, বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বালাগঞ্জে অপরিকল্পিত সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ, নতুন নকশায় করা হবে উঁচু সিলেট থেকে নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ স্বরাজ পার্টি’র আত্মপ্রকাশ সিলেটে বিয়ের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বরের মৃত্যু  সুনামগঞ্জে এক শিশুর ছুরিকাঘাতে আরেক শিশু নিহত সিলেটে কমেছে চাহিদা ও উৎপাদন : কুরবানীর জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি পশু বৃহৎ জনগোষ্ঠির কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটান : মো: জয়নাল আবেদীন সিলেটে আইনজীবী হত্যায় ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বিশ্বনাথে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ৮ দিন পর থানায় অভিযোগ  সিলেটে বিভিন্ন দাবিতে আদালতপাড়ায় দুই ঘন্টার কর্মবিরতি নিজের সন্তান হত্যা কোন রাষ্ট্র ও সরকারের কাজ হতে পারেনা : বিভাগীয় কমিশনার
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

সিলেটে কমেছে চাহিদা ও উৎপাদন : কুরবানীর জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি পশু

আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের খামারগুলোতে চলছে কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের কাজ। খামারে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা।

গত এক বছরের ব্যবধানে সিলেটে কমেছে কুরবানীর পশুর চাহিদা পাশাপাশি কমেছে উৎপাদনও। এদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বাড়তি দামে কিনতে হবে কুরবানীর পশু। এবারও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ পথে কুরবানীর পশু আসা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় খামারিগণ।

খামারিরা জানিয়েছেন গো খাদ্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে ব্যয়।ফলে দাম বেড়েছে পশুর। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আসা নিয়ে লোকসানের মূখে পড়ায় শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, সিলেটে এবার কুরবানী যোগ্য পশুর কোন ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু।এবার গত বছরের তুলনায় কুরবানীর পশুর চাহিদা কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৭৪টির। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮২টি পশুর।

এবছর সিলেট বিভাগে কুরবানী পশুর চাহিদা আছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭টির। প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৫টি। চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকবে ৩৭ হাজার ৩৮টি। অথচ গেল বছর ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭ টি। আর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১টির। গত বছর উদ্বৃত্ত ছিল ৩৬ হাজার ১৪৬টি পশু। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সিলেটে কুরবানীর পশুর উৎপাদন কমেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮২টি। আর চাহিদা কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৭৪টি।

এবছর সিলেটে কুরবানীর পশুর চাহিদা কমে যাওয়ার জন্য পতিত আওয়ামী সরকারের অনেক নেতাকর্মীর পলায়ন, আত্মগোপন ও কারান্তরীন পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তারা বলেছেন, স্থানীয় খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কেউ কেউ এবার কুরবানী দিতে আগ্রহী নয়।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় ও খামারি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭ টি। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি। উদ্বৃত থাকা ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু দেশের অন্যান্য জেলায় রপ্তানী করা যাবে।

বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন খামারে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত প্রায় ৩ লক্ষাধিক গবাদি পশু। গত বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়ে চাহিদা মিটানো সম্ভব। ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের সকল খামারে চলছে কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট করণ কাজ। প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সবধরণের কোরবানির পশু রয়েছে।

এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খামারিকে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে উঠান-বৈঠক করে খামারিকে হাতে কলমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর সিলেট বিভাগে কুরবানী যোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৬টি ষাড়, ৩২ হাজার ৩৬৮টি বলদ, ৩৭ হাজার ৩৯২টি গাভী, ৫ হাজার ৪২০টি মহিষ, ৭৭ হাজার ৬৪৬টি ছাগল, ২৪ হাজার ১৪টি ভেড়া ও ৯১৯ টি অন্যান্য পশু রয়েছে।

এবছর সিলেট জেলায় কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা আছে ৮৩ হাজার ৫৪১টির। প্রস্তুত আছে ১ লাখ ২ হাজার ২৭৮টি। তন্মধ্যে ৪৩ হাজার ৮৮২টি ষাড়, ১৫ হাজার ২৭৭টি বলদ, ৮ হাজার ১৮৪টি গাভী, ৩ হাজার ৪০২টি মহিষ, ২৪ হাজার ৪৪৯টি ছাগল, ৭ হাজার ১৫টি ভেড়া ও ৫৯টি অন্যান্য পশু রয়েছে। সিলেট জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯টি। প্রস্তত ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৯২১টি। এবার জেলায় চাহিদা কমেছে ৬৭ হাজার ১৬৮টি এবং উৎপাদন কমেছে ৭৮ হাজার ৬৪৩টি।

মৌলভীবাজার জেলায় এবার কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা আছে ৭৮ হাজার ৯২৯টি এবং প্রস্তুত আছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি। তন্মধ্যে ৩২ হাজার ৮৮টি ষাঢ়, ৭ হাজার ৫৯১টি বলদ, ৬ গাজার ৯০১টি গাভী, ১ হাজার ২৭২টি মহিষ, ২৮ হাজার ৬২২টি ছাগল, ৪ হাজার ১৬৩টি ভেড়া রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ৯৮ হাজার ৫৪২টির এবং প্রস্তুত ছিল ৮৩ হাজার ৮১টি পশু। এবার চাহিদা কমেছে ১৯ হাজার ৬১৩টি এবং উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ১৭৫টি।

হবিগঞ্জ জেলায় এবছর কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা ৬৫ হাজার ৫৮৩টি এবং প্রস্তুত আছে ৭০ হাজার ৭৪৬টি। তন্মধ্যে ২৯ হাজার ৯৬৬টি ষাড়, ৫ হাজার ৪৯টি বলদ, ১৪ হাজার ২৯১টি গাভী, ৩৫৯টি মহিষ, ১৩ হাজার ২০২টি ছাগল ও ৭ হাজার ৭৭৯টি ভেড়া রয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ৯০ হাজার ৬৩৮টি এবং প্রস্তুত ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৯৭৬টি। এবার চাহিদা কমেছে ২৪ হাজার ৭৫৫টি এবং উৎপাদন কমেছে ৩২ হাজার ২৩০টি।

সুনামগঞ্জ জেলায় এবার কুরবানী পশুর চাহিদা ৪৩ হাজার ৪২৪টি এবং প্রস্তুত আছে ৫৪ হাজার ৮৫৪টি। তন্মধ্যে ২৪ হাজার ৮২০টি ষাড়, ৪ হাজার ৩৫১টি বলদ, ৮ হাজার ১৬টি গাভী, ৩৮৭টি মহিষ, ১১ হাজার ৩৬৩টি ছাগল, ৫ হাজার ৫৭টি ভেড়া ও ৮৬০টি অন্যান্য পশু রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় গত বছর চাহিদা ছিল ৫৪ হাজার ৩৬২টি এবং প্রস্তুত ছিল ৬২ হাজার ৬৮৮টি। এবার চাহিদা কমেছে ১০ হাজার ৯৩৮টি এবং উৎপাদন কমেছে ৭ হাজার ৮৩৪টি।

সিলেটের একাধিক খামারীরা আলাপকালে জানান- এমনিতেই সবধরণের পশুখাদ্যের দাম বাড়তি এরমধ্যে তীব্র গরমের কারণে পশুর জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। পশুকে ২৪ ঘণ্টা বাতাসের মধ্যে রাখতে হয়। খাবারের সঙ্গে সোডা দিতে হয়। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হয়। আবার ফসলের মৌসুম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। দেশে প্রচলিত পশুখাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন খৈল, গমের ভুসি, রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, মুগ ভুসি ও মটর ভুসি। এসব উপাদানের দাম এবার ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অনেক ব্যাপারী শুধু কোরবানির জন্যই কয়েক মাস আগে পশু কিনে ব্যবসা করেন।

খামারী আব্দুর রহিম আলাপকালে বলেন, ৬০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। ২০ হাজার টাকার খাবার খাওয়ানো হয়েছে। এখন যদি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম না পাই তাহলে পোষাবে না।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের পরিচালক ডা. মারুফ হাসান বলেন, এবার সিলেট বিভাগে কুরবানীযোগ্য পশুর কোন ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত আছে ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু। তাই এবার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পশু আসার কোন দরকার নেই। তবে এই তালিকা খসড়া মাত্র, চুড়ান্ত নয়। চাহিদা খুব একটা না বাড়লেও শেষ দিকে সবধরণের পশুর উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। শেষ সময় আমরা আবার চুড়ান্ত তালিকা করবো। তখন গত বছরের তুলনায় উৎপাদনের ব্যবধানও কমে আসবে।

তিনি বলেন, ৩৭ হাজারের বেশী পশু উদ্বৃত্ত থাকার পরও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসবে। আবার সিলেট বিভাগ থেকে অন্যান্য জেলা ও বিভাগেও বিক্রি হবে। সিলেটের অনেক প্রবাসীদের বড় গরু কুরবানী দেয়ার আগ্রহ বেশী থাকে। আর এইধরনের বড় গরু সিলেটে স্থানীয়ভাবে খুব কম উৎপাদন হয়। তাই কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় পশু সিলেটে আসে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবেনা। তবে স্থানীয়ভাবেই বেশী পশু কুরবানী হবে।

জনপ্রিয়

বালাগঞ্জে অপরিকল্পিত সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ, নতুন নকশায় করা হবে উঁচু

সিলেটে কমেছে চাহিদা ও উৎপাদন : কুরবানীর জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি পশু

প্রকাশের সময় : ৫ ঘন্টা আগে

আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের খামারগুলোতে চলছে কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের কাজ। খামারে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা।

গত এক বছরের ব্যবধানে সিলেটে কমেছে কুরবানীর পশুর চাহিদা পাশাপাশি কমেছে উৎপাদনও। এদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বাড়তি দামে কিনতে হবে কুরবানীর পশু। এবারও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ পথে কুরবানীর পশু আসা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় খামারিগণ।

খামারিরা জানিয়েছেন গো খাদ্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে ব্যয়।ফলে দাম বেড়েছে পশুর। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আসা নিয়ে লোকসানের মূখে পড়ায় শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, সিলেটে এবার কুরবানী যোগ্য পশুর কোন ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু।এবার গত বছরের তুলনায় কুরবানীর পশুর চাহিদা কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৭৪টির। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮২টি পশুর।

এবছর সিলেট বিভাগে কুরবানী পশুর চাহিদা আছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭টির। প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৫টি। চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকবে ৩৭ হাজার ৩৮টি। অথচ গেল বছর ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭ টি। আর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১টির। গত বছর উদ্বৃত্ত ছিল ৩৬ হাজার ১৪৬টি পশু। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সিলেটে কুরবানীর পশুর উৎপাদন কমেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮২টি। আর চাহিদা কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৭৪টি।

এবছর সিলেটে কুরবানীর পশুর চাহিদা কমে যাওয়ার জন্য পতিত আওয়ামী সরকারের অনেক নেতাকর্মীর পলায়ন, আত্মগোপন ও কারান্তরীন পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তারা বলেছেন, স্থানীয় খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কেউ কেউ এবার কুরবানী দিতে আগ্রহী নয়।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় ও খামারি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭ টি। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি। উদ্বৃত থাকা ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু দেশের অন্যান্য জেলায় রপ্তানী করা যাবে।

বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন খামারে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত প্রায় ৩ লক্ষাধিক গবাদি পশু। গত বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়ে চাহিদা মিটানো সম্ভব। ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের সকল খামারে চলছে কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট করণ কাজ। প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সবধরণের কোরবানির পশু রয়েছে।

এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খামারিকে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে উঠান-বৈঠক করে খামারিকে হাতে কলমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর সিলেট বিভাগে কুরবানী যোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৬টি ষাড়, ৩২ হাজার ৩৬৮টি বলদ, ৩৭ হাজার ৩৯২টি গাভী, ৫ হাজার ৪২০টি মহিষ, ৭৭ হাজার ৬৪৬টি ছাগল, ২৪ হাজার ১৪টি ভেড়া ও ৯১৯ টি অন্যান্য পশু রয়েছে।

এবছর সিলেট জেলায় কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা আছে ৮৩ হাজার ৫৪১টির। প্রস্তুত আছে ১ লাখ ২ হাজার ২৭৮টি। তন্মধ্যে ৪৩ হাজার ৮৮২টি ষাড়, ১৫ হাজার ২৭৭টি বলদ, ৮ হাজার ১৮৪টি গাভী, ৩ হাজার ৪০২টি মহিষ, ২৪ হাজার ৪৪৯টি ছাগল, ৭ হাজার ১৫টি ভেড়া ও ৫৯টি অন্যান্য পশু রয়েছে। সিলেট জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯টি। প্রস্তত ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৯২১টি। এবার জেলায় চাহিদা কমেছে ৬৭ হাজার ১৬৮টি এবং উৎপাদন কমেছে ৭৮ হাজার ৬৪৩টি।

মৌলভীবাজার জেলায় এবার কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা আছে ৭৮ হাজার ৯২৯টি এবং প্রস্তুত আছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি। তন্মধ্যে ৩২ হাজার ৮৮টি ষাঢ়, ৭ হাজার ৫৯১টি বলদ, ৬ গাজার ৯০১টি গাভী, ১ হাজার ২৭২টি মহিষ, ২৮ হাজার ৬২২টি ছাগল, ৪ হাজার ১৬৩টি ভেড়া রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ৯৮ হাজার ৫৪২টির এবং প্রস্তুত ছিল ৮৩ হাজার ৮১টি পশু। এবার চাহিদা কমেছে ১৯ হাজার ৬১৩টি এবং উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ১৭৫টি।

হবিগঞ্জ জেলায় এবছর কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা ৬৫ হাজার ৫৮৩টি এবং প্রস্তুত আছে ৭০ হাজার ৭৪৬টি। তন্মধ্যে ২৯ হাজার ৯৬৬টি ষাড়, ৫ হাজার ৪৯টি বলদ, ১৪ হাজার ২৯১টি গাভী, ৩৫৯টি মহিষ, ১৩ হাজার ২০২টি ছাগল ও ৭ হাজার ৭৭৯টি ভেড়া রয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় গত বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিল ৯০ হাজার ৬৩৮টি এবং প্রস্তুত ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৯৭৬টি। এবার চাহিদা কমেছে ২৪ হাজার ৭৫৫টি এবং উৎপাদন কমেছে ৩২ হাজার ২৩০টি।

সুনামগঞ্জ জেলায় এবার কুরবানী পশুর চাহিদা ৪৩ হাজার ৪২৪টি এবং প্রস্তুত আছে ৫৪ হাজার ৮৫৪টি। তন্মধ্যে ২৪ হাজার ৮২০টি ষাড়, ৪ হাজার ৩৫১টি বলদ, ৮ হাজার ১৬টি গাভী, ৩৮৭টি মহিষ, ১১ হাজার ৩৬৩টি ছাগল, ৫ হাজার ৫৭টি ভেড়া ও ৮৬০টি অন্যান্য পশু রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় গত বছর চাহিদা ছিল ৫৪ হাজার ৩৬২টি এবং প্রস্তুত ছিল ৬২ হাজার ৬৮৮টি। এবার চাহিদা কমেছে ১০ হাজার ৯৩৮টি এবং উৎপাদন কমেছে ৭ হাজার ৮৩৪টি।

সিলেটের একাধিক খামারীরা আলাপকালে জানান- এমনিতেই সবধরণের পশুখাদ্যের দাম বাড়তি এরমধ্যে তীব্র গরমের কারণে পশুর জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। পশুকে ২৪ ঘণ্টা বাতাসের মধ্যে রাখতে হয়। খাবারের সঙ্গে সোডা দিতে হয়। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হয়। আবার ফসলের মৌসুম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। দেশে প্রচলিত পশুখাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন খৈল, গমের ভুসি, রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, মুগ ভুসি ও মটর ভুসি। এসব উপাদানের দাম এবার ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অনেক ব্যাপারী শুধু কোরবানির জন্যই কয়েক মাস আগে পশু কিনে ব্যবসা করেন।

খামারী আব্দুর রহিম আলাপকালে বলেন, ৬০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। ২০ হাজার টাকার খাবার খাওয়ানো হয়েছে। এখন যদি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম না পাই তাহলে পোষাবে না।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের পরিচালক ডা. মারুফ হাসান বলেন, এবার সিলেট বিভাগে কুরবানীযোগ্য পশুর কোন ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত আছে ৩৭ হাজার ৩৮টি পশু। তাই এবার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পশু আসার কোন দরকার নেই। তবে এই তালিকা খসড়া মাত্র, চুড়ান্ত নয়। চাহিদা খুব একটা না বাড়লেও শেষ দিকে সবধরণের পশুর উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। শেষ সময় আমরা আবার চুড়ান্ত তালিকা করবো। তখন গত বছরের তুলনায় উৎপাদনের ব্যবধানও কমে আসবে।

তিনি বলেন, ৩৭ হাজারের বেশী পশু উদ্বৃত্ত থাকার পরও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসবে। আবার সিলেট বিভাগ থেকে অন্যান্য জেলা ও বিভাগেও বিক্রি হবে। সিলেটের অনেক প্রবাসীদের বড় গরু কুরবানী দেয়ার আগ্রহ বেশী থাকে। আর এইধরনের বড় গরু সিলেটে স্থানীয়ভাবে খুব কম উৎপাদন হয়। তাই কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় পশু সিলেটে আসে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবেনা। তবে স্থানীয়ভাবেই বেশী পশু কুরবানী হবে।