সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বালুবাহী ট্রাক ও পিকআপের দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন এক গর্ভবতী নারী। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় নবজাতকটি পথেই মারা যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার লক্ষীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী রাবারড্যাম এলাকায়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, চকবাজার গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রৌশনারা বেগম হঠাৎ প্রসবব্যথা অনুভব করলে বিকেল ৪টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু খাসিয়ামারা নদী থেকে বালু পরিবহনকারী ট্রাক, পিকআপ ও ঠেলাগাড়ির কারণে সৃষ্ট যানজটে প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্থায় আটকে পড়েন তারা। এ সময় যানজটের মধ্যে রাস্তায়ই সন্তান প্রসব করেন রৌশনারা। তবে নবজাতকটির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলেও যানজটের কারণে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
শোকাহত বাবা শফিকুল ইসলাম ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, যদি সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারতাম, আমার সন্তান বেঁচে যেত। এই মৃত্যুর দায় স্থানীয় প্রশাসন ও বালু ইজারাদারদের এড়ানোর সুযোগ নেই।
তার শ্যালক ইমরান হোসেন জানান, দুই ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকার পরই রাস্তার পাশেই সন্তান জন্ম নেয়। চিকিৎসা পেলে শিশুটি হয়তো বাঁচতো।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহীন খান বলেন, শিশুটি জন্মের পরপরই যদি শ্বাসনালী পরিষ্কার করে অক্সিজেন দেওয়া যেত, তাহলে সে হয়তো বেঁচে যেত।
বালু উত্তোলনের ইজারাদার ও সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, যে কেউই অভিযোগ করতে পারে। তবে এর আসল ঘটনা তদন্ত করে জানা যাবে।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, আমরা শুনেছি যানজটের কারণে রাস্তায়ই সন্তান প্রসব করেন এক গর্ববতী নারী। পরবর্তীতে ওই নবজাতক সন্তানটি মারা গেছে। এই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ জানান, বালুবাহী যানবাহনের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো বিঘ্ন হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।