

ঘোড়া দিয়ে পর্যটক বহনকারী হাসান মিয়া বলেন, “আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি পাথর লুটপাট বন্ধ করতে। কিন্তু তারা মানে না। আমি এখানে প্রতিদিন ঘোড়া চালিয়ে ৫০০ টাকা পাই, এই টাকা দিয়ে আমার পরিবার চলে। লুটপাট করে পাথর নিয়ে গেছে, তাই মানুষ আসে না। আমাদের ঘোড়াও চলে না, ইনকাম নেই। আমাদের পরিবার অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।”

ভোলাগঞ্জ ঘাট থেকে পর্যটকদের সাদাপাথর এলাকায় নিয়ে যাওয়া নৌকার মাঝিরা বলছেন, বর্তমানে যাতায়াত কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ছয় থেকে সাতবার যাতায়াত করা যেত, এখন সেখানে দু-তিনবার হয়। লুটপাট করে শেষ করে দেওয়ার কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে চান না।

একজন মাঝি বলেন, নৌকা চালক সমিতিতে ১৬০টি নৌকা রয়েছে। আগে শুক্রবার হলে ৮০টি থেকে ১০০টি নৌকা ট্রিপ পেত। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫টি নৌকা সিরিয়ালে ট্রিপ মারছে, তাও কোনো নৌকা দুটি বা তিনটি ট্রিপের বেশি মারতে পারে না। আমরা প্রতি ট্রিপে আসা-যাওয়ার জন্য ৮০০ টাকা করে নেই।”

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, “সাদাপাথরেতো পাথর লুট হয়ে গেছে। এই সিজনের যে পাথর আছে সবই তোলা নেওয়া হয়েছে। এখনো যে এটা থেমে যাবে, সেটা আশা করা যায় না।

“সিলেটের অন্যান্য এলাকাতেও পাথর উত্তোলনের প্রস্তুতি চলছে। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে এবং সেগুলোও বিরান করার প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থাতে যদি প্রশাসন একেবারে দায়সারা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে সিলেটের মানুষের উচিত হচ্ছে সবাই রাজপথে বের হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করা।”
বুধবার দুপুরের দিকে ভোলাগঞ্জ এলাকার নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মত নেই পর্যটকদের চাপ। নৌকাঘাটের ব্যবসায়ীরা বসে আছেন।
নৌকা নিয়ে সাদাপাথরের দিকে যেতে দেখা যায়, ধলাই নদীতে পর্যটকবাহী নৌকার চাপ একেবারে কম। সাদাপাথর এলাকায় গিয়ে নৌকা থেকে নামতেই চোখে পড়ে ধু ধু বালুচর। সেখানে থাকা পাথর লুটপাটের কারণে নিচে বালু বের হয়েছে। চারপাশে বালু আর বালু।

বালুচরে হেঁটে মূল স্পটে গিয়ে দেখা মেলে কিছু পাথরের। তবে মূল স্পটের কোথাও কোথাও জেগে উঠেছে বালুচর। পর্যটকদের বসার জন্য রাখা ছাতাবিহীন চেয়ার পড়ে আছে বালুচরে। মূল স্পটে অন্যদিনের তুলনায় পর্যটকদের আনাগোনা কম।

পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলের ধারাতে পর্যটকদের কেউ সাঁতার, কেউবা কোমর পানিতে বসে ভিজছেন। আর চারপাশে স্বচ্ছ জল ছিটাচ্ছেন। এভাবেই নদী, পাহাড় আর টিলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ কেউ আবার হাতে ছোট ছোট কয়েকটি পাথর নিয়ে জলে বসে সময় পার করছেন।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের বাম দিকে থেকে বাংকার পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত করে তোলা হয়েছে পাথর। এসব গর্তের গভীরতা কোথাও তিন ফুট, কোথাওবা পাঁচ ফুট হবে। গর্ত করে পাথর তোলার কারণে বালু ভেসে ওঠেছে। এর আগে মে মাসে এই পাশে প্রচুর পরিমাণে পাথর দেখা মিলেছিল। পাথর জমতে-জমতে স্তর পড়েছিল। বর্তমানে বালু আর বালু।

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ধরা’ এর আজীবন সদস্য ও সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, তীব্র স্রোতে ধলাই নদী হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে এসব পাথর আসে। পাঁচ একরের বেশি জায়গাজুড়ে এগুলো জমা হয়, যা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পটপরিবর্তনের পর ওইদিন রাত থেকেই সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর ও বালুসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের হিড়িক পড়ে।

“তখন আমরা সাদাপাথর পরিদর্শন করে লুট বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সাদাপাথর লুট পত্রিকায় এসেছে। কিন্তু জাফলং, লালাখাল, লোভাছড়া, বিছানাকান্দিসহ আরও অনেক এলাকার বালু ও পাথর লুটপাট হয়েছে, সেগুলো সংবাদপত্রে তেমন আসেনি।”

পাথর কোয়ারি নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক জহিরুল আরও বলেন, “সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক কিছু বিষয় ও মানুষের হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত অনেক কিছু জড়িত। অবিলম্বে এ এলাকাকে সত্যিকার অর্থে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’ ঘোষণা করে পুরো এলাকায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নদীকে নদীর মত থাকতে দিতে হবে। তাহলে হয়তোবা আগের অবস্থায় ফিরতেও পারে।”

ভোলাগঞ্জ ও সাদাপাথর এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, লুটপাটে বিএনপি, যুবদল ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাদাপাথর ও রেলওয়ে বাংকার এলাকার পশ্চিমপাড়ের পাথর লুটের নেতৃত্বে রয়েছেন সদ্য পদ স্থগিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন। আর পূর্বপাড়ের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেলসহ আরও কয়েকজন।
এছাড়া সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলফু মিয়ার বিরুদ্ধে বালু-পাথর লুটের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
তাদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষার দাবিতে মঙ্গলবার ধলাই পাড়ের মানুষ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ধলাই সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই ঘণ্টা ধরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলে।

লুটপাটের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদের মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল বলেন, “আমি বালু-পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। আমি ডিজেল-মোবিলের ব্যবসা করি। বালু-পাথর লুটপাটের সঙ্গে আমি জড়িত না।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট) পর্যন্ত অভিযানে অভিযানে প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের বড় অংশ ধলাই নদীতে ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
চেকপোস্টে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এ সময় প্রায় ৭০টি গাড়িতে সাদাপাথর এলাকার পাথর শনাক্ত হলে সেগুলো পুনরায় প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাপক লুটপাটের পর জেলা প্রশাসন গত ১৩ আগস্ট একটি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানায়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহকে প্রধান করে গঠিত কমিটি পাথর লুটের ঘটনা অনুসন্ধান করে। ১৭ আগস্টের মধ্যে এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পট সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,সাদা পাথর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে যে লুটপাট হয়েছে, তা রোধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই সময়ের মধ্যে যেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে এখানে আবার প্রতিস্থাপন করতে পারব। এটা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয় আমরা সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া এখানের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেই ক্ষতি যেন আর কেউ করতে না পারে এবং যারা এই কাজে জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিব এবং আইন যেভাবে আমাদের পারমিট করে সেভাবে আমরা তাদেরকে ধ্বংস করাসহ অন্যন্য যে প্রক্রিয়া আছে সেগুলো আমরা করব।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গতকাল জেলা পর্যায়ের একটি সভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাস্তবায়ন গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে এখানে প্রতিস্থাপন করতে পারব। অপূরণীয় ক্ষতি যাতে আর কেউ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি দায়িত্বে থাকা সবাই দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষতিসাধন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, ৫ আগস্টের পর যে লুটপাট হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধে কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। এতদিন বিষয়টি একটি সীমিত মাত্রায় ছিল, কিন্তু এবার তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাদা পাথরে আসুন। এখানকার পরিবেশ এখনও পর্যটনবান্ধব।’

জনপ্রিয়

সাদাপাথর লুটপাটে সিলেট জামায়াতের নিন্দা : জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্থি দাবি

নজিরবিহীন লুটপাটে স্থবির সাদাপাথর, সৌন্দর্য ফেরাতে তৎপর প্রশাসন

প্রকাশের সময় : ৩ ঘন্টা আগে

কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তবর্তী ধলাই নদীর উৎসমুখে ‘জল-নুড়ি-পাথর’ জমে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া অপরূপ সৌন্দর্যের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ লোভীদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে এভাবেই যেন শেষ হয়ে গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনে-রাতে লুটে নেওয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকার খনিজ সম্পদ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সিলেটে পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জের ‘সাদাপাথর’।মনোমুগ্ধকর সেই ‘সাদাপাথর’ এলাকাটি এখন প্রায় বিবর্ণ, যেন এক বিরাণভূমী। নজিরবিহীন পাথর লুটের ঘটনায় প্রশাসনের দায় দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল।

পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এক বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে সাদা পাথরে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দুই শত কোটি টাকার অধিক।শত শত কোটি টাকার পাথর লুটপাট শেষে যেন ঘুম ভেঙেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সিলেট জেলা প্রশাসনের। বুধবার সাদা পাথরে অভিযান চালিয়েছে দুদক সিলেট কার্যালয়। অপরদিকে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এছাড়াও সাদা পাথর নিয়ে গতকাল পর্যালোচনা সভা করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদক জানায়, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি টিম সাদা পাথর স্পটে গিয়ে তদন্ত করে। সাদা পাথরে গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসেনর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত দল। প্রাথমিক তদন্তে লুটপাটের ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানায় দুদক।

তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাত বলেন, যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবদেন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এ ধরনের লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি। পর্যটন খাতের ক্ষতির সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েকশ’ কোটি টাকার রাষ্ট্রের সম্পদ পাথর আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই পাথরগুলো লুট করা হয়েছে। আমরা এখানে আসার সময় সড়কের দু’পাশে অনেক পাথর দেখে এসেছি, তাছাড়া যারা পাথর লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এতদিন পরে কেন দুদক পরিদর্শনে এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কার্যালয় থেকে এটি অনেক দূরে। স্থানীয় প্রশাসনের অনেক কাছে, তাই তারা আরো সচেতন থাকার কথা ছিল। এছাড়া খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ যেসব বিভাগ এর সাথে যুক্ত, তাদের লুট ঠেকাতে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশপাশে অনেক স্টোন ক্রাশার মিল রয়েছে। এগুলোতে এখান থেকে পাথর নিয়ে ভাঙা হয়। এ ছাড়া এর সাথে এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন, আরো অনেক উচ্চস্থরের ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা জড়িত বলে শুনতে পাচ্ছি। আমরা এসব তথ্য নিয়ে কাজ করব।

পরিদর্শনের প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান রাফি মো. নাজমুস সাদাত। তিনি বলেন, যারা এই লুটের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে সাদাপাথরের পাথর লুট-পাটের ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। সাদা পাথরের পাথর ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবদেন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি সাদা পাথর লুটপাটের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে দুদক অভিযানে নামে এবং সিলেট জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে পাথর লুট শুরু হলেও এতদিন নিস্ক্রিয় ছিল দুদক ও জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ এক বছর ধরে সাদা পাথর লুটপাট চলেছে। এখন ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। পাথর লুট শেষে দুদক অভিযানে নামায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদকের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা অভিযোগ করে আসছেন, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই লুটপাট অব্যাহত রয়েছে, যা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, পর্যটন শিল্পকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এই লুটপাটে সিলেট বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম ঘুরেফিরে গণমাধ্যমে এসেছে। লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার পদও স্থগিত করা হয়েছে। তবুও পাথর লুট বন্ধ হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, লুটেরাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অসৎ’ লোকজন জড়িত। অনেক আপত্তি-অভিযোগ, সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো ফল হয়নি।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খবর প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
সাদাপাথর নিয়ে হৈ চৈ এর মধ্যে লুট হওয়া সব পাথর উদ্ধার করে এ এলাকাকে আগের চেহারায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এটিসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে –

>> চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

>> সাদাপাথর এলাকার পাশাপাশি জাফলং ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

>> গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে চেকপোস্টে যৌথ বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

>> অবৈধ পাথর ভাঙা মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করাসহ বন্ধ করার জন্য অভিযান চলমান থাকবে।

>> পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। পাথর লুট হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ফলে পর্যটকদের আনাগোনাও দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয়রা।

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “এর আগে আসি নাই। তবে মোবাইলে দেখে সৌন্দর্য বিমোহিত হয়ে আসছিলাম সাদাপাথরে। এসে খুবই হাতাশ। সব জায়গায় দেখতেছি পাথর নাই।

“জাফলংয়ে দেখেছি, আমাদের সামনে পাথর নিয়ে যাচ্ছে, পুলিশ কিছু বলতেছে না। অথচ পুলিশ পর্যটকদের নামতে বাধা দিচ্ছে। সাদাপাথরের প্রায় ৮০ ভাগ পাথর নিয়ে গেছে, যে ২০ ভাগ আছে সেটুকু যেন থাকে।”

লুটপাট বন্ধে বাধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে সাদাপাথর ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মো. আলমগীর আলমের অভিযোগ, “প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে যদি লুটপাট চলতে থাকে সাদাপাথরের এক হাজারের বেশি ব্যবসায়ী ও ১৫০ জন ফটোগ্রাফার বেকার হয়ে যাবে। সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেলে তো আর পর্যটক আসবে না।”

ঘোড়া দিয়ে পর্যটক বহনকারী হাসান মিয়া বলেন, “আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি পাথর লুটপাট বন্ধ করতে। কিন্তু তারা মানে না। আমি এখানে প্রতিদিন ঘোড়া চালিয়ে ৫০০ টাকা পাই, এই টাকা দিয়ে আমার পরিবার চলে। লুটপাট করে পাথর নিয়ে গেছে, তাই মানুষ আসে না। আমাদের ঘোড়াও চলে না, ইনকাম নেই। আমাদের পরিবার অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।”

ভোলাগঞ্জ ঘাট থেকে পর্যটকদের সাদাপাথর এলাকায় নিয়ে যাওয়া নৌকার মাঝিরা বলছেন, বর্তমানে যাতায়াত কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ছয় থেকে সাতবার যাতায়াত করা যেত, এখন সেখানে দু-তিনবার হয়। লুটপাট করে শেষ করে দেওয়ার কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে চান না।

একজন মাঝি বলেন, নৌকা চালক সমিতিতে ১৬০টি নৌকা রয়েছে। আগে শুক্রবার হলে ৮০টি থেকে ১০০টি নৌকা ট্রিপ পেত। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫টি নৌকা সিরিয়ালে ট্রিপ মারছে, তাও কোনো নৌকা দুটি বা তিনটি ট্রিপের বেশি মারতে পারে না। আমরা প্রতি ট্রিপে আসা-যাওয়ার জন্য ৮০০ টাকা করে নেই।”

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, “সাদাপাথরেতো পাথর লুট হয়ে গেছে। এই সিজনের যে পাথর আছে সবই তোলা নেওয়া হয়েছে। এখনো যে এটা থেমে যাবে, সেটা আশা করা যায় না।

“সিলেটের অন্যান্য এলাকাতেও পাথর উত্তোলনের প্রস্তুতি চলছে। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে এবং সেগুলোও বিরান করার প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থাতে যদি প্রশাসন একেবারে দায়সারা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে সিলেটের মানুষের উচিত হচ্ছে সবাই রাজপথে বের হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করা।”
বুধবার দুপুরের দিকে ভোলাগঞ্জ এলাকার নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মত নেই পর্যটকদের চাপ। নৌকাঘাটের ব্যবসায়ীরা বসে আছেন।
নৌকা নিয়ে সাদাপাথরের দিকে যেতে দেখা যায়, ধলাই নদীতে পর্যটকবাহী নৌকার চাপ একেবারে কম। সাদাপাথর এলাকায় গিয়ে নৌকা থেকে নামতেই চোখে পড়ে ধু ধু বালুচর। সেখানে থাকা পাথর লুটপাটের কারণে নিচে বালু বের হয়েছে। চারপাশে বালু আর বালু।

বালুচরে হেঁটে মূল স্পটে গিয়ে দেখা মেলে কিছু পাথরের। তবে মূল স্পটের কোথাও কোথাও জেগে উঠেছে বালুচর। পর্যটকদের বসার জন্য রাখা ছাতাবিহীন চেয়ার পড়ে আছে বালুচরে। মূল স্পটে অন্যদিনের তুলনায় পর্যটকদের আনাগোনা কম।

পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলের ধারাতে পর্যটকদের কেউ সাঁতার, কেউবা কোমর পানিতে বসে ভিজছেন। আর চারপাশে স্বচ্ছ জল ছিটাচ্ছেন। এভাবেই নদী, পাহাড় আর টিলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ কেউ আবার হাতে ছোট ছোট কয়েকটি পাথর নিয়ে জলে বসে সময় পার করছেন।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের বাম দিকে থেকে বাংকার পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত করে তোলা হয়েছে পাথর। এসব গর্তের গভীরতা কোথাও তিন ফুট, কোথাওবা পাঁচ ফুট হবে। গর্ত করে পাথর তোলার কারণে বালু ভেসে ওঠেছে। এর আগে মে মাসে এই পাশে প্রচুর পরিমাণে পাথর দেখা মিলেছিল। পাথর জমতে-জমতে স্তর পড়েছিল। বর্তমানে বালু আর বালু।

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ধরা’ এর আজীবন সদস্য ও সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, তীব্র স্রোতে ধলাই নদী হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে এসব পাথর আসে। পাঁচ একরের বেশি জায়গাজুড়ে এগুলো জমা হয়, যা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পটপরিবর্তনের পর ওইদিন রাত থেকেই সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর ও বালুসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের হিড়িক পড়ে।

“তখন আমরা সাদাপাথর পরিদর্শন করে লুট বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সাদাপাথর লুট পত্রিকায় এসেছে। কিন্তু জাফলং, লালাখাল, লোভাছড়া, বিছানাকান্দিসহ আরও অনেক এলাকার বালু ও পাথর লুটপাট হয়েছে, সেগুলো সংবাদপত্রে তেমন আসেনি।”

পাথর কোয়ারি নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক জহিরুল আরও বলেন, “সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক কিছু বিষয় ও মানুষের হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত অনেক কিছু জড়িত। অবিলম্বে এ এলাকাকে সত্যিকার অর্থে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’ ঘোষণা করে পুরো এলাকায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নদীকে নদীর মত থাকতে দিতে হবে। তাহলে হয়তোবা আগের অবস্থায় ফিরতেও পারে।”

ভোলাগঞ্জ ও সাদাপাথর এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, লুটপাটে বিএনপি, যুবদল ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাদাপাথর ও রেলওয়ে বাংকার এলাকার পশ্চিমপাড়ের পাথর লুটের নেতৃত্বে রয়েছেন সদ্য পদ স্থগিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন। আর পূর্বপাড়ের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেলসহ আরও কয়েকজন।
এছাড়া সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলফু মিয়ার বিরুদ্ধে বালু-পাথর লুটের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
তাদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষার দাবিতে মঙ্গলবার ধলাই পাড়ের মানুষ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ধলাই সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই ঘণ্টা ধরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলে।

লুটপাটের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদের মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল বলেন, “আমি বালু-পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। আমি ডিজেল-মোবিলের ব্যবসা করি। বালু-পাথর লুটপাটের সঙ্গে আমি জড়িত না।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট) পর্যন্ত অভিযানে অভিযানে প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের বড় অংশ ধলাই নদীতে ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
চেকপোস্টে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এ সময় প্রায় ৭০টি গাড়িতে সাদাপাথর এলাকার পাথর শনাক্ত হলে সেগুলো পুনরায় প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাপক লুটপাটের পর জেলা প্রশাসন গত ১৩ আগস্ট একটি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানায়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহকে প্রধান করে গঠিত কমিটি পাথর লুটের ঘটনা অনুসন্ধান করে। ১৭ আগস্টের মধ্যে এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পট সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,সাদা পাথর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে যে লুটপাট হয়েছে, তা রোধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই সময়ের মধ্যে যেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে এখানে আবার প্রতিস্থাপন করতে পারব। এটা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয় আমরা সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া এখানের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেই ক্ষতি যেন আর কেউ করতে না পারে এবং যারা এই কাজে জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিব এবং আইন যেভাবে আমাদের পারমিট করে সেভাবে আমরা তাদেরকে ধ্বংস করাসহ অন্যন্য যে প্রক্রিয়া আছে সেগুলো আমরা করব।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গতকাল জেলা পর্যায়ের একটি সভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাস্তবায়ন গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে এখানে প্রতিস্থাপন করতে পারব। অপূরণীয় ক্ষতি যাতে আর কেউ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি দায়িত্বে থাকা সবাই দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষতিসাধন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, ৫ আগস্টের পর যে লুটপাট হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধে কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। এতদিন বিষয়টি একটি সীমিত মাত্রায় ছিল, কিন্তু এবার তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাদা পাথরে আসুন। এখানকার পরিবেশ এখনও পর্যটনবান্ধব।’