, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেটে বুকের উপর পায়ের চাপ দিয়ে শিশুকে পেটালেন করলেন মাদ্রাসা শিক্ষক বিশ্বনাথে চেয়ারম্যানের উপর হামলার ঘটনায় বিএনপির ২৯ জনকে আসামি করে মামলা আফগানিস্তানের বিদায়, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা বিয়ানীবাজারে ১২ বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ তালেবানের আমন্ত্রণে আফগানিস্তানে মামুনুল হকসহ সাত আলেম সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের এমডি আব্দুল্লাহ শাবিপ্রবিতে স্টুডেন্ট এইড সাস্ট এর ‘ফ্রি স্টুডেন্ট হেলথ ক্যাম্প’ উদ্বোধন বিশ্বনাথে ইউপি চেয়ারম্যান ধলা মিয়া উপর হামলার ঘটনায় মামলা লালাবাজারে পুলিশের অভিযানে বিদেশী মদসহ স্বামী-স্ত্রী আটক জগন্নাথপুরে সিংহ ঘুরে বেড়ানোর ঘটনাটি গুজব

সাদাপাথরকাণ্ডে দুদকের তালিকা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়

দেশজুড়ে আলোচিত সাদাপাথর কাণ্ডে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছে।প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম পাথর লুটপাটের ঘটনায় আসায় সিলেটে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। রাজনৈতিক অঙ্গণে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে পদস্থ নেতাদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ উঠে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ জন ব্যক্তি ও দুইটি প্রতিষ্ঠান এই ঘটনায় জড়িত।

তালিকায় সরকারি দপ্তর, চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। ৪২ জনকে সরাসরি চিহ্নিত করা হয়েছে।

তালিকায় সর্বাধিক ২০ জন বিএনপি নেতা, ৭ জন আওয়ামী লীগ নেতা এবং জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি থেকে দুজন করে নেতার নাম রয়েছে।

তবে তালিকায় নাম আসার পর বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা দায় অস্বীকার করেছেন।

তারা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি মিডিয়া ট্রায়াল হিসেবে দেখছেন এবং গণমাধ্যমকে দায় চাপানোর চেষ্টা বলেও উল্লেখ করেছেন।

দুদক সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত জানান, ৫২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কমিশন নির্দেশ দিলে পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই তালিকা সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও কিছু দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও এটি স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা উচিত।

দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন জানান, ‘প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাথর চুরির সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে, যা কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।’

এদিকে শুক্রবার সকালে সাদাপাথর পরিদর্শন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই সাদাপাথরে ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় বিজিবি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, `এখানে শুধু লুট হয়নি, হয়েছে হরিলুট। এ ঘটনায় কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। আইন সবার জন্য সমান, অপরাধীর পরিচয় দেখার সময় এখন নয়।’

তিনি সাদাপাথর এলাকায় পৌঁছে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় লুটপাটের চিহ্ন চোখে পড়লে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সাদাপাথরের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রে এমন ভয়াবহ লুটপাট দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি সাদাপাথর পর্যটন স্পটকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি অবৈধ উত্তোলন রোধে স্থায়ী নজরদারি জোরদারের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যে দলেরই প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা প্রশাসনের যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ সময় খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম,বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলমসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে আসেন তারা।

জনপ্রিয়

সিলেটে বুকের উপর পায়ের চাপ দিয়ে শিশুকে পেটালেন করলেন মাদ্রাসা শিক্ষক

সাদাপাথরকাণ্ডে দুদকের তালিকা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়

প্রকাশের সময় : ০৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

দেশজুড়ে আলোচিত সাদাপাথর কাণ্ডে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছে।প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম পাথর লুটপাটের ঘটনায় আসায় সিলেটে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। রাজনৈতিক অঙ্গণে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে পদস্থ নেতাদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ উঠে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ জন ব্যক্তি ও দুইটি প্রতিষ্ঠান এই ঘটনায় জড়িত।

তালিকায় সরকারি দপ্তর, চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। ৪২ জনকে সরাসরি চিহ্নিত করা হয়েছে।

তালিকায় সর্বাধিক ২০ জন বিএনপি নেতা, ৭ জন আওয়ামী লীগ নেতা এবং জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি থেকে দুজন করে নেতার নাম রয়েছে।

তবে তালিকায় নাম আসার পর বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা দায় অস্বীকার করেছেন।

তারা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি মিডিয়া ট্রায়াল হিসেবে দেখছেন এবং গণমাধ্যমকে দায় চাপানোর চেষ্টা বলেও উল্লেখ করেছেন।

দুদক সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত জানান, ৫২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কমিশন নির্দেশ দিলে পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই তালিকা সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও কিছু দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও এটি স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা উচিত।

দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন জানান, ‘প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাথর চুরির সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে, যা কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।’

এদিকে শুক্রবার সকালে সাদাপাথর পরিদর্শন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই সাদাপাথরে ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় বিজিবি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, `এখানে শুধু লুট হয়নি, হয়েছে হরিলুট। এ ঘটনায় কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। আইন সবার জন্য সমান, অপরাধীর পরিচয় দেখার সময় এখন নয়।’

তিনি সাদাপাথর এলাকায় পৌঁছে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় লুটপাটের চিহ্ন চোখে পড়লে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সাদাপাথরের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রে এমন ভয়াবহ লুটপাট দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি সাদাপাথর পর্যটন স্পটকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি অবৈধ উত্তোলন রোধে স্থায়ী নজরদারি জোরদারের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যে দলেরই প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা প্রশাসনের যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ সময় খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম,বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলমসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে আসেন তারা।