সিলেটের ওসমানীনগরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেনের উন্নয়ন কাজের সুযোগে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মহাসড়কের দু’পাশে মাটির নিচে স্থাপিত টেলিফোনের সরকারি সিসি ক্যাবল চুরি কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড বিটিসিএল। জনসাধারণের নজর এড়িয়ে মাটির নিচে স্থাপিত টেলিফোনের ক্যাবল রাতের অন্ধকারে উত্তোলনের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ দুই দফায় ৫ ব্যক্তিকে আটক ও কপার কেবল চুরির সরঞ্জাম উদ্ধার করলেও থামছেনা তাদের দৌরাত্ম্য। এতে সরকার কোটি-কোটি টাকার রাজ স্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে সিন্ডিকেট চক্রের ক্ষমতায়ন নিয়ে। দাবি উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের।
এলাকাবাসী, বিটিসিএল ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট- ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। উপজেলার শেরপুর অংশ থেকে নাজির বাজার এলাকা মহাসড়কের অধীনে থেকে বিটিসিএলের কয়েক হাজার মিটার ‘আন্ডার গ্রাউন্ড সরকারি কপার ক্যাবল’ দীর্ঘ দিন থেকে একটি চক্র চুরি করে আসছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গঠিত সিন্ডিকেট চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী। ফলে মহাসড়ক এলাকায় কোন অবস্থাতে ঠেকানো যাচ্ছেনা টেলিফোনের সরকারি কপার ক্যাবল চুরির ঘটনা।
সর্বশেষ চলতি মাসের ১৭ মার্চ উপজেলার তাজপুর বাজার প্যারাডাইজ মেডিক্যালে কেবল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র এক মধ্যস্থতার সভায় চুর সিন্ডিকেট চক্রের চার সদস্যকে স্থানীয় জনতা পুলিশে ধরে দিলেও সিন্ডিকেট চক্রের অপর সদস্য রায়হান আহমদকে রাজনৈতিক কিছু নেতা কৌশলে গ্রেফতার থেকে রক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- তাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর রাইকদাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে সামছুদ্দিন (২৭), একই গ্রামের কালাই মিয়ার ছেলে জোবায়ের হোসেন, উসমানপুর ইউনিয়নের থানাগাঁও মসজিদ পাড়া গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে রাজু আহমদ (২৬) একই গ্রামের মাঝপাড়ার বাবুল মিয়ার ছেলে মো. জাকারিয়া (২৬)।
তবে জনতার হাতে আটক ছাত্রদল নেতা জোবায়ের হোসেনকে ছাড়িয়ে নিতে কপার ক্যাবল চুর চক্রের অন্যতম হোতা দয়ামীর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম মনসুর চৌধরী থানায় অজ্ঞাত জায়গা থেকে নানাভাবে তদবির ও জোড় চেষ্টা করেছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দয়মীর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পায়েল আহমদ রায়হানসহ অন্তত আরও ২ জন কপার ক্যাবল চুরিতে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের আটকদের স্বীকারোক্তি রয়েছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমনটা জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসমানীনগরের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, জনসাধারণের নজর এড়িয়ে এই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি কপার ক্যাবল চুরির করে আসছিল। এলাকা ভিত্তিক তাদের একটি শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে এবং সেটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সিলেটের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক (ফোন্স-২) নাফি মো. কামুরল হক চৌধুরী ছাদিক জানান, এ বিষয়ে আমি মুঠোফোনে কথা বলতে আগ্রহী নয়। তিনি সিলেটের তালতলাস্ত অফিসে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে বলেন এই অভিযোগগুলো এভাবে বলা যাবেনা।
বিটিসিএলের কর্মকর্তা জানান, সরকারি টেলিফোনের কপার ক্যাবলের ভিতরে থাকা তামার মূল্য আকাশচুম্বী। তামার প্রতি কেজি সাড়ে ৬ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়। দুই মিটার ক্যাবলের মধ্যে কম করে ৪ থেকে ৫শ’ কেজি তামা রয়েছে। ৫শ’ কেজি তামার বর্তমান বাজার দাম ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কোন কোন ক্যাবলের ক্ষেত্রে দুইশ’ মিটার ক্যাবল থেকে তামার পরিমাণ আরও বেশি পাওয়া যায়। মাটির নিচে সাধারণত কেবলগুলো স্থাপন করা সেগুলোতে চার থেকে ছয় হাজার জোড়া তার থাকে। দুইশ’ মিটার তার কিনতে বিটিসিএলকে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। যখন কোন এলাকার ক্যাবল চুরি হলে প্রতিস্থাপন করতে আরও নতুনের চেয়ে বেশি খরচ পড়ে। তার জোড়া লাগাতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। জোড়া লাগালেও সব টেলিফোন সাবেক অবস্থায় ঠিক হয় না ।
বিটিসিএল আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করার সময় ২শ’ মিটার অন্তর-অন্তর জোড়া রাখে। কারণ কখনও যদি কোন এলাকায় টেলিফোনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্যাবল বদল বা মেরামত করা হয়। এ জন্য প্রতিটি জোড়ার মাথা একটি করে ম্যানহোল রয়েছে। সমস্যা হলে এই ম্যানহোলে নেমেই টেলিফোন বিভাগের প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন। চোরেরাও প্রকৌশলীদের মতো ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে ক্যাবল কেটে নিয়ে যায়। পরে ওই ক্যাবলের সঙ্গে মোটা রশি বা লোহার শিকল বেঁধে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যায় এবং পেছনে পেছনে কেবলও বের হয়ে আসে। তারা একবারেই দুইশ’ মিটার কেবল বের করে নিতে পারে। পরে এগুলো বান্ডিল করে বস্তায় ভরে। বান্ডিল ক্যাবলগুলো গলিয়ে তামা এবং প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। এই ক্যাবল গলানোর বেশকিছু কারখানা রয়েছে বলে জানা গেছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়।

বিশেষ প্রতিনিধি 



















