একদিকে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী, অন্যদিকে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে চিকিৎসা অবকাঠামো। সিলেট বিভাগের এক কোটি ১১ লাখ মানুষের জন্য রেডিওথেরাপির মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা চলছে মাত্র একটি মেশিনের ওপর ভর করে। জনবল সংকট, যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতা আর রোগীর চাপ সামলে বিভাগটি টিকে আছে ন্যূনতম সক্ষমতায়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেরাপি দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় সক্ষমতা কম হওয়ায় বাড়ছে অপেক্ষা ও ভোগান্তি।
ফলে দ্রুত ১০০ শয্যার ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’ চালুর দাবি জোরালো হয়েছে।
বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাথা ও গলার ক্যান্সার বিশেষ করে মুখগহ্বর, গলা, নাক ও থাইরয়েডে রোগী বেশি। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। মাথা–গলার রোগীদের ৩৩ দিন টানা থেরাপি নেওয়ায় শিডিউলের চাপ আরও বাড়ে। ঢাকায় থেরাপির সময় না পাওয়া ও ভিড়ের কারণে ভৈরব, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ থেকেও রোগীরা সিলেটে আসছেন যা রোগীর চাপ আরও বাড়াচ্ছে।
একটি মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ রোগীকে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও নতুন রোগীদের শিডিউল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে এক মাস। বছরের শুরুতে এই অপেক্ষা ছিল দুই–তিন মাস। সরেজমিনে দেখা গেছে, অক্টোবরের শেষে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নভেম্বরের শেষ ভাগে শিডিউল পাচ্ছেন।
তীব্র জনবল সংকটও পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও বিভাগটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে একজন সহকারী অধ্যাপকের ওপর ভর করে। ছয়জন টেকনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও ছিলেন মাত্র দুজন; সম্প্রতি অনারারি ভিত্তিতে আরও দুজন যোগ দিয়েছেন। ২০১৮ সালে চালু হওয়া রেডিওথেরাপি মেশিনটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিকল হয়ে চার মাস বন্ধ ছিল; এখনো এটি অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যার ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’-এর নির্মাণকাজ শেষের দিকে। চারটি রেডিওথেরাপি মেশিন চালু হলে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ রোগী থেরাপি নিতে পারবেন। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানে আগের সরকারের পতনের পর প্রকল্পের অগ্রগতি কিছুটা মন্থর হয়ে গেছে।
রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. সরদার বনিউল আহমেদ বলেন, যেখানে তিনজন শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে আমি একাই দায়িত্ব পালন করছি। তবু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি জানান, প্রতিদিন অন্তত ১৫০ জন রোগী থেরাপি নিচ্ছেন এবং গত এক বছরে ৯৮০ রোগী রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। হাসপাতালে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বলেন, গুরুতর রোগীদের অগ্রাধিকার দিয়ে শিডিউল দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পদ পূরণ ও ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’ দ্রুত চালুর উদ্যোগ চলছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক 



















