ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দ্রুত সম্পন্নসহ ৮ দফা দাবিতে সিলেটে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। তার আগে প্রতীকী ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে এক ঘণ্টা অচল ছিল সিলেট নগর। পরে সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন সিলেটবাসীরা।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ রেখে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেন। সিলেটের সড়ক যোগাযোগ, আকাশ, রেলপথ, বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পানি সংকটসহ বিভিন্ন যৌক্তিক দাবিতে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি বারবার বলে আসছি-এখন আর চুপ করে থাকা সময় নয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেল ও আকাশ পথের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও অবহেলা সিলেটবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন দেখতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন ও বগি চালু করা, রেল টিকিট কালোবাজারি রোধ করা এবং সিলেট টু ঢাকা বিমানের ভাড়া কমিয়ে আনাসহ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা টেকসইভাবে পুনর্গঠন করতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি এই সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় এবং সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্য অব্যাহত থাকে, তবে আমি সিলেটের জনগণকে সংগঠিত করে আরো কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব এবং এর দায় বর্তমান সরকারেরই নিতে হবে।
আরিফুল হক বলেন, সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা অসহনীয়ভাবে হুমকির মুখে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ থমকে আছে।
শুধুমাত্র মহাসড়ক নয়, সিলেট শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা সড়কের তীব্র যানজট সিলেটবাসী সম্পর্কে বহিরাগতদের প্রত্যাশা অনেকাংশে ম্লান করে দেয়। তাছাড়া, বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়েছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর আজ পর্যন্ত সেই মান্ধাতা আমলের নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সিলেটবাসী তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘন ঘন দুর্ঘটনা, টাকার বিনিময়ে অনির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামানো, দালালের কারণে টিকিট না পাওয়া, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়াসহ নানা সমস্যা এখন সিলেটবাসীর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সংযোজনের কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।’
এ সময় আরিফুল হক প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও রেমিট্যান্সযোদ্ধারা দেশের মাটিতে পদার্পণের পর নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বিমানভাড়ায় যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন। এ সময় আরিফ সিলেটের প্রবাসীদের দাবিগুলো তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-কক্সবাজার রুটে বিমান চালু করতে হবে।’
এ সময় আরিফুল হক উল্লেখ করেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার না হলে এবং সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্য অব্যাহত থাকলে প্রয়োজন পড়লে প্রবাসীদের রেমিটেন্স বন্ধ করে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।’
সাবেক মেয়র আরিফ বলেন, ‘২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়, কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বন্যাকবলিত অন্য চারটি বিভাগে বাস্তবায়ন করলেও অজ্ঞাত কারণে সিলেট বিভাগে তা বাস্তবায়ন হয়নি।’
শাটডাউন কর্মসূচির পর প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল শেষে সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ডিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটবাসী। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি অর্থাৎ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর ন্যায্য অধিকার থেকে সিলেটবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।