প্রায় ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সিলেটের তিনটি চা বাগানের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক।
সিলেটের বুরজান চা-কোম্পানির অধীনস্থ তিনটি চা বাগান বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল ও বুরজান কারখানার শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। ফলে এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার অনেকটা মানবতের জীবন যাপন করছেন। বেতনের দাবিতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও তাতে কোন সুফল মেলেনি।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেটের কালাগুল চা বাগানে কাজ করছেন জাসদা বাউড়ি। তিনি জানান, যখন তিনি প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন, তখন তার দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ছয় টাকা। বছরের পর বছর ধরে, তার মজুরি এবং রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার ষাট বছরে কখনও তিনি টানা ২০ সপ্তাহ বেতন না পাওয়ার মতো সংকটের মুখোমুখি হননি।
তিনি বলেন, দুল উৎসবের জন্য আমরা কোনও বোনাস পাইনি। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম, আশ্বাস পেয়েছিলাম কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। বৃহস্পতিবার মে দিবস ছিলো, ওইদিনও আমি আমার মজুরি বা কোনও বোনাস পাইনি।
বুরজান চা বাগানের বৃদ্ধ শ্রমিক জোসনা বেগম। নিজের কর্মজীবনের শেষ সময়ে এসে পৌঁচেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে বকেয়া মজুরির দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে এমনটি কখনো ঘটেনি। কিন্তু এবার ঈদের আগে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। এমনকি, রমজানে মজুরি না পেয়ে আমি সঠিকভাবে ইফতারও দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহা আবার ঘনিয়ে আসছে। গত ঈদে আমরা কিছুই কিনতে পারিনি। আমি আমার বাচ্চাদের সামনে যেতে পারিনি শরমে ও অভাবের কারণে। আমরা খাবার ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমরা আর কতক্ষণ সহ্য করবো?
বকেয়া বেতন এবং রেশনের দাবিতে প্রায়ই বিক্ষোভ করেন এসব বাগানের শ্রমিকেরা। সম্প্রতি নগরীর লাক্কাতুরা এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে বন্দরবাজারের সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন চা শ্রমিকেরা।
এতে শ্রমিকরা বলেন, বেতন ও রেশন না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। বুরজান চা-কোম্পানির অধীনে থাকা আড়াই হাজার শ্রমিকের বেতন-রেশন ও বোনাস বকেয়া পড়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা তিন বেলা খাবার খেতে পারছে না। পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। মলিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে-দিচ্ছে বলে যাচ্ছে। কবে তাদের বেতন দেবে তার ঠিক নেই।
কালাগুলের চা শ্রমিক নেতা সোহাগ ছত্রী বলেন, আমাদের বারবার বলা হচ্ছে যে আমাদের ‘আজ অথবা কাল’ বেতন দেওয়া হবে, কিন্তু তা কখনও হয় না। আমরা যখন অনাহারে থাকি তখন বাগান মালিকরা বিদেশে ভ্রমণ করেন।
এই দাবিতে রোববার (৪ মে) সিলেটের সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।
এমনটি জানিয়ে চা শ্রমিক ও চাবাগান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রঞ্জিত নায়েক রঞ্জু বলেন, বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, কেউ তাদের কথা রাখেনি। আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু একটিও পূরণ হয়নি। তাই, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা আগামী রবিবার (৪ মে) মালনীছড়ায় সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করব।
এ ব্যাপারে বুরজান চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা কৃষি ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেছি। এখনও পাইনি্ঋণ পেলে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করা হবে। আশা করি শীঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, কেবল শ্রমিকরা নয়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও তাদের বেতন পাননি, কারণ বাগানগুলি লোকসানের মধ্যে আছে। তাই বেতন দিতে পারছে না।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ২,৬০০ শ্রমিকের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয় এবং চা বোর্ডের সাথে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেছি।