, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের সিলেটে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ বিস্ফোরক উদ্ধার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পদায়নের আগেই হুমকির মুখে নতুন ইউএনও শাখী ছেপ বিশ্বনাথে জেন্ডার সচেতনা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দিরাইয়ে প্রশাসনের অভিযানে হকারমুক্ত ফুটপাত হাদীকে গুলি করা সন্ত্রাসীদের পালানো আটকাতে মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান সিলেটে হাওরের ভূগর্ভস্থে পানির ভয়াবহ সংকট আইন অমান্য করে সিলেটে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত বিএনপির প্রার্থীরা প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: গোয়াইনঘাটে কিশোর গ্যাং লিডারের বিরুদ্ধে মামলা শাবিপ্রবি সাস্ট এআইসিএইচই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টারের নতুন কমিটি গঠন
সিলেটে অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম্য

দিনের আলোতে শিশু অপহরণ, রাতে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি

সিলেটে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নগরজুড়ে। ফিল্মি কায়দায় প্রাইভেট কার থামিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে শিশুকে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের সাহসিকতায় শিশুটি উদ্ধার হলেও পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা।

ঘটনাটি ঘটে ১৮ নভেম্বর দুপুরে শহরের নবাব রোডে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, আগে থেকেই অবস্থানে থাকা একটি দল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করছিল। গাড়িটি সামনে আসতেই চারজন অস্ত্র উঁচিয়ে সেটি থামায়। শিশু লাবিবকে গাড়ি থেকে টেনে নেওয়ার পর অল্প দূর গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের ধাওয়া করে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

গাড়িচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, অস্ত্রধারীরা গাড়ির সামনে কোপাতে থাকে। প্রাণ হাতে নিয়ে তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে জোর করে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় অপহরণকারীরা। গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির চালক স্বপন আহমেদ দাবি করেন, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কেবল ভাড়ায় গাড়ি চালাতে গিয়েই তিনি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এরকম দৃশ্য আমরা কখনো দেখিনি। দিনে দুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে শিশু অপহরণ এটা সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর। সবার নিরাপত্তা নিয়েই এখন শঙ্কা।

ব্যবসায়ী পরিবারের অভিযোগ, বাসা রঙের কাজ করতে গিয়ে চক্রের সদস্যরা তাদের শিশুকে টার্গেট করে। মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে তারা অপহরণ করে বলে জানান শিশুটির বাবা ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পরও চক্রটি মুঠোফোনে ৫ লাখ টাকা দাবি করে এবং পুলিশি সহায়তা না নিতে হুমকি দেয়।

একই দিনে রাতে শহরের সোবহানিঘাট এলাকায় আরেক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হরিপুর এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। চাওয়া হয় ৪ লাখ টাকা। পরে পরিচিত আরেক ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, হরিপুর এলাকার একটি চক্র নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছে।

এসব ঘটনায় নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সিলেটবাসী। মদিনা মার্কেট এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, আমার মাদ্রাসার একজন ছাত্রও অপহরণের শিকার হয়েছে। বাচ্চাদের মনে ভয় ঢুকে যাচ্ছে। নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্ন।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এসব চক্র ধরতে সাড়াশি অভিযান চলছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সর্বশেষ ঘটনায়ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সিলেট নগরীতে ছিনতাইয়ের ৩০টি এবং নারী শিশু অপহরণের ১১টি মামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

সিলেটে বাড়তে থাকা এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

জনপ্রিয়

বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের

সিলেটে অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম্য

দিনের আলোতে শিশু অপহরণ, রাতে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি

প্রকাশের সময় : ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

সিলেটে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নগরজুড়ে। ফিল্মি কায়দায় প্রাইভেট কার থামিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে শিশুকে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের সাহসিকতায় শিশুটি উদ্ধার হলেও পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা।

ঘটনাটি ঘটে ১৮ নভেম্বর দুপুরে শহরের নবাব রোডে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, আগে থেকেই অবস্থানে থাকা একটি দল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করছিল। গাড়িটি সামনে আসতেই চারজন অস্ত্র উঁচিয়ে সেটি থামায়। শিশু লাবিবকে গাড়ি থেকে টেনে নেওয়ার পর অল্প দূর গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের ধাওয়া করে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

গাড়িচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, অস্ত্রধারীরা গাড়ির সামনে কোপাতে থাকে। প্রাণ হাতে নিয়ে তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে জোর করে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় অপহরণকারীরা। গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির চালক স্বপন আহমেদ দাবি করেন, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কেবল ভাড়ায় গাড়ি চালাতে গিয়েই তিনি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এরকম দৃশ্য আমরা কখনো দেখিনি। দিনে দুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে শিশু অপহরণ এটা সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর। সবার নিরাপত্তা নিয়েই এখন শঙ্কা।

ব্যবসায়ী পরিবারের অভিযোগ, বাসা রঙের কাজ করতে গিয়ে চক্রের সদস্যরা তাদের শিশুকে টার্গেট করে। মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে তারা অপহরণ করে বলে জানান শিশুটির বাবা ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পরও চক্রটি মুঠোফোনে ৫ লাখ টাকা দাবি করে এবং পুলিশি সহায়তা না নিতে হুমকি দেয়।

একই দিনে রাতে শহরের সোবহানিঘাট এলাকায় আরেক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হরিপুর এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। চাওয়া হয় ৪ লাখ টাকা। পরে পরিচিত আরেক ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, হরিপুর এলাকার একটি চক্র নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছে।

এসব ঘটনায় নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সিলেটবাসী। মদিনা মার্কেট এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, আমার মাদ্রাসার একজন ছাত্রও অপহরণের শিকার হয়েছে। বাচ্চাদের মনে ভয় ঢুকে যাচ্ছে। নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্ন।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এসব চক্র ধরতে সাড়াশি অভিযান চলছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সর্বশেষ ঘটনায়ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সিলেট নগরীতে ছিনতাইয়ের ৩০টি এবং নারী শিশু অপহরণের ১১টি মামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

সিলেটে বাড়তে থাকা এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।