সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মো: কবির হোসেন ধলা মিয়ার উপর হামলার ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজে বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার ০৯। এজাহার নামীয় সকল আসামী বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত।
প্রসঙ্গত এ বছরের এপ্রিলে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে দিন-দুপূরে লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেন ধলা মিয়ার উপর কতিপয় যুবক এক ন্যাক্কারজনক হামলা করে। বিশ্বনাথের একজন প্রবীণ জনপ্রতিনিধির উপর এমন হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।
এ ঘটনার পর আদালতে ও বিশ্বনাথ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মামলার তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে সম্প্রতি সোসিয়াল মিডিয়ায় হামলার একটি ভিডিও প্রকাশিত হলে, সেই ভিডিওর সূত্র ধরে অবশেষে মামলা দায়ের হল।
মামলার আসামীরা হলেন বিশ্বনাথ পৌরসভার শাহজিরগাঁও গ্রামের মখলিছ আলীর ছেলে রায়হান আহমদ(৩০), জানাইয়া গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে সুজেল মিয়া(২৮), রামধানা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুর রহমান(৩৫), শিমুলতলা গ্রামের আরজুমন্দ আলীর ছেলে আবু সুফিয়ান(৪৭) রামধানা গ্রামের ছামছু মিয়া লালার ছেলে সোহাগ মিয়া(২৮), জানাইয়া গ্রামের তুতু মিয়ার ছেলে রুপা মিয়া,(২৫) রাজনগর গ্রামের আলকাছ আলীর ছেলে আমজাদ আলী(৩০), টুকেরকান্দি গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে কামরান আহমদ(২৭) টেংরা গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার ছেলে মঈনুল ইসলাম,(৩৭) বড় খুরমা (উত্তর) গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আজাদ মিয়া(,৩০) রাজনগর গ্রামের আরশ আলীর ছেলে শামীম আহমদ(২৮), একই গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে সেবুল মিয়া(৩০), বড় খুরমা গ্রামের মৃত রাশীদ আলীর ছেলে আব্দুল মছব্বির(৩৫), রাজনগর গ্রামের মনাফ মিয়ার ছেলে সাকিল আহমদ(৩২)। এছাড়া, মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে ১২/১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিশ্বনাথ উপজেলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া গত ২৮ এপ্রিল বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় অংশ নেন। সভা শেষে দুপুর ২টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে ফেরার পথে উপজেলা পরিষদের সামনের গেটের অদূরে (মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে) পৌঁছামাত্র জোরপূর্বক তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে বেধড়ক মারধর করেন উল্লেখিত আসামীরা। অভিযুক্ত রায়হান আহমদ চেয়ারম্যানের হাতে থাকা হাওয়াই ৯এস মডেলের মোবাইল ফোন (সিম নাম্বার ০১৭৭৯৫৫৭২৬৬) ছিনিয়ে নিয়ে যায়। অভিযুক্ত সুজেল মিয়া চেয়ারম্যানের প্যান্টের পকেটে থাকা ১ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড এবং অভিযুক্ত আব্দুর রহমান নগদ প্রায় ৫৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তারা ঘটনার ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে ফেক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। ঘটনার ৫ মাস পর হামলার ভিডিও ফেইসবুকে প্রকাশের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জানাগেছে, এজাহার নামীয় এক আসামী বিশ্বনাথ সরকারী কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় সে অনেকটা ক্ষুব্দ হয়ে স্থানীয় নেতাদের ফাঁসাতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি প্রচার করে। বেরসিক এই ছাত্রনেতা নেতাদের ফাঁসাতে গিয়ে এখন নিজেই ফেঁসে গেছে। কি জানি হয়তো এজাহারভূক্ত কেউ যদি পুলিশের জালে আটকা পড়ে, তখন হয়তো বিশ্বনাথের জনপ্রিয় এই চেয়ারম্যানের উপর হামলার নেপথ্যের নায়ক স্থানীয় রাজনীতির অনেক রাঘব-বোয়ালদের নাম চলে আসতে পারে।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেন বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আসামীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’
মামলার বাদী লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেন ধলা মিয়া মামলা দায়ের প্রসঙ্গে বলেন, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এজাহারভুক্ত সকল আসামী গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে এই ঘটনার সাথে জড়িত সকল গডফাদার এর নাম পাওয়া যাবে।