, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের সিলেটে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ বিস্ফোরক উদ্ধার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পদায়নের আগেই হুমকির মুখে নতুন ইউএনও শাখী ছেপ বিশ্বনাথে জেন্ডার সচেতনা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দিরাইয়ে প্রশাসনের অভিযানে হকারমুক্ত ফুটপাত হাদীকে গুলি করা সন্ত্রাসীদের পালানো আটকাতে মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান সিলেটে হাওরের ভূগর্ভস্থে পানির ভয়াবহ সংকট আইন অমান্য করে সিলেটে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত বিএনপির প্রার্থীরা প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: গোয়াইনঘাটে কিশোর গ্যাং লিডারের বিরুদ্ধে মামলা শাবিপ্রবি সাস্ট এআইসিএইচই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টারের নতুন কমিটি গঠন

তিন বছরে ভেঙে পড়ল সৌন্দর্যের দাপট, অবহেলায় নষ্ট সিলেট বাস টার্মিনাল

প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি এবং আসাম প্যাটার্নের বাংলোর স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এই টার্মিনালটি নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার কারণে একসময় সিলেটের গর্ব ছিল।

যাত্রীদের বসার জন্য রাখা চেয়ারগুলোর অর্ধেকই ভাঙা, কিছু আবার চুরি হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে লাইট আর সিলিং ফ্যান। বাথরুমের অবস্থা নাজুক, দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়ছে একে একে।

এমন দৃশ্য এখন নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের; যেটি মাত্র তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্যন্ত হয়নি, অথচ এরই মধ্যে ভগ্নদশায় নেমে এসেছে ‘দেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাস টার্মিনাল’ হিসেবে খ্যাত এই স্থাপনাটি।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি এবং আসাম প্যাটার্নের বাংলোর স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এই টার্মিনালটি নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার কারণে একসময় সিলেটের গর্ব ছিল।

প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।

কিন্তু তদারকির অভাবে তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই টার্মিনালটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। দামি চেয়ারে জং ধরেছে, লাইট খসে পড়ছে, ওয়াচ টাওয়ারটি এখন ভূতের বাড়ির মতো নির্জন। ভিআইপি কক্ষ ও নামাজঘরে মাকড়শার জাল, আর কাচঘেরা দেয়ালে পরিবহন নেতাদের নির্বাচনী লিফলেট।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) জানিয়েছে, টার্মিনালটি ইতোমধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তাই আলাদা উদ্বোধনের আর প্রয়োজন নেই, এভাবেই এটি চালু থাকবে।

পরিবহন মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ টার্মিনালটি ইজারা নিয়েছেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন পরিবহন নেতা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।

সিসিক সূত্র জানায়, মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) এর আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৮ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা; এর মধ্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ব্যয় হয় ৫৬ কোটি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা।

দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনালে বিমানবন্দরের আদলে আগমন ও বহির্গমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত হয় গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা অফিস, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ ও পর্যটন অফিস রাখার কথা ছিল।

এ ছাড়া যাত্রী ওঠানামার জন্য পৃথক ভবন, সুপরিসর পার্কিং এলাকা, পরিবহনকর্মীদের জন্য আলাদা ভবন, রেস্টুরেন্ট, ফুড কোর্ট, বিশ্রামাগার, নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, সিক বেড ও প্রার্থনাকক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সুবিধা রাখা হয়েছিল।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভার জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপও নির্মাণ করা হয়।
টার্মিনালের বহির্গমন ভবনটি প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট লম্বা, যেখানে একসঙ্গে ৪৮টি বাস দাঁড়াতে পারে। যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল, ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও আলাদা নামাজের ঘর।

২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনালটি চালু করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই নির্মাণ ত্রুটি ধরা পড়ে এবং সমালোচনার মুখে পড়ে সিসিক। পরে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আধুনিক সেবার নামে এখন টার্মিনালের ভেতরে নোংরা ও পরিত্যক্ত চিত্র। যাত্রী চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে, সারাদিন ফাঁকা পড়ে থাকে টার্মিনাল ভবন। বসার আসনগুলো অপরিচ্ছন্ন ও ভাঙাচোরা, কোথাও বেঞ্চ ভাঙা, কোথাও চেয়ার উধাও। কিছু প্রবেশদ্বারের কাঁচের দরজা-জানালাও নেই।

টাকার বিনিময়ে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। সার্ভিস কার্যালয়গুলো বন্ধ ও তালাবদ্ধ। টার্মিনালের ভেতরজুড়ে ঝুলছে শ্রমিক সমিতির নির্বাচনী ব্যানার-স্টিকার।

গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার ভবনটিতেও তালা ঝুলছে। সেখানে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা, পুলিশ বা পর্যটন কার্যালয়ের কোনো কার্যক্রমের অস্তিত্ব মেলেনি। কেবল মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ছোট নিরাপত্তা ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ দেখা গেছে। তবে সেটিও তালাবদ্ধ ও পরিত্যক্ত।

নাগরিক ও যাত্রীদের আধুনিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই টার্মিনালটি নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু যাত্রীরা এখন এতে বিমুখ। সরেজমিনে দেখা গেছে, কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত রাস্তার পাশের পুরোনো কাউন্টারগুলোতে এখনো উপচে পড়া ভিড়, অথচ নতুন টার্মিনাল ভবন প্রায় ফাঁকা।

তবে টার্মিনালের ভেতরে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাস কাউন্টার থাকায় কিছু যাত্রী চলাচল আছে। এসব বাস টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করায় রাস্তার ওপর যানজট ও ভিড় কিছুটা কমেছে বলে জানান যাত্রী ও চালকেরা।

সিলেট বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল চালুর পর থেকেই সিটি করপোরেশনের কোনো তদারকি নেই। অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। ইজারাদার ও সিটি কর্তৃপক্ষ উভয়েরই গাফিলতি আছে।’

টার্মিনালের ইজারাদার সেলিম আহমদ বলেন, ‘৫৬ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য আমরা ইজারা নিয়েছি। রক্ষণাবেক্ষণে ২ লাখ টাকার কাজ আমাদের, বড় সংস্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমরা নিয়মিত তদারকি করি, কিছু সমস্যা এসেছে। সিটি করপরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখন রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব ইজারাদারের। তবে বড় কোনো সমস্যা হলে সিটি করপোরেশন তা দেখবে।’

জনপ্রিয়

বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের

তিন বছরে ভেঙে পড়ল সৌন্দর্যের দাপট, অবহেলায় নষ্ট সিলেট বাস টার্মিনাল

প্রকাশের সময় : ১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি এবং আসাম প্যাটার্নের বাংলোর স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এই টার্মিনালটি নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার কারণে একসময় সিলেটের গর্ব ছিল।

যাত্রীদের বসার জন্য রাখা চেয়ারগুলোর অর্ধেকই ভাঙা, কিছু আবার চুরি হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে লাইট আর সিলিং ফ্যান। বাথরুমের অবস্থা নাজুক, দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়ছে একে একে।

এমন দৃশ্য এখন নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের; যেটি মাত্র তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্যন্ত হয়নি, অথচ এরই মধ্যে ভগ্নদশায় নেমে এসেছে ‘দেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাস টার্মিনাল’ হিসেবে খ্যাত এই স্থাপনাটি।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি এবং আসাম প্যাটার্নের বাংলোর স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এই টার্মিনালটি নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার কারণে একসময় সিলেটের গর্ব ছিল।

প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।

কিন্তু তদারকির অভাবে তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই টার্মিনালটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। দামি চেয়ারে জং ধরেছে, লাইট খসে পড়ছে, ওয়াচ টাওয়ারটি এখন ভূতের বাড়ির মতো নির্জন। ভিআইপি কক্ষ ও নামাজঘরে মাকড়শার জাল, আর কাচঘেরা দেয়ালে পরিবহন নেতাদের নির্বাচনী লিফলেট।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) জানিয়েছে, টার্মিনালটি ইতোমধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তাই আলাদা উদ্বোধনের আর প্রয়োজন নেই, এভাবেই এটি চালু থাকবে।

পরিবহন মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ টার্মিনালটি ইজারা নিয়েছেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন পরিবহন নেতা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।

সিসিক সূত্র জানায়, মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) এর আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৮ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা; এর মধ্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ব্যয় হয় ৫৬ কোটি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা।

দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনালে বিমানবন্দরের আদলে আগমন ও বহির্গমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত হয় গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা অফিস, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ ও পর্যটন অফিস রাখার কথা ছিল।

এ ছাড়া যাত্রী ওঠানামার জন্য পৃথক ভবন, সুপরিসর পার্কিং এলাকা, পরিবহনকর্মীদের জন্য আলাদা ভবন, রেস্টুরেন্ট, ফুড কোর্ট, বিশ্রামাগার, নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, সিক বেড ও প্রার্থনাকক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সুবিধা রাখা হয়েছিল।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভার জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপও নির্মাণ করা হয়।
টার্মিনালের বহির্গমন ভবনটি প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট লম্বা, যেখানে একসঙ্গে ৪৮টি বাস দাঁড়াতে পারে। যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল, ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও আলাদা নামাজের ঘর।

২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনালটি চালু করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই নির্মাণ ত্রুটি ধরা পড়ে এবং সমালোচনার মুখে পড়ে সিসিক। পরে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আধুনিক সেবার নামে এখন টার্মিনালের ভেতরে নোংরা ও পরিত্যক্ত চিত্র। যাত্রী চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে, সারাদিন ফাঁকা পড়ে থাকে টার্মিনাল ভবন। বসার আসনগুলো অপরিচ্ছন্ন ও ভাঙাচোরা, কোথাও বেঞ্চ ভাঙা, কোথাও চেয়ার উধাও। কিছু প্রবেশদ্বারের কাঁচের দরজা-জানালাও নেই।

টাকার বিনিময়ে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। সার্ভিস কার্যালয়গুলো বন্ধ ও তালাবদ্ধ। টার্মিনালের ভেতরজুড়ে ঝুলছে শ্রমিক সমিতির নির্বাচনী ব্যানার-স্টিকার।

গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার ভবনটিতেও তালা ঝুলছে। সেখানে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা, পুলিশ বা পর্যটন কার্যালয়ের কোনো কার্যক্রমের অস্তিত্ব মেলেনি। কেবল মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ছোট নিরাপত্তা ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ দেখা গেছে। তবে সেটিও তালাবদ্ধ ও পরিত্যক্ত।

নাগরিক ও যাত্রীদের আধুনিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই টার্মিনালটি নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু যাত্রীরা এখন এতে বিমুখ। সরেজমিনে দেখা গেছে, কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত রাস্তার পাশের পুরোনো কাউন্টারগুলোতে এখনো উপচে পড়া ভিড়, অথচ নতুন টার্মিনাল ভবন প্রায় ফাঁকা।

তবে টার্মিনালের ভেতরে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাস কাউন্টার থাকায় কিছু যাত্রী চলাচল আছে। এসব বাস টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করায় রাস্তার ওপর যানজট ও ভিড় কিছুটা কমেছে বলে জানান যাত্রী ও চালকেরা।

সিলেট বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল চালুর পর থেকেই সিটি করপোরেশনের কোনো তদারকি নেই। অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। ইজারাদার ও সিটি কর্তৃপক্ষ উভয়েরই গাফিলতি আছে।’

টার্মিনালের ইজারাদার সেলিম আহমদ বলেন, ‘৫৬ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য আমরা ইজারা নিয়েছি। রক্ষণাবেক্ষণে ২ লাখ টাকার কাজ আমাদের, বড় সংস্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমরা নিয়মিত তদারকি করি, কিছু সমস্যা এসেছে। সিটি করপরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখন রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব ইজারাদারের। তবে বড় কোনো সমস্যা হলে সিটি করপোরেশন তা দেখবে।’