মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের সর্ববৃহৎ জলমহাল ‘হাওরখাল’ বিলের মাছ লুটের ঘটনায় মামলা হলেও এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। গত বুধবার রাতে ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বড়লেখা থানায় মামলা করেন ইউনিয়ন সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তা বীরবল কান্তি চৌধুরী। এদিকে মাছ আহরণ নিষেধ সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে মাছ আহরণের ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়লেখায় ইউএনওর সেমিনার কক্ষে ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। সভায় হাওরখাল জলমহালের খাস কালেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও গণঅধিকারের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে ওই কমিটিতে মাছ লুটে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের প্রায় ২ হাজার একরের সর্ববৃহৎ গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্দ) জলমহালটি ১৪৩১ বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পূর্ববর্তী ইজারাদার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি উনড়বয়ন প্রকল্পে তিন বছরের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকায় লিজ নিয়ে ফিশিং সম্পন্ন করে। পরবর্তী তিন বছরের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকায় আরেকটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি জলমহালটির ইজারা পায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে প্রভাবশালী মহল সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে দিয়ে ১৪৩২-৩৪ বাংলা সনের লিজের ওপরহাইকোর্টে রিট পিটিশন (১৫৬৬৪/২০২৪) দায়ের করায়। এই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতেহাইকোর্ট লিজের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে জলমহালটি খাসকালেকশনে চলে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, খাস কালেকশনের দায়িত্বে থাকা হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি প্রকাশ্যে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছেন। তারা তহশিলদারকে নামমাত্র রাজস্ব প্রদান করছেন। গত ১৭ দিনে মাছ লুটকারীরা অন্তত ২ কোটি টাকার মাছ লুট করলেও সরকারি কোষাগারে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা জমা করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মাছ লুটের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার কয়েকশ মানুষ হাওরখাল বিলে জড়ো হন এবং ৬টি মাছ বোঝাই নৌকা উল্টে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ইউএনও গালিব চৌধুরী জানান, হাকালুকি হাওড়ের হাওরখাল বিলের মাছ লুটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। খাস কালেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক বড়লেখায় এসে রাজনৈতিক নেতবৃন্দের সঙ্গে জরুরি সভা করেছেন। এরপর জলমহলের মাছ তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ নামের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বর্তমানে মাছ ধরা বন্ধ আছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 



















