হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে নবীগঞ্জের এক দিনমজুর গ্রাহকের নামে আগস্ট মাসে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫ টাকার ভুতুড়ে বিল এসেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র তোলপাড় হচ্ছে। বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ঐ দিনমজুর। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বলছেন তাদের কম্পিউটার ব্যবহার সময় ভুলে এমন কান্ড হয়েছে। বিল প্রস্তুতকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন দিনমজুর কাজী ছাওধন মিয়া। প্রায় গ্রাহকেরই নিয়মিত আসা বিদ্যুৎ বিলের দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অনেকেই বিদ্যুৎ অফিসের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে কেউ কেউ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করছেন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্তৃপক্ষ বলছে, গত মাসে গরম থাকার কারণে এমন বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের কাজী ছাওধন মিয়ার একজন দিন মজুর, তার ঘরে একটি ফ্যান ও দুটি বাতি রয়েছে। প্রতি মাসে তার বিল ২/৩ শ’ টাকার বেশি আসে না। চলতি আগস্ট ২০২৫ মাসে বিল এসেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫ টাকা, বিলম্ব ফি ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫শ’ ৯৫ টাকা। মোট ব্যবহার করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিলে উল্লেখ করা হয়েছে জুন মাসের বিল ছিল ১০৫ টাকা।
কাজী ছাওধন মিয়া বলেন, আমি একটি বাতি ও একটি ফ্যানের বেশি চালাই না। আমি এই বিল দেখে অবাক হয়ে যাই। আমাদের এলাকায় মানুষ ও মেম্বার চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলে দুই দিন অফিসে গেছি তারা বলছেন এটা ঠিক করে দিবেন।
বিল প্রস্তুতকারী ক্ষমা সুত্রধর বলেন, আমি ইচ্ছে করে এমন কাজ করিনি, কম্পিউটারের ভুল করার জন্য এমনটা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনস্থ ভৌগোলিক এরিয়া প্রায় সাড়ে ৪ লাখ এর বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে । এর মধ্যে ৪টি উপজেলায় ২৪ টি চা বাগান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, রেলওয়ে স্টেশন সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে । গ্রাহকদের আগস্ট মাসে অধিকাংশ বিদ্যুৎ বিলে দেড় থেকে দ্বিগুণ টাকা এসেছে ।
যেমন ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিলে ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এ মাসে ভয়াবহ বন্যার কারণে অনেক উপজেলার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও আর্থিক অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে । এর মধ্যে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল ‘ মড়ার উপর খঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
কাজল মিয়া নামে এক গ্রাহক বলেন , আমার প্রতিবেশির মিটারে ১২২০ ইউনিট দেখা গেল । বিদ্যুৎ বিলে দেখা যায়, ১৩০০ ইউনিট। এভাবে বেশি বেশি লিখে দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ।
নবীগঞ্জের এক ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন , প্রতি মাসে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে । অথচ এ চলতি আগস্ট মাসে ১ হাজার ৬শ; টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
দৌলতপুর গ্রামের বদরুল ইসলাম নামে আরেকজন গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ বিল কম আসবে বলে বাসায় দু’টি মিটার লাগিয়েছি। এখন দেখা যায়, আগের চেয়ে আরো বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে।
আব্দুল মতিন নামে এক গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে ভুতুড়ে বিল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তারা বলেন আগামী মাস থেকে ঠিক হয়ে যাবে বলে কর্মকর্তা কর্মচারীরা আশ্বস্ত করেন ।
নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর নবীগঞ্জ অফিসের ডিজিএম মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, গরমের সময় একটু বেশি বিল আসে স্বাভাবিক।
দিনমজুর কাজী ছাওধন মিয়ার বিল প্রসঙ্গে বলেন, এটা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা বিল প্রস্তুতকারী ক্ষমা সুত্রধর কে নোটিশ করেছি, সে বলছে ভুল হয়েছে, আর এ রকম ভুল হবে না। কাজী ছাওধন মিয়ার বিল সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। ভুতুড়ে বিল আসলে অভিযোগ পাওয়ার সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ভাবেই চলছে নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের বর্তমান হালচাল।