অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের গ্রহণযোগ্যতা দুই ভিন্ন প্রজন্মের দুই রাজনীতিবিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে সুনামগঞ্জ–২ আসনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উত্তাপ। মূল লড়াইয়ের শুরুতেই নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও শিশির মনিরকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় তীব্র আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে শুরু হওয়া সরব উপস্থিতি নেমে এসেছে স্থানীয় হাট–বাজারেও। চলছে দুই প্রার্থীর ভোটের অঙ্ক কষা।
সোমবার রাতে দলীয় এক নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় জামায়াতপ্রার্থী শিশির মনিরকে ‘রাজাকারের সন্তান’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নাসির উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর মতে, শিশিরকে অন্যরা যেভাবে দেখেন, তাঁর পক্ষে সেভাবে দেখা সম্ভব না। কারণ শিশির রাজাকারের ছেলে। আর তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
এর কয়েক ঘণ্টা পর শিশির মনিরের মিডিয়া সেল থেকে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অভিনন্দন এবং শারীরিক সুস্থতা কামনা। ভিডিওতে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হলেও কোনো অপ্রীতিকর মন্তব্য বা অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়। তিনি নাসির উদ্দিনকে সম্মান করেন এবং তা বজায় রাখতে চান।
এদিকে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে কথার যুদ্ধে মেতে ওঠায় নির্বাচনী উত্তাপ আরও বেড়েছে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে তর্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।
নির্বাচনী উত্তাপ কতটা বাড়তে পারে এ প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, যিনি শুরু করেছেন, তিনিই ভালো জানেন। ভোটের উত্তাপ থাকবে, তবে তা সৌহার্দ্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
অন্যদিকে নাসির উদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য, চারবার এমপি ও দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় তিনি কখনো পরিবেশ নষ্টের রাজনীতি করেননি। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই প্রচারে আছেন।
ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন চৌধুরী এই আসন থেকে রেকর্ডসংখ্যকবার এমপি নির্বাচিত হন। এমনকি ১৯৯৬ সালে মাত্র ৫০৪ ভোটে পরাজিত করেছিলেন প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে।
অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির ঢাকা মহানগর (উত্তর) জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তারুণ্য ও সংগঠনশক্তি নিয়েই তিনি এবার মাঠে।
দুই প্রার্থীর এই দ্বন্দ্ব, ইতিহাস–বিতর্ক এবং সমর্থকদের উত্তেজনায় সুনামগঞ্জ–২ আসনের নির্বাচনী মাঠ এখন আগুনের মতো তপ্ত। স্থানীয়রা অপেক্ষায়—অভিজ্ঞতা জিতবে, নাকি তারুণ্যের গ্রহণযোগ্যতা।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 



















