সিলেটে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বহুল আলোচিত এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) ট্রাইব্যুনালে মামলাটির প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, আগামী ১৯ মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে প্রথম দিনে মামলার বাদি ও ঘটনার শিকার তরুণী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। মামলায় শুধু হৃদয় পারভেজ নামে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যদানকারী হৃদয় পারভেজ ঘটনার সময় কলেজ ছাত্রাবাসের ২০৫ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন। বর্তমানে পড়াশোনা শেষ করায় তিনি ছাত্রাবাস ছেড়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো: আবুল হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মঙ্গলবার তিনজনের সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল। তবে বাদি ও ভুক্তভোগী তরুণী আদালতে আসেননি। পারভেজ নামের এক সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ১৯ মে নির্ধারণ করেছেন।
এদিকে মামলার সাক্ষী অনুপস্থিত থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ ও শাহপরান থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
শাহপরান থানার (ওসি) মনির হোসেন জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় বাদির বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপরও তিনি ও অভিযুক্ত তরুণী আদালতে উপস্থিত হননি।
এর আগে মামলাটি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল। কিন্তু দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য পরবর্তীতে মামলাটিকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে একটি কক্ষে আটকে রেখে তার নববিবাহিতা স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন তার স্বামী বাদি হয়ে আটজনকে আসামি করে শাহপরান থানায় একটি মামলা করেন। গ্রেফতারের পর আদালতে ঘটনার দায়ও স্বীকার করেন আসামিরা। এছাড়া ডিএনএ টেস্টেও আট জনের মধ্যে ছয়জনের সাথে ধর্ষণের আলামতের মিল পাওয়া যায়। পরে ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহপরান থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে আসামিদের সাথে বাদি আপস করেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা একাধিকবার বিচার কাজে বাদির অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে বাদি ও ভিক্টিমের অনুপস্থিতি এই অভিযোগের সত্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।