গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। ভারী বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল থামেনি। ফলে নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। জেলার প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপরে।
এদিকে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম ও রাস্তা এখনো প্লাবিত। সোমবার জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের বাজার প্লাবিত হয়।
আজ মঙ্গলবার (০৩ জুন) ভোরে পানি পুরোপুরি নেমে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন সূত্র।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে আগের দিনের মতো পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপরে।
কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৬৯ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৪ মিটার ওপরে। অমলশিদ পয়েন্টে ১৭ দশমিক ৩৬ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯৬ মিটার ওপরে। শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫২ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৭ মিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯ দশমিক ৯৮ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫৩ মিটার ওপরে। এ চারটি পয়েন্টেই গতকালের চেয়ে আজ পানি বেড়েছে।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ছাড়াও জেলার ধলাই, লোভা, সারি ও ডাউকি নদ-নদের পানি বেড়েছে। কেবল সারি-গোয়াইন নদের পানি গতকালের চেয়ে কিছুটা কমেছে আজ।
প্রশাসন ও এলাকার বাসিন্দাদের তথ্য মতে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও ওসমানীনগর উপজেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেকেই পানিবন্দী। এতে বন্যাকবলিত মানুষজন চরম দুর্ভোগে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, কত মানুষ পানিবন্দী, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুটি পরিবারের মোট ৯ জন ঠাঁই নিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে
সব ধরনের ব্যবস্থা।
এদিকে, সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘সিলেটে বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে এলেও ভারত থেকে সীমান্তবর্তী নদ-নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল আসা অব্যাহত আছে। ভারতের আসাম ও শিলচরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, এতে বেয়ে আসছে সিলেট অভিমুখে পানির ঢল।
ফলে বৃষ্টি কমলেও পানি বাড়ছে। এ ছাড়া ভাটিতেও পানি দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। তাই নতুন করে বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে বলে আমাদের ধারণা।‘