সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মূলত সুরঞ্জিত নাছির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের আসন হিসেবে পরিচিত। একজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অন্যজন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির চৌধুরী। বর্তমানে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মাঠে নেই, এছাড়াও আওয়ামী লীগের সক্রিয় উপস্থিতি নেই। এই প্রেক্ষাপটে আসনটি কেন্দ্রে এসেছে রাজনৈতিক নজরে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দিরাই-শাল্লায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের নীতিনির্ধারক মহলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
নাছির-সুরঞ্জিত আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী (পাবেল), যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুল মাজিদ তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা শোয়াইব আহমদ, জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)র প্রার্থী অনিক রায়।
দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি সারা দেশের বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলে ও এ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি, ফলে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর কেন্দ্রের এবং স্হানীয় ভাবে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে বিএনপি থেকে বারবার মনোনয়নপ্রাপ্ত হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী এলাকায় বিশাল সমর্থন ও নেতাকর্মীর সংখ্যা বজায় রেখেছেন।
তিনি দুইবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে দিরাই-শাল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অর্জিত বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে তিনি জনপ্রিয়। অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক মাঠে অনিয়মিত থাকলেও সম্প্রতি তিনি দিরাই ও শাল্লায় নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করেছেন।
নাছির চৌধুরী বলেন, “২০০১ সালে বিএনপিতে যোগদানের পর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করি। হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে। তবে এবার দিরাই-শাল্লা আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী হবে। আমি দিরাই-শাল্লার মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই।”
এছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট পাবেল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সক্রিয় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তালিকায় ছিলেন। অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ এবং সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুল মাজিদ তাহের। তারা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর পাশে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে আসছেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীও এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী এই আসনে তাদের প্রার্থী হিসেবে ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারী এডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনিরকে ঘোষণা করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করে আসছেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তার ব্যতিক্রমী নির্বাচনী কার্যক্রম ভোটারদের নজর কাড়ছে। প্রবীনদের আসনে নবীন প্রার্থী শিশির মনির ইতিমধ্যে গোটা আসন জুড়ে নিজেকে এক ভিন্ন রুপে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় এই আসনে নির্বাচন করবেন বলে দল থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনো তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও তাদের যুগ্ম মহাসচিব ড. মাওলানা শোয়াইব আহমদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সঙ্গে পরিচিত তিনি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন।
তবে দিরাই-শাল্লার নেতাকর্মীদের দাবি, এই আসনে যেন দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। গুঞ্জন রয়েছে যে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেন বা দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র যুক্তরাজ্য প্রবাসী আজিজুর রহমান বুলবুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ।
এমতাবস্থায় জামায়াতে ইসলামের হেভিওয়েট প্রার্থী এডভোকেট শিশির মনিরকে পাল্লা দিতে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন,
এ নিয়ে গোটা নির্বাচনী এলাকাজুড়ে চলছে আলোচনা। যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক শিশির মনিরকে নিয়েই এ আসনের নির্বাচনী মাঠে তাকেই খেলতে হবে এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 



















