রাজশাহীতে বিচারকপুত্র হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়েছিল সিলেটেই। সেখানকার একের পর এক ঘটনা, অভিযোগ ও জিডি সময়সময়ে যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঘটে গেল ভয়াবহ পরিণতি।
জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মবশ্বির আলী জানান, হত্যার প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত সেনাসদস্য ইমন ওরফে লিমন দীর্ঘদিন ধরে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীকে অনুসরণ ও বিরক্ত করে আসছিলেন। আর্থিক অনটনের কথা বলে সাহায্য নিতেন, পরে সাহায্য না পেলে ব্ল্যাকমেইল ও হুমকি দিতে শুরু করেন। বিচারকের স্ত্রী সিলেটে এলে লিমনও সেখানে গিয়ে পথে-ঘাটে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন।
গত ৪ নভেম্বর সিলেট নগরীর আম্বরখানায় বিচারকের স্ত্রীকে প্রকাশ্যে হেনস্থা করে লিমন। এর পরদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচারকের কন্যা তাদের সহপাঠী হওয়ায় লিমন দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে গিয়ে ঝামেলা করত, নয়া বাজারের বাসায় গিয়েও বিরক্ত করত।
তবে ওই ঘটনায় মামলা করতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ লিমনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে পাঠায়। পরে জামিনে বের হয়ে সিলেট ছাড়েন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই লিমন চলে যান রাজশাহীতে—এবং সেখানেই ঘটে বিচারকপুত্রকে হত্যার ঘটনা।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একজন শিক্ষার্থী জানান, মেডিটেশন কোর্স করার সময় লিমনের সঙ্গে বিচারকের স্ত্রীর পরিচয় হয়। শুরুতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা দেখা গেলেও, পরবর্তীতে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে—যেখানে লিমনের দাবি, হুমকি ও আর্থিক চাপ আরও বৃদ্ধি পায়।
জিডিতে বিচারকের স্ত্রী উল্লেখ করেন, লিমন নিয়মিত অর্থ চাইতেন এবং অস্বীকৃতি জানালে মোবাইলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার হুমকি দিতেন। তার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারেও ভয়ভীতি দেখানো হয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন—যেকোনো সময় লিমন তার পরিবারকে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
সিলেটে এসব অভিযোগ, উত্ত্যক্ততা, আটক ও জিডির পরও ঘটনাগুলো গুরুত্ব সহকারে থামানো না গেলে, সে ফাঁকফোকর দিয়েই রাজশাহীতে ঘটে যায় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড।
বর্তমানে লিমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিলেটের উপেক্ষিত ঘটনাগুলো কীভাবে রাজশাহীর হত্যাকাণ্ডে রূপ নিল—এ নিয়ে চলছে গভীর তদন্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদক 



















