মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব শুধুমাত্র কর্তৃত্ব ফলানোর নয়, বরং এটি জনগণের প্রতি সেবার একটি সুযোগ। তিনি বলেন, “আমরা মনিবের আসনে নই, আমরা সেবকের দায়িত্বে। আমাদের বেতন-ভাতা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে—এটা মনে রাখা উচিত।”
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সিলেট জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত “সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা প্রশাসন ও জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু নাসের খান।
রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, “বাংলাদেশে একটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে, তবে এটি সাময়িক। উন্নয়নের ছন্দপতন হলেও আমরা যদি দায়িত্বশীল হই, তবে সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
সিলেট অঞ্চলের অবকাঠামোগত বঞ্চনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের বাইরে থেকেও সিলেটের বঞ্চনার চিত্র আমার চোখে পড়েছে। ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে আমি কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, মহাসড়ক উন্নয়ন, রেলের নতুন বগি সংযোজন এবং বিমানের ভাড়া নির্ধারণসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে।”
প্রশাসনে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার সমালোচনা করে মুশফিকুল ফজল বলেন, “পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্মানের পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। সমাজে ‘উপরতলার মানুষ’ বনাম ‘নিচুতলার মানুষ’—এই বিভাজন ভাঙতে হবে। আমরা যদি ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে কাজ না করি, তাহলে উন্নয়ন বা পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বর্তমান দায়িত্বের আওতায় কেউ আমাকে নির্দিষ্টভাবে কিছু করতে বলেনি। কিন্তু আমি নিজ উদ্যোগে মেক্সিকো ও ল্যাটিন আমেরিকায় বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছি। সেখানে এক বিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এই রকম দৃষ্টান্ত সবাইকে স্থাপন করতে হবে।”
মূল প্রবন্ধে ড. সৈয়দ মাসুম জানান, সিলেট বিভাগে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ, যার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় এই হার ৩৪.২৪ শতাংশ। বন্যার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। তিনি বলেন, “গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতির প্রভাব এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। সরকারি স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১:১৮৫, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, “সিলেট একসময় শিক্ষার রাজধানী ছিল। কিন্তু এখন বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ও বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. জাবের, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আব্দুর রহমান তরফদার, জাতীয় বেতন কমিশনের সচিব ফরহাদ সিদ্দিকী এবং সিলেট বিভাগের কমিশনার খান মো. রেজাউন নবী প্রমুখ।

প্রতিদিনের সিলেট ডেস্ক 



















