জমি জমার বিরোধে সিলেটে ঘটেছিল একটি হত্যাকান্ড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘাতক আপন চার ভাই ও দুই ভাবী। প্রবাসী মাসুক মিয়া কষ্টার্জিত অর্থ জমি কেনার জন্য দিয়েছিলেন ভাইদের হাতে। কিন্তু জমি কিনে নেয় তার নিজেই।
দেশে এসে ক্রয়কৃত জমি নিজ নামে ফেরত নিতে চাইলে বিগড়ে যায় আত্নসাৎকারী ভাইরা। তারপর পরিকল্পিত ভাবে নিজের ভাই মাসুক মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। এ ঘটনায় সিলেট ওসমানীনগর থানায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে আজ হত্যাকান্ডে জড়িত চার ভাইসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। আজ সোমবার এ রায় দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সোহেল রানা নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিহত মাসুকের ভাই শেখ আলফু মিয়া (৪১), শেখ পংকী মিয়া (৪৩), শেখ তোতা মিয়া (৫৭), শেখ আব্দুর রব ওরফে লেবু মিয়া (৬৩), শেখ পংকী মিয়ার স্ত্রী লাভলী বেগম, লেবু মিয়ার শেখ আনোয়ারা বেগম (৪৮), একই গ্রামের মৃত আখলাছ আলীর পূত্র ফখর উদ্দিন ওরফে অহর (৪৬) ও গ্রামতলা দাসপাড়া গ্রামের আলা উদ্দিনের পূত্র হেলাল উদ্দিন ওরফে দিপু মিয়া (৪৩)। তাদের মধ্যে দিপু মিয়া ছাড়া সবাই রায় ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন আদালতে ।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৩ জুন খুন হন মাসুক মিয়া। তিনি ওসমানীনগর উপজেলার ফতেহপুর গুপ্তপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মদরিছ আলীর পূত্র। ওই দিন বিকেল ৩টায় বাড়ি থেকে গোয়ালাবাজার যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলন তিনি। সন্ধ্যায় বাড়ি না ফেরায় তার স্ত্রী মুঠোফোনে কল করেন তাকে। প্রথমে কল ঢুকলেও পরে তা বন্ধ দেখায়। পরের দিন ওসমানীনগরের দাসপাড়া গফুর মিয়ার বাড়ির পাশে ধানক্ষেত থেকে মাসুক মিয়ার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।
মরদেহ শনাক্তে মাইকিং করা হয় এলাকায়। সেই সংবাদ পেয়ে নিহতের ভাই আলফু ও শেখ তোতা ঘটনাস্থলে যান এবং শনাক্ত করেন নিজ ভাইয়ের লাশ। এ ঘটনায় আলফু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে থানায় দায়ের করেন মামলা। কিন্তু মামলার তদন্ত করতে গিয়ে থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ এসএম মাঈন উদ্দিন হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করেন নিহতের ভাই আলফু, পংকী ও তোতাকে । পরে থানার এসআই মমিনুল বাদী হয়ে দায়ের করেন এ ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্তি পিপি আল আসলাম মুমিন জানান, প্রবাসে থাকতে ভাইদের কাছে টাকা পাঠাতেন শেখ মাসুক মিয়া। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে নিজেদের নামে জমি কেনেন ভাইয়েরা। দেশে ফিরে পাঠানো টাকায় কেনা জমি তার নামে লিখে দিতে বললে শুরু হয় বিরোধ। সেই বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে চার ভাই দুই ভাবি মিলে হত্যা করে তাকে।