সিলেট-ঢাকা রেলপথে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামে নতুন একটি ননস্টপ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় প্রায় দুই বছর আগে। চট্টগ্রাম থেকে তিন হাজার সিরিজের নতুন মডেলের ইঞ্জিনও সিলেটে নিয়ে আসা হয়। অত্যাধুনিক ওই ইঞ্জিন দিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়ালও দেয়া হয়। কথা ছিল ট্রায়ালের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দেবে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করবে রেলওয়ে। তবে প্রায় ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে কিনা তা রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বলতে পারছেন না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর বিরতিহীন ট্রেন চালুর ব্যাপারে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সিলেটবাসীর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের শেষ দিকে সরকার বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই বছরেরই নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেলওয়ের সেই সময়ের মহাপরিচালকের কাছে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে চালুর জন্য নতুন বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনের নাম টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস অনুমোদিত হয়েছে। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচিও অনুমোদিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তের পর পরই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে তিন হাজার সিরিজের নতুন মডেলের ইঞ্জিন সিলেটে নিয়ে আসা হয়।
এরপর অত্যাধুনিক ওই ইঞ্জিন দিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল দেয়া হয়। কথা ছিল ট্রায়ালের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করবে রেলওয়ে। কিন্তু ট্রায়ালের পর প্রায় ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে কিনা তা রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বলতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালুর ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল সরকার।
প্রাথমিকভাবে কোচ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১৮টি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথা ছিল, ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেনটি যাত্রাপথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে বিরতি করবে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে বেলা ৩টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে। একইভাবে বিকাল ৫টায় সিলেট থেকে ছেড়ে রাত ১১টায় ঢাকায় পৌঁছবে। ট্রেনের আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ৮২৪টি। ট্রেনটিতে দুটি খাবার গাড়ি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি ও শোভন চেয়ার সাতটি কোচের সমন্বয়ে ১৮/৩৬ লোড দ্বারা গঠন করতে রেলওয়ের মহাপরিচালককে (তৎকালীন) নির্দেশ দেয়া হয়।
একটি সূত্র বলছে, সিলেট-ঢাকা রুটের জন্য অপেক্ষায় থাকা বিরতিহীন ওই ট্রেনটি এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেট-ঢাকা রুটের বিরতিহীন ট্রেন নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারাও কিছু বলছেন না। কবে সেটি চালু হতে পারে এ বিষয়ে কেউই কিছু জানাতে পারছেন না।
এদিকে সিলেট-ঢাকা রেলপথকে ডাবল করা ও নতুন ট্রেন চালুর দাবিতে সিলেট কল্যাণ সংস্থা, সিলেট বিভাগ যুব কল্যাণ সংস্থা ও সিলেট প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা যৌথভাবে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এহসানুল হক তাহের বলেন, ‘আমরা নাগরিক সমাবেশ করেছি। দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে সিলেটবাসী।’
সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে—সিলেটবাসীর দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘবে যেন কেউ নেই। এটা যেন বাংলাদেশের অংশ নয়। আকাশপথে সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধি, রেলপথে কালোবাজারি, সড়কপথে দুর্ভোগে দুর্বিষহ হয়ে উঠছেন সিলেটবাসী। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন তারা।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট যেন বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ। উন্নয়নে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা। এরই মধ্যে একদিন ডেডলক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
এ বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামে একটি বিরতিহীন ট্রেন চালু হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু কী কারণে এটি চালু হয়নি তা আর শুনিনি। সর্বশেষ অবস্থাও আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত জুলাইয়ে এখানে যোগদান করেছি। আগে কী হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এদিকে সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে একজনের টিকিটে আরেকজন ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। ভ্রমণের সময় যাত্রীর এনআইডি কার্ড সঙ্গে রাখার কথাও বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে। তবে জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট মনে করছেন না সিলেটের বিশিষ্টজনরা। তাদের দাবি, সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘২৪ অক্টোবর থেকে সিলেটে ট্রেন ভ্রমণ করতে হলে এনআইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে। একজনের টিকিট অপরজন ব্যবহার করতে পারবেন না। এতে প্রথমে কয়েকদিন হয়তো কিছু ভোগান্তি হবে। তবে টিকিট কালোবাজারি বন্ধে এছাড়া আর বিকল্প পথ নেই। নতুন ট্রেন চালুর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’

প্রতিদিনের সিলেট ডেস্ক 



















