সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার বিভিন্ন স্থানের ছোট-বড় পাহাড়-টিলা কেটে মাটির নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এতে করে যেমন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, ঠিক তেমনিভাবে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জনপদ জাফলং। এই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাটির নিচে পাওয়া যায় উন্নত মানের নুড়ি পাথর। এই অঞ্চলের যত্রতত্র সামান্য মাটি খুঁড়লেই পাথরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সোনাটিলা, কান্দুবস্তি, মন্দিরজুম, শ্মশানঘাট, সংগ্রামপুঞ্জি, লন্ডনিবাজার, গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী মানুষ কেউ অন্যের জমি লিজ নিয়ে, আবার কেউ বা নিজের জমি থেকে এসব পাথর উত্তোলন করে আসছে। আহরিত পাথর নিয়মিত বিক্রি করছে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ক্রাশান মিলগুলোতে।
সরকারের ভূমি ও রাজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী দেশের যে কোন স্থানে মাটির নিচের সকল প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক হচ্ছে সরকার। সরকারের পক্ষে এসব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করবে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। এ জন্য যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মাটির নিচের কোন সম্পদ উত্তোলন করতে চাইলে এক্ষেত্রে সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত হারে রাজস্ব ফি জমা দিতে হয়, একইসাথে সরকারের যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। জাফলং এলাকায় এসব নিয়মের কেউ তোয়াক্কা করছে না। সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের এক শ্রেণীর কর্মচারী-কর্মকর্তা ও লেবাসধারী কর্মহীন রাজনৈতিক পরিচয়ধারীদের সাথে যোগসাজশ করে স্বার্থান্বেষী মহল অবাধে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাটির নিচের নুড়ি পাথর এবং বালু উত্তোলনে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা এসবও কেউ দেখছে না।
পাথর উত্তোলনের এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি থেকে প্রবাহমান জাফলং নদী, পিয়াইন নদীসহ আশপাশের ছোট-বড় টিলা, সমতল ভূমি থেকে দলে দলে শ্রমিকরা বালু-পাথর উত্তোলন করেছে। ডাউকি জাফলং নদীর শূন্য লাইন থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জাফলং কোয়ারী ছাড়াও পাথরখেকোরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে অসংখ্য বোমা মেশিন বা স্যালো মেশিন স্থাপন করে বালু-পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখছে। বর্তমান সময়ে নিজেদেরে সরকার দলীয় লোক মনে করা ব্যক্তি বা সিন্ডিকেট এই সুবিধা ভোগ করছে বলে দাবী করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে আবার অনেককে দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করার কারণে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। চলতি বছরের গত ২০ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বাদী হয়ে একটি মামলাও দায়ের করেছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে বিএনপি নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম শাহপরান ও মোঃ শাহ আলম স্বপনসহ শতাধিক ব্যক্তিকে। মামলা হওয়া সত্বেও অতিলোভী এই মানুষগুলো থেমে নেই ধংসযজ্ঞ করা থেকে। এই সিন্ডিকেটের আবুল কাশেম নামের এক সদস্যকে ২৮ এপ্রিল সোমবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আটক করেছে।
অপ্রত্যাশিত ও ভয়ংকরভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ জাফলং এলাকাটি এখন হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এ ধরনের অপরিকল্পিত পরিবেশ বিপর্যয়কর পাথর ও বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।