, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেটের বিশ্বনাথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ চাচা গ্রেপ্তার বর্ণাঢ্য আয়োজনে সিলেট প্রেসক্লাব মেম্বারস ফ্যামিলি ডে উদযাপন মৌলভীবাজারে বাছুরসহ গাভি চুরি, বিধবার চোখে নেই শান্তি সিলেটে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের দুই নেতা গ্রেফতার সিলেটের ওসমানীনগরে সিএনজি চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী অন্যের সিলেটে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ বিস্ফোরক উদ্ধার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পদায়নের আগেই হুমকির মুখে নতুন ইউএনও শাখী ছেপ বিশ্বনাথে জেন্ডার সচেতনা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দিরাইয়ে প্রশাসনের অভিযানে হকারমুক্ত ফুটপাত

রেড জোনে সিলেট: বড় ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে ৮০% বহুতল ভবন

  • জুনেদ আহমদ
  • প্রকাশের সময় : ১২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫২ পড়া হয়েছে

ভূমিকম্পঝুঁকিতে দেশের সবচেয়ে অরক্ষিত এলাকার একটি—সিলেট। ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় ডাউকি ফল্টের ঠিক ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যার বড় অংশই রয়েছে ‘রেড জোনে’। তবু দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমানের জরিপ, সতর্কীকরণ কেন্দ্র বা ঝুঁকি মোকাবিলার কার্যকর ব্যবস্থা কোনোটিই নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সীমিত জরিপে যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা বিশেষজ্ঞদেরও আতঙ্কিত করছে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগ অত্যন্ত নগণ্য। সিলেট নগরীর হাজারো বাসিন্দা এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

ফাইলবন্দি মাস্টারপ্ল্যান, আইনের তোয়াক্কা নেই ভবন মালিকদের

২০১১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করলেও তা আজও ফাইলবন্দি এক কাগজপত্র। ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ফায়ার সার্ভিস–সনদ নেই অধিকাংশ ভবনেই। এমনকি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব বহুতলা ভবনেরও নেই বাধ্যতামূলক অনুমোদনপত্র।

ভূমিকম্পের ইতিহাস ভয়ংকর

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প তৎকালীন সিলেট-আসাম অঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষতি করেছিল। নদীর গতিপথ পাল্টে যায়, টিলার ভূপ্রকৃতি বদলে যায়। ১৯৮০ সালেও বড় ধরনের কম্পনে কেঁপেছিল সিলেট। ২০২১ সালে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সাতবার ভূমিকম্পের পর জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত দুই বছরে অন্তত ১৫ বারের বেশি ভূকম্পন হয়েছে, যার বেশির ভাগই ডাউকি ও কপিলি ফল্টের সক্রিয়তার লক্ষণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হলেও নেই ব্যবস্থা

২০২১ সালে বিশেষ জরিপে সিলেট নগরীর কয়েকটি বিপণিবিতানসহ ২৫টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সাতটি মার্কেট ১০ দিনের জন্য বন্ধও রাখা হয়।
কিন্তু এখন সেই বিপণিবিতানগুলো রং-রোগান করে আগের চেয়ে আরও জমজমাটভাবে চলছে ব্যবসা। তালিকা করা হলেও ৪২ হাজার বহুতলা ভবনের কাঠামোগত পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি। সিসিকের দাবি—অর্থাভাবই প্রধান বাধা।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, সিলেট, শাহজিবাজার ও মধুপুর সব জায়গায় সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। দ্রুত সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রয়োজন। নতুন ভবনের নকশায় চাতুরতা দেখানো হয়, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গবেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল ডাউকি ফল্টেই। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৮০% বহুতলা ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উদ্ধার অভিযানেও হবে বড় বাধা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও নতুন অপরিকল্পিত ভবন—দুটোই সিলেটকে বড় বিপদের মুখে ফেলেছে। সরু রাস্তার কারণে বড় ধরনের দুর্যোগে উদ্ধার কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

সিসিকের দাবি—উদ্যোগ চলছে

সিসিকের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার জানান, পূর্বের জরিপ ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নতুন করে ভবন তদারকি ও অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মোট চিত্র—অপ্রস্তুত সিলেট, বাড়ছে উদ্বেগ

ঘন ঘন মৃদু ভূকম্পন বড় ধাক্কার আগাম ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সিলেট ছাড়িয়ে ঢাকাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে— ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেট কি কোনো প্রস্তুতি নিয়েই বড় বিপর্যয়ের অপেক্ষায় আছে?

জনপ্রিয়

সিলেটের বিশ্বনাথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ চাচা গ্রেপ্তার

রেড জোনে সিলেট: বড় ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে ৮০% বহুতল ভবন

প্রকাশের সময় : ১২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পঝুঁকিতে দেশের সবচেয়ে অরক্ষিত এলাকার একটি—সিলেট। ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় ডাউকি ফল্টের ঠিক ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যার বড় অংশই রয়েছে ‘রেড জোনে’। তবু দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমানের জরিপ, সতর্কীকরণ কেন্দ্র বা ঝুঁকি মোকাবিলার কার্যকর ব্যবস্থা কোনোটিই নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সীমিত জরিপে যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা বিশেষজ্ঞদেরও আতঙ্কিত করছে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগ অত্যন্ত নগণ্য। সিলেট নগরীর হাজারো বাসিন্দা এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

ফাইলবন্দি মাস্টারপ্ল্যান, আইনের তোয়াক্কা নেই ভবন মালিকদের

২০১১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করলেও তা আজও ফাইলবন্দি এক কাগজপত্র। ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ফায়ার সার্ভিস–সনদ নেই অধিকাংশ ভবনেই। এমনকি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব বহুতলা ভবনেরও নেই বাধ্যতামূলক অনুমোদনপত্র।

ভূমিকম্পের ইতিহাস ভয়ংকর

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প তৎকালীন সিলেট-আসাম অঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষতি করেছিল। নদীর গতিপথ পাল্টে যায়, টিলার ভূপ্রকৃতি বদলে যায়। ১৯৮০ সালেও বড় ধরনের কম্পনে কেঁপেছিল সিলেট। ২০২১ সালে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সাতবার ভূমিকম্পের পর জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত দুই বছরে অন্তত ১৫ বারের বেশি ভূকম্পন হয়েছে, যার বেশির ভাগই ডাউকি ও কপিলি ফল্টের সক্রিয়তার লক্ষণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হলেও নেই ব্যবস্থা

২০২১ সালে বিশেষ জরিপে সিলেট নগরীর কয়েকটি বিপণিবিতানসহ ২৫টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সাতটি মার্কেট ১০ দিনের জন্য বন্ধও রাখা হয়।
কিন্তু এখন সেই বিপণিবিতানগুলো রং-রোগান করে আগের চেয়ে আরও জমজমাটভাবে চলছে ব্যবসা। তালিকা করা হলেও ৪২ হাজার বহুতলা ভবনের কাঠামোগত পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি। সিসিকের দাবি—অর্থাভাবই প্রধান বাধা।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, সিলেট, শাহজিবাজার ও মধুপুর সব জায়গায় সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। দ্রুত সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রয়োজন। নতুন ভবনের নকশায় চাতুরতা দেখানো হয়, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গবেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল ডাউকি ফল্টেই। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৮০% বহুতলা ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উদ্ধার অভিযানেও হবে বড় বাধা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও নতুন অপরিকল্পিত ভবন—দুটোই সিলেটকে বড় বিপদের মুখে ফেলেছে। সরু রাস্তার কারণে বড় ধরনের দুর্যোগে উদ্ধার কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

সিসিকের দাবি—উদ্যোগ চলছে

সিসিকের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার জানান, পূর্বের জরিপ ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নতুন করে ভবন তদারকি ও অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মোট চিত্র—অপ্রস্তুত সিলেট, বাড়ছে উদ্বেগ

ঘন ঘন মৃদু ভূকম্পন বড় ধাক্কার আগাম ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সিলেট ছাড়িয়ে ঢাকাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে— ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেট কি কোনো প্রস্তুতি নিয়েই বড় বিপর্যয়ের অপেক্ষায় আছে?