সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের জেলা কার্যালয় থেকে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার সকালে নগরীর আম্বরখানায় এলাকার কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শনিবার ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকরা নগরে কর্মসূচি করতে চেয়েছিল। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
তবে বাসদ নেতারা বলছেন, নিয়মিত পাঠচক্র চলাকালে বাসদ কার্যালয় ঘেরাও করে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
বাসদ সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার নগরের চৌহাট্টা থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত ‘ভূখা মিছিল’ কর্মসূচি ছিল। শুক্রবার রাতে পুলিশ এ কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি।
কিন্তু রাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা সকল শ্রমিককে বিষয়টি অবহিত করতে পারিনি। তাই আজ (শনিবার) সকালে শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন জড়ো হন।
তবে তাদের কেউ নিজেদের কার্যালয়ে ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, “কার্যালয়ে আমাদের নিয়মিত পাঠচক্র চলছিল। সেখানে আচমকা অভিযান চালিয়ে পুরো অফিস ঘেরাও করে ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে একই ইস্যুতে শুক্রবার মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া কালীবাড়ি এলাকার বাসা থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনোয়ার হোসেন সুমনকে আটক করে পুলিশ।
আনোয়ার হোসেন সুমনকে পুরনো দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চালকদের আন্দোলনের নামে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের গেইট ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনায় সুমনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে।
দ্রুত বিচার আইনের এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। পুলিশ তাকে আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করবে।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এ অভিযানে বহু রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা।
তারা ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি জানান।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন সুমনসহ কয়েকজন মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দাবি আদায়ে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শ্রমিকরা।
এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রোববার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাতের আশঙ্কায় ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের রোববারের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

প্রতিদিনের সিলেট ডেস্ক 



















