সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দ করা প্রায় ২২ লাখ ঘনফুট বালুর সরকারি নিলাম ‘শায়েস্তা খাঁর দর’-এ সম্পন্ন হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। বাজারদর যেখানে প্রতি ঘনফুট ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, সেখানে মাত্র ২ টাকা দরে বালু বিক্রি হওয়ায় সরকারের প্রায় ১৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি (১৯ নভেম্বর) অনলাইন নিলাম ডাকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৯ জন ব্যবসায়ীর। তবে নিলাম ডাকের সময় উপস্থিত ছিলেন কেবল একজন—সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কয়েস আহমদ। অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেটের ‘ম্যানেজমেন্টে’ অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সরিয়ে রেখে এককভাবেই নিলাম সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয় দফা নিলামের নথি অনুযায়ী, পূর্বে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ৯ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর রহস্যজনকভাবে দর কমতে কমতে নেমে আসে ৭ টাকা ৬০ পয়সা, পরে ২ টাকা ৬৮ পয়সা এবং শেষ পর্যন্ত ২ টাকায় গিয়ে নিলাম চূড়ান্ত হয়।
এভাবে বালুর প্রকৃত বাজারমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিক কম দর নির্ধারণ করায় সরকারি কোষাগারে গেছে মাত্র ৩৮ লাখ টাকা, যা বাজারমূল্যের তুলনায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা কম।
নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্নে যুক্ত কর্মকর্তা (নাজির) ফাইজুল ইসলাম বলেন, “প্রকাশ্য নিলাম ডাক হয়েছে। সব তথ্য দপ্তরে এসে জানা যাবে। ফোনে কিছু বলা সম্ভব নয়।” তবে নিলামসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র তার বিরুদ্ধেই দর কমিয়ে আনার অভিযোগ তুলেছে।
নিলামপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী কয়েস আহমদের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। এদিকে জানা গেছে, নিলামে পাওয়া বালু অপসারণের জন্য তিনি ৬ মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ—এই সময়সীমা মঞ্জুর হলে ‘বালু অপসারণের’ নামে সমপরিমাণ আরও বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বালু লুটের সুযোগ তৈরি হবে।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করেছে। “বালুর ফুট ২ টাকা! আহারে সিন্ডিকেট—১৩ কোটি টাকার বালু মাত্র ৩৮ লাখে!”—এরকম মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি শুধু অনিয়ম নয়, সচেতনভাবে সরকারি রাজস্ব লুটের একটি বড় উদাহরণ।

নিজস্ব প্রতিবেদক 



















