সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় দায়সারা ভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়েছে।
বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালনে উপজেলা প্রশাসনের পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা পরিবার বর্গের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা, নানাবিধ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের ষোলো কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি বা অনুষ্ঠান পালিত হলেও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও উপজেলার সাংবাদিক সংগঠন বা কর্মরত সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করার প্রয়োজন মনে করেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এধরনের বৈষম্যমূলক আচরণে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত হওয়ায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কুচকাওয়াজ ও প্যারেড অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের (শিক্ষার্থী) স্কাউট সদস্যদের কড়া রোদে ঘন্টা খানেক দাড় করিয়ে রেখেছেন। এতে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েও পড়ে, একাধিক শিক্ষার্থী রোজা ভাঙতে হয়েছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা, বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ , মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, বিআরডিবি কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর।
সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি বিধিমালা ২০১৯-এ বলা আছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকিতে পারিবেন না। সরকারি কর্মচারী যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত বিলম্বে অফিসে উপস্থিত হইতে পারিবেন না।
সুশীল সমাজ সরকারি কর্মকর্তাদের এমন আচরণের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, সরকারি চাকুরী পেয়ে ওনারা তো অনেক বড় চেয়ারের মালিক হয়ে গেছেন। পরাধীন থাকলে সরকারি অফিসার তো দূর চাকর হয়ে থাকলে হতো। যারা জাতীয় অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করে না তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মুজিবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, দলীয় দাওয়াত পাইনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র উপজেলার আমীর ডা. আব্দুল জলিল বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রত্যাশা করিনি।
উপজেলা খেলাফত মসলিসের সভাপতি মাওলানা মিসবাহ উদ্দিন মিসলু বলেন, এরকম জাতীয় প্রোগ্রামে দাওয়াত না দেওয়া ফ্যাসিবাদী আচরণ। উপজেলা প্রশাসনের এহেন কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাই।
উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা বলেন, স্বাধীনতা দিবস পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভায়ও সাংবাদিকদের ডাকা হয়নি। এছাড়া, জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করার প্রয়োজনবোধ করা হয়নি। ২৪মার্চ সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বালাগঞ্জে কয়েকটি প্রশাসনিক দপ্তর ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, প্রশাসনিক দপ্তর প্রধান, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মত বিনিময় ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে হুইল চেয়ার বিতরণ করেন। কিন্তু, জেলা প্রশাসকের এসব কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের তরফে সাংবাদিকদের জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের দাওয়াত করার জন্য আমার অফিস স্টাফ ও একজন এনজিও কর্মীকে বলেছি দিয়েছি। হয়ত সময় মত তারা দাওয়াত পৌঁছাতে গড়িমসি করেছে।কয়েকজন কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে গেছেন। অতিরিক্ত দায়িত্বে যারা তারা অন্যত্র অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। জাতীয় অনুষ্ঠানে কারা কারা নেই খুঁজ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবেন বলে তিনি জানান।