, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আমি নির্বাচিত হলে সাংবাদিক সমাজসহ সকলের কল্যাণে কাজ করবো: ইলিয়াসপত্নী লুনা বিশ্বনাথে ‘ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ অভিযানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নেতা গ্রেফতার দিরাইয়ে ‘ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩ দিরাইয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে ব্র্যাকের সমন্বয় সভা ইন শা আল্লাহ ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবো: তারেক রহমান সিলেটে পাঁচ পীরের মাজারে পাওয়া অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত বিজয় দিবসে সিলেট ও হবিগঞ্জে দুর্ঘটনা ও অস্বাভাবিক মৃত্যু: একদিনে ঝরল অন্তত পাঁচ প্রাণ সিলেটে বিজয় দিবসের দিনে ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগের ৫ জন গ্রেপ্তার সিলেট বিভাগের সীমান্তজুড়ে বিজিবির অভিযান, সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি টাকার চোরাচালানি জব্দ সিলেটে জুয়া ও অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান: ১১ জন আটক

দুর্নীতিবাজদের যম সারোয়ার আলম

সিলেটে পাথর লুট ও পরিবেশ দূষণের কারণে চলমান অনিয়ম এবং ন্যায়বিচারহীন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মো. সারোয়ার আলমের পদায়ন স্থানীয় জনমনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং তিন শতাধিক ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার কারণে তিনি দেশজুড়ে আলোচিত ছিলেন।

বুধবার (২০ আগস্ট) রাত ৮টায় সিলেট এসে পৌঁছেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি সিলেটে এসে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সেখান থেকেই শুরু হবে জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলমের ‘সিলেট মিশন’।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সোমবার (১৮ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করে মো. সারোয়ার আলমকে সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি এর আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। পদায়নের আগে তিনি কিছু সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত উপসচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

দুর্নীতিবাজদের যম হিসাবে পরিচিত র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান, ভুয়া করোনা টেস্টের বিরুদ্ধে অভিযান এবং মাদক–অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত হন। সর্বশেষ তিনি ২০২০ সালে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেড় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

সিলেটের পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন পুনরুদ্ধারে তার ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়রা আশাবাদী।

ধরিত্রী রক্ষায় সচেতন সমাজের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘মো. সারোয়ার আলমের ন্যায্য ও সুবিচারমূলক প্রশাসন সিলেটের হারানো পরিবেশ ও পর্যটন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সারোয়ার আহমেদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে সীমিত করতে তিনি পূর্বের কর্মকর্তাদের চেয়ে আলাদা ভূমিকা রাখবেন। তার পদায়নে সাধারণ মানুষ আইনী সেবা ও ন্যায়বিচার পাবে।’

ধলাই সেতু রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘সিলেটের মফস্বল এলাকায় সাধারণ মানুষ আইনের সঠিক সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। সারোয়ার আলমের আগমনে তাদের আশা নতুন উদ্দীপনা পাবে এবং দুর্বৃত্তদের দৌরাত্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, মো. সারোয়ার আলম বৃহস্পতিবার সিলেটে পৌঁছবেন। তার আগমনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অসাধু প্রশাসনিক চক্র পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছে। ইতিমধ্যেই তিন দিনের সময় বাড়ানোর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার।

সিলেটের পরিবেশ ও পর্যটন পুনরুদ্ধারের জন্য স্থানীয় সমাজ ও প্রশাসন তার প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা রাখছে। সঠিক সময়ে ন্যায়সঙ্গত প্রশাসন পরিচালনা করতে পারলে সিলেট আবারও পরিবেশবান্ধব ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

মো. সারোয়ার আলম এমন এক সময়ে সিলেটে আসছেন যখন সারা দেশের দৃষ্টি সিলেটের দিকে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন এলাকায় পাথর-বালু লুট ও পাহাড় ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও স্থানীয় প্রশাসন অসাধু চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এবং প্রতিবাদীদের দমনে ভূমিকা রেখেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এসব অনিয়ম জাতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিশেষ করে সাদা পাথর লুট কাণ্ড দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। এতে পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে জনমত আরও শক্তিশালী হয় এবং সরকারও নড়েচড়ে বসে।

এরই ধারাবাহিকতায় ব্যর্থ জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মোরাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে সিলেটে দায়িত্ব নিতে আসছেন মো. সারোয়ার আলম। স্থানীয় মানুষ তার পদায়নকে ‘সিলেটের জন্য নতুন আশার প্রতীক’ হিসেবে দেখছে।

জনপ্রিয়

আমি নির্বাচিত হলে সাংবাদিক সমাজসহ সকলের কল্যাণে কাজ করবো: ইলিয়াসপত্নী লুনা

দুর্নীতিবাজদের যম সারোয়ার আলম

প্রকাশের সময় : ০৮:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

সিলেটে পাথর লুট ও পরিবেশ দূষণের কারণে চলমান অনিয়ম এবং ন্যায়বিচারহীন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মো. সারোয়ার আলমের পদায়ন স্থানীয় জনমনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং তিন শতাধিক ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার কারণে তিনি দেশজুড়ে আলোচিত ছিলেন।

বুধবার (২০ আগস্ট) রাত ৮টায় সিলেট এসে পৌঁছেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি সিলেটে এসে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সেখান থেকেই শুরু হবে জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলমের ‘সিলেট মিশন’।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সোমবার (১৮ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করে মো. সারোয়ার আলমকে সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি এর আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। পদায়নের আগে তিনি কিছু সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত উপসচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

দুর্নীতিবাজদের যম হিসাবে পরিচিত র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান, ভুয়া করোনা টেস্টের বিরুদ্ধে অভিযান এবং মাদক–অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত হন। সর্বশেষ তিনি ২০২০ সালে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেড় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

সিলেটের পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন পুনরুদ্ধারে তার ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়রা আশাবাদী।

ধরিত্রী রক্ষায় সচেতন সমাজের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘মো. সারোয়ার আলমের ন্যায্য ও সুবিচারমূলক প্রশাসন সিলেটের হারানো পরিবেশ ও পর্যটন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সারোয়ার আহমেদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে সীমিত করতে তিনি পূর্বের কর্মকর্তাদের চেয়ে আলাদা ভূমিকা রাখবেন। তার পদায়নে সাধারণ মানুষ আইনী সেবা ও ন্যায়বিচার পাবে।’

ধলাই সেতু রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘সিলেটের মফস্বল এলাকায় সাধারণ মানুষ আইনের সঠিক সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। সারোয়ার আলমের আগমনে তাদের আশা নতুন উদ্দীপনা পাবে এবং দুর্বৃত্তদের দৌরাত্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, মো. সারোয়ার আলম বৃহস্পতিবার সিলেটে পৌঁছবেন। তার আগমনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অসাধু প্রশাসনিক চক্র পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছে। ইতিমধ্যেই তিন দিনের সময় বাড়ানোর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার।

সিলেটের পরিবেশ ও পর্যটন পুনরুদ্ধারের জন্য স্থানীয় সমাজ ও প্রশাসন তার প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা রাখছে। সঠিক সময়ে ন্যায়সঙ্গত প্রশাসন পরিচালনা করতে পারলে সিলেট আবারও পরিবেশবান্ধব ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

মো. সারোয়ার আলম এমন এক সময়ে সিলেটে আসছেন যখন সারা দেশের দৃষ্টি সিলেটের দিকে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন এলাকায় পাথর-বালু লুট ও পাহাড় ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও স্থানীয় প্রশাসন অসাধু চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এবং প্রতিবাদীদের দমনে ভূমিকা রেখেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এসব অনিয়ম জাতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিশেষ করে সাদা পাথর লুট কাণ্ড দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। এতে পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে জনমত আরও শক্তিশালী হয় এবং সরকারও নড়েচড়ে বসে।

এরই ধারাবাহিকতায় ব্যর্থ জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মোরাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে সিলেটে দায়িত্ব নিতে আসছেন মো. সারোয়ার আলম। স্থানীয় মানুষ তার পদায়নকে ‘সিলেটের জন্য নতুন আশার প্রতীক’ হিসেবে দেখছে।