, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেট সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারিরা: আসছে অস্ত্র, নির্বাচনে অশনি সংকেত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট অঞ্চলে নাশকতা ও অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা বাড়ছে। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে তফশিল ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার সময়ই সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই। সম্প্রতি ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব উদ্বেগ উঠে আসে। বৈঠকে নাশকতা প্রতিরোধ ও সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্তসহ ২২টি সুপারিশ গৃহীত হয়। ওই কার্যবিবরণী ইতোমধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, জাতীয় নির্বাচনের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ভোটিং কার্যক্রম নিয়েও নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্রের জোগান বাড়তে পারে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে; তিনদিক ঘিরে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য। সীমান্তবর্তী এসব অঞ্চলে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা এবং তাদের সঙ্গে জড়িত অস্ত্র ব্যবসার নেটওয়ার্ক নিয়ে গোয়েন্দা মহলে আগে থেকেই সতর্কতা রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সুনামগঞ্জ সীমান্তপথ দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ছোট ছোট চালান দেশে ঢুকছে। অতীতে আটককৃত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের জবানিতেও এই তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদারে অভিযান অব্যাহত আছে। অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের আটক অভিযান চলছে, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

র‌্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) কে. এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে র‌্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে, পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০-২৫ টি অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালানের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো রুট চিহ্নিত করা। এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কোন রুট ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন। আমরা সব সময় নাশকতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে সিলেট মহানগরের কয়েকটি থানায় হামলার সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছিল। পুলিশের হিসাবে ওই সময় ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি লুট হয়, যার একটি অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এসব অস্ত্র নির্বাচন ঘিরে পুনরায় ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকায়ও অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। ২ নভেম্বর ছাতক উপজেলার ছনবাড়ী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও একটি বিদেশি রিভলভার উদ্ধার করেছে বলে জানায়। আগেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষ করে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে নাইন এমএম পিস্তল ও রিভলভার ঢোকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাছাড়া র‌্যাব গত কয়েক মাসে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ঝোপঝাড়, এমনকি স্কুলের পাশ থেকেও অস্ত্র উদ্ধারের নজির তৈরি হয়েছে, যা নির্বাচনের আগে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।

প্রশাসনিক সূত্র বলছে, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় সশস্ত্র চক্র বা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মিশে যেতে পারে। এতে প্রার্থী, নেতা-কর্মী এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়িয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, আসন্ন নির্বাচনে গুজব, অস্ত্র ও সাইবার হামলার মতো ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উভয়েই বলছে, নির্বাচনের সময় যে কোনো ধরনের নাশকতা বা অস্থিরতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। এজন্য চেকপোস্ট বসানো ও নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, “অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীরা শুধু নির্বাচন নয়, পুরো সমাজের জন্যই হুমকি। নির্বাচনপূর্ব বিশেষ অভিযান এখনই জরুরি।”

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, “থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। আগে যেসব প্রকাশ্য অস্ত্র মহড়া হয়েছে, তারও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এতে প্রশাসনের ব্যর্থতাই প্রমাণিত।”

র‌্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে অস্ত্র বিক্রেতা চক্র। দীর্ঘ গোয়েন্দা তৎপরতার পর কয়েকজন অনলাইন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বশেষ সতর্কতায় বলা হয়েছে—যদি সীমান্তপথে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশ ঠেকানো না যায়, তবে নির্বাচনের আগে সিলেটই হতে পারে নতুন অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু। ফলে এ নিয়ে সংশয় সন্দেহের শেষ নেই।

জনপ্রিয়

সিলেট সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারিরা: আসছে অস্ত্র, নির্বাচনে অশনি সংকেত

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট অঞ্চলে নাশকতা ও অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা বাড়ছে। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে তফশিল ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার সময়ই সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই। সম্প্রতি ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব উদ্বেগ উঠে আসে। বৈঠকে নাশকতা প্রতিরোধ ও সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্তসহ ২২টি সুপারিশ গৃহীত হয়। ওই কার্যবিবরণী ইতোমধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, জাতীয় নির্বাচনের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ভোটিং কার্যক্রম নিয়েও নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্রের জোগান বাড়তে পারে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে; তিনদিক ঘিরে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য। সীমান্তবর্তী এসব অঞ্চলে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা এবং তাদের সঙ্গে জড়িত অস্ত্র ব্যবসার নেটওয়ার্ক নিয়ে গোয়েন্দা মহলে আগে থেকেই সতর্কতা রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সুনামগঞ্জ সীমান্তপথ দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ছোট ছোট চালান দেশে ঢুকছে। অতীতে আটককৃত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের জবানিতেও এই তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদারে অভিযান অব্যাহত আছে। অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের আটক অভিযান চলছে, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

র‌্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) কে. এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে র‌্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে, পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০-২৫ টি অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালানের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো রুট চিহ্নিত করা। এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কোন রুট ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন। আমরা সব সময় নাশকতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে সিলেট মহানগরের কয়েকটি থানায় হামলার সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছিল। পুলিশের হিসাবে ওই সময় ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি লুট হয়, যার একটি অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এসব অস্ত্র নির্বাচন ঘিরে পুনরায় ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকায়ও অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। ২ নভেম্বর ছাতক উপজেলার ছনবাড়ী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও একটি বিদেশি রিভলভার উদ্ধার করেছে বলে জানায়। আগেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষ করে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে নাইন এমএম পিস্তল ও রিভলভার ঢোকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাছাড়া র‌্যাব গত কয়েক মাসে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ঝোপঝাড়, এমনকি স্কুলের পাশ থেকেও অস্ত্র উদ্ধারের নজির তৈরি হয়েছে, যা নির্বাচনের আগে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।

প্রশাসনিক সূত্র বলছে, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় সশস্ত্র চক্র বা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মিশে যেতে পারে। এতে প্রার্থী, নেতা-কর্মী এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়িয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, আসন্ন নির্বাচনে গুজব, অস্ত্র ও সাইবার হামলার মতো ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উভয়েই বলছে, নির্বাচনের সময় যে কোনো ধরনের নাশকতা বা অস্থিরতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। এজন্য চেকপোস্ট বসানো ও নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, “অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীরা শুধু নির্বাচন নয়, পুরো সমাজের জন্যই হুমকি। নির্বাচনপূর্ব বিশেষ অভিযান এখনই জরুরি।”

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, “থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। আগে যেসব প্রকাশ্য অস্ত্র মহড়া হয়েছে, তারও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এতে প্রশাসনের ব্যর্থতাই প্রমাণিত।”

র‌্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে অস্ত্র বিক্রেতা চক্র। দীর্ঘ গোয়েন্দা তৎপরতার পর কয়েকজন অনলাইন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বশেষ সতর্কতায় বলা হয়েছে—যদি সীমান্তপথে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশ ঠেকানো না যায়, তবে নির্বাচনের আগে সিলেটই হতে পারে নতুন অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু। ফলে এ নিয়ে সংশয় সন্দেহের শেষ নেই।