সিলেটে দেড়শ বছরের পুরনো ‘আলী আমজদের ঘড়িঘরের’ পাশে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’, ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’, ‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের’ পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সিলেট জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
এ সময় পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষে শাহ মোস্তফা জামান, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা সিলেটের সদস্যসচিব আব্দুল করিম কিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক শামসুল বাসিত শেরো এবং সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের বেলায়েত হোসেন লিমন উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, শহরের প্রাচীনতম ও প্রতীক খ্যাত স্থাপত্য ‘আলী আমজদের ঘড়িঘর’ কেবল একটি স্থাপনা নয়; এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতীক। ১৮৭৪ সালে পৃথিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নিজের ছেলের নামে এটি নির্মাণ করেন।
শতবর্ষ ধরে স্থাপনাটি সিলেটকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করেছে। সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য কেবল একটি ‘ঘড়িঘর’ নয় বরং সিলেটের অস্তিত্ব, ইতিহাস ও নাগরিক ঐতিহ্যের দৃশ্যমান প্রতীক।
তবে গভীর দুঃখ ও উদ্বেগের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে যে, এই ঐতিহ্যবাহী ‘ঘড়িঘরের’ সীমানার ভেতর নতুন একটি স্থাপনার (জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ‘জুলাই স্তম্ভ’) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সিলেটের মুক্তিকামী সংগ্রামের ইতিহাসে জুলাই আন্দোলনের গুরুত্ব অস্বীকারযোগ্য নয়। কিন্তু ঐতিহাসিক ‘আলী আমজদের ঘড়িঘর’ ঘেঁষে নতুন স্থাপনা চাপিয়ে দেওয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও স্থাপত্যরক্ষার মৌলিক নীতির পরিপন্থি।
এর মধ্যে শহরের রিকাবিবাজারে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের পাশে একটি ‘জুলাই স্তম্ভ’ নির্মাণাধীন রয়েছে। ফলে একই উদ্দেশে আরেকটি কাঠামো তৈরি করা অপ্রয়োজনীয়। এ ছাড়া ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশে নতুন স্থাপনা নির্মাণ স্থাপত্যের নান্দনিকতা ও স্বকীয়তাকে বিকৃত করবে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি আমাদের দায়িত্বহীনতা ও ঐতিহ্য অবমাননার নজির হয়ে থাকবে।
স্মাকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, সিলেটের নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী ও ঐতিহ্য সংরক্ষণকামী মানুষ একবাক্যে বিশ্বাস করে যে, জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণে শহরে বিকল্প অনেক স্থান রয়েছে। সেখানে ফলক, স্মারক কিংবা স্তম্ভ নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু তা কখনোই সিলেটের প্রতীকখ্যাত ঐতিহ্যের ক্ষতি করে নয়।
ঐতিহাসিক ‘আলী আমজদের ঘড়িঘর’ এর ঐতিহ্য, নান্দনিকতা ও আইনি মর্যাদা রক্ষায় চলমান নতুন স্থাপনার কাজ দ্রুত বন্ধের পাশাপাশি এর মধ্যে নির্মিত কাঠামো অপসারণে প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা আন্দোলনকারীদের।
‘আলী আমজদের ঘড়িঘর’ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।