সিলেট নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ বিরোধের জেরে খুন হয়েছে খাসদবির উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহ মাহমুদুল হাসান তপু (১৩)। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার পর ইলাশকান্দির বাড়ির সামনে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জাহিদ হাসানসহ তিন কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত তপু চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিরোধের সূত্র: ‘সিনিয়র–জুনিয়র’ নিয়ে মনোমালিন্য
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তপু ও জাহিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ‘সিনিয়র–জুনিয়র’ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। সময়ের সঙ্গে বিরোধ বাড়তে থাকে এবং তাদের অনুসারী কিশোরদের নিয়ে এলাকা দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিরোধ ‘মেটাতে’ জাহিদসহ কয়েকজন তপুর বাড়িতে যায়। সেখানেই আলোচনা চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে সেটি মারামারিতে রূপ নেয়।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের সময় জাহিদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তপুকে ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, কিশোরদের গ্রুপভিত্তিক আধিপত্য আর সিনিয়র–জুনিয়র নিয়ে তুচ্ছ দ্বন্দ্বই শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
আটক ও তদন্তের অগ্রগতি
পুলিশের অভিযানে জাহিদসহ তিন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা সকলে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি কোনো বড় গ্রুপ বা সিন্ডিকেট এ ঘটনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে।
শোক ও ক্ষোভে পরিবার–পাড়া
হঠাৎ তপুর মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবার বলছে, তপু মেধাবী ও ভদ্র ছেলে ছিল; কোনো ধরনের গ্যাং কর্মকাণ্ডে সে জড়িত ছিল না। তাঁরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরে কিশোর গ্যাং কার্যক্রম দিন দিন বেড়ে চলেছে। তারা দ্রুত এসব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর ভূমিকার দাবি জানিয়েছে।

জুনেদ আহমদ 



















