, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের সিলেটে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ বিস্ফোরক উদ্ধার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পদায়নের আগেই হুমকির মুখে নতুন ইউএনও শাখী ছেপ বিশ্বনাথে জেন্ডার সচেতনা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দিরাইয়ে প্রশাসনের অভিযানে হকারমুক্ত ফুটপাত হাদীকে গুলি করা সন্ত্রাসীদের পালানো আটকাতে মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান সিলেটে হাওরের ভূগর্ভস্থে পানির ভয়াবহ সংকট আইন অমান্য করে সিলেটে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত বিএনপির প্রার্থীরা প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: গোয়াইনঘাটে কিশোর গ্যাং লিডারের বিরুদ্ধে মামলা শাবিপ্রবি সাস্ট এআইসিএইচই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টারের নতুন কমিটি গঠন

হুমকির মুখে সিলেটের ধলাই সেতু: অবৈধ বালু উত্তোলনে ফাটল, দায় নেবে কে?

  • জুনেদ আহমদ
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭৪ পড়া হয়েছে

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জীবনরেখা ধলাই সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সেতুটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় এলাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ধলাই নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাথে সিলেট শহরের আসা যাওয়ার প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করেন। তবে সম্প্রতি সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।

রাতে বালু উত্তোলনে সেতু ঝুঁকিতে

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন রাতের আঁধারে কিছু অসাধু ব্যক্তি নৌকা নিয়ে সেতুর পিলারের গোড়ার দিক থেকে বালি উত্তোলন করেন। এতে নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এবং পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দিনে প্রশাসন অভিযান চালালেও রাতে আবারও বালু তোলা হয়। এতে সেতুর নিচের জায়গা ক্ষয় হচ্ছে, ফাটলও দেখা দিচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকটি নৌকা জব্দ করেছে এবং কিছু ব্যক্তিকে আটক করেছে। তবে পুরোপুরি এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।

প্রশাসনের কঠোর অবস্থান

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, সেতু রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কেউ কেউ বলে এরা গরিব মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বালু উত্তোলনের কারণে যদি সেতু ধ্বংস হয়ে যায়, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। আমরা ব্রিজ ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বলেন, আমরা চাই সবাই সহযোগিতা করুক। দিনে মিটিং করে রাতে যদি কেউ বালু চোরদের পক্ষ নেয়, তাহলে সেটা সমাজের জন্য ভয়াবহ। এমন মানুষ আমাদের পাশে চাই না।

সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা

কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সকল স্থানীয় সাংবাদিক এবং কিছু সচেতন নাগরিক প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে সেতু রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন। তারা বলছেন, সেতু রক্ষা মানে শুধু একটি কাঠামো বাঁচানো নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, যারা রাতে সেতুর নিচে বালি তোলে, তারা এলাকার শত্রু। আমরা প্রশাসনের পাশে আছি, সেতু রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

স্থানীয়দের আহ্বান

স্থানীয়রা বলছেন, এখন মুখে নয়—কাজে সাড়া দেওয়ার সময়। তারা আহ্বান জানান: সেতুর আশেপাশে কোনো অবৈধ বালি উত্তোলন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে। যারা এই কাজে সহযোগিতা করে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে এবং সেতুর নিরাপত্তায় সকলের নজরদারি জোরদার করতে।

দায় কার?

ধলাই সেতুর ফাটল —এটি অবহেলা, অনিয়ম ও অসচেতনতার ফল। প্রশাসনের তদারকির ঘাটতি, প্রভাবশালীদের নীরব ভূমিকা, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা এবং স্থানীয়দের উদাসীনতা মিলে সেতুটি আজ ঝুঁকিতে।

কোম্পানীগঞ্জবাসীর দাবি—ধলাই সেতুর নিচে অবৈধ বালি উত্তোলনে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এবং সেতুর স্থায়িত্ব রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

জনপ্রিয়

বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের

হুমকির মুখে সিলেটের ধলাই সেতু: অবৈধ বালু উত্তোলনে ফাটল, দায় নেবে কে?

প্রকাশের সময় : ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জীবনরেখা ধলাই সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সেতুটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় এলাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ধলাই নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাথে সিলেট শহরের আসা যাওয়ার প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করেন। তবে সম্প্রতি সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।

রাতে বালু উত্তোলনে সেতু ঝুঁকিতে

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন রাতের আঁধারে কিছু অসাধু ব্যক্তি নৌকা নিয়ে সেতুর পিলারের গোড়ার দিক থেকে বালি উত্তোলন করেন। এতে নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এবং পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দিনে প্রশাসন অভিযান চালালেও রাতে আবারও বালু তোলা হয়। এতে সেতুর নিচের জায়গা ক্ষয় হচ্ছে, ফাটলও দেখা দিচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকটি নৌকা জব্দ করেছে এবং কিছু ব্যক্তিকে আটক করেছে। তবে পুরোপুরি এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।

প্রশাসনের কঠোর অবস্থান

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, সেতু রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কেউ কেউ বলে এরা গরিব মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বালু উত্তোলনের কারণে যদি সেতু ধ্বংস হয়ে যায়, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। আমরা ব্রিজ ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বলেন, আমরা চাই সবাই সহযোগিতা করুক। দিনে মিটিং করে রাতে যদি কেউ বালু চোরদের পক্ষ নেয়, তাহলে সেটা সমাজের জন্য ভয়াবহ। এমন মানুষ আমাদের পাশে চাই না।

সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা

কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সকল স্থানীয় সাংবাদিক এবং কিছু সচেতন নাগরিক প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে সেতু রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন। তারা বলছেন, সেতু রক্ষা মানে শুধু একটি কাঠামো বাঁচানো নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, যারা রাতে সেতুর নিচে বালি তোলে, তারা এলাকার শত্রু। আমরা প্রশাসনের পাশে আছি, সেতু রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

স্থানীয়দের আহ্বান

স্থানীয়রা বলছেন, এখন মুখে নয়—কাজে সাড়া দেওয়ার সময়। তারা আহ্বান জানান: সেতুর আশেপাশে কোনো অবৈধ বালি উত্তোলন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে। যারা এই কাজে সহযোগিতা করে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে এবং সেতুর নিরাপত্তায় সকলের নজরদারি জোরদার করতে।

দায় কার?

ধলাই সেতুর ফাটল —এটি অবহেলা, অনিয়ম ও অসচেতনতার ফল। প্রশাসনের তদারকির ঘাটতি, প্রভাবশালীদের নীরব ভূমিকা, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা এবং স্থানীয়দের উদাসীনতা মিলে সেতুটি আজ ঝুঁকিতে।

কোম্পানীগঞ্জবাসীর দাবি—ধলাই সেতুর নিচে অবৈধ বালি উত্তোলনে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এবং সেতুর স্থায়িত্ব রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।