সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ফলাফল বলছে পর্যটন ও খনিজ সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। গেল ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ বার বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই ঘাঁটি দখলে চোখ ফেলেছে বিএনপি ও জামায়াত।পাশাপাশি কয়েকটি ইসলামী দলের প্রার্থীরাও সরব রয়েছেন আসনটিতে। জামায়াত, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আন্দোলন একক প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে তৎপর রয়েছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি করেছে। এই আসনটিতে দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন মর্মে প্রচার করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রেসব্রিফিং, সংববাদ বিজ্ঞপ্তি এমনকি দলের ভেরিফাইড করা স্যোসাল মিডিয়ার পেইজ থেকেও এমন তথ্য জানানো হয়নি। এতে এই আসনটিতে দীর্ঘ দিন থেকে কাজ করে আসা মনোনয়ন প্রত্যাশীরাসহ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।
সিলেট-৪ আসনে এবার দলীয় প্রার্থী মনোনীত করেছে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনকে। প্রায় তিন দশকে আসনটিতে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে শক্ত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী জয়নাল আবেদিন প্রায় এক বছর যাবত মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিন উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিটি ঘরে ঘরে ভোটের আওয়াজ পৌঁছে দিয়েছে।
১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির নাজিম কামরান চৌধুরী। পরে ১৯৯৬ সালে এম. সাইফুর রহমানের হাত ধরে আসনটি পুণরুদ্ধার করেছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন সাইফুর রহমান। ৭ম সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসনে বিজয়ী হওয়ায় আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। এরপর উপনির্বাচনে আসনটি ফের আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। আর সর্বশেষ আসনটি থেকে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী হয়েছিল ২০০১ সালে।
এবার আসনটি পুণরুদ্ধারে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগরের সাবেক সেক্রেটারি বদরুজ্জামান সেলিম,জেলা বিএপির সাবেক সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী,জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন,
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা আবদুল হক।
সিলেট-৪ আসনে ধর্মভীরু আলেম ভক্তদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। এই ভোট ব্যাংকে চোখ রেখে খেলাফত মজলিস সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আলী হাসান উসামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, ইসলামী ঐক্যজোট মাওলানা নাজিম উদ্দিন কামরান ও ইসলামী আন্দোলন সাঈদ আহমদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে সিলেট-৪ আসনের কোনো প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের হাইকমান্ড এখনো কয়েকটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। আরিফুল হক চৌধুরীর নাম আলোচনায় থাকলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়নি। গণমাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ গুজব।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ জিকে গউস বলেন, আমার কাছে এখনো এরকম কোন লিখিত বা মৌখিক নির্দেশনা আসেনি। এমনটি এই বিষয়ে আমি অবগতও নই।

নিজস্ব প্রতিবেদক 



















