সিলেট বিভাগে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই আক্রান্ত বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধু ১ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনে নতুন করে ৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০১ জনে।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব বলছে, এ বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন একজন—গত ৮ অক্টোবর সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে নতুন করে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলাতেই সর্বোচ্চ আক্রান্ত।
চলতি বছরে সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি মিলেছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত—হবিগঞ্জ: ২১৭ জন, সিলেট: ৭২ জন, সুনামগঞ্জ: ৫৭ জন, মৌলভীবাজার: ৫৫ জন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুম পরিবর্তন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি থাকায় এ সময় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। তাই আক্রান্ত বাড়ছে বিভিন্ন এলাকায়।
বর্তমানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ১০ জন,জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ: ৪ জন, হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল: ৫ জন, লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ৫ জন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার বিস্তার রোধে নগর ও উপজেলা পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা জরুরি। পাশাপাশি যেকোনো জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য, ডেঙ্গু ধরন বদলেছে। এখন রোগীদের মধ্যে জটিল উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এজন্য সিলেটের রোগীদের চিকিৎসার জন্য পোর্টেবল আলট্রাসনোগ্রাম ও বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এই যন্ত্রপাতি থাকলে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। এ ছাড়া এটি চিকিৎসা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সাহায্য করবে।
গত দুই দশকে বৃষ্টির সময় অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট মাসে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হতো। তবে চার বছর ধরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছে অক্টোবর মাসে। বিশেষজ্ঞরা নভেম্বর মাসকে ডেঙ্গুর প্রাণঘাতী মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, আক্রান্তদের বেশির ভাগ সম্প্রতি ঢাকায় যাওয়া-আসা করেছেন। ঢাকার পার্শ্ববর্তী হওয়ায় হবিগঞ্জ জেলায় রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তিনি জানান, সিলেটের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন।

নিজস্ব প্রতিবেদক 



















