সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে পাথর উত্তোলন হওয়ায় ১৬ জন সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
রোববার (২৩ মার্চ) ডাক বিভাগের মাধ্যমে রেজিস্ট্রিযোগে বেলার পক্ষে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস.হাসানুল বান্না।
নোটিশে সিলেটের পিয়াইন ও ডাউকি নদীসহ রাংপানি নদী, ধলাই নদী, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, লোভাছড়া, শ্রীপুর, ভোলাগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের চলতি নদীতে বিদ্যমান পাথর কোয়ারিসমূহকে বিলুপ্ত ঘোষণাপূর্বক স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এবিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায়, নোটিশ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
যাদেরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে- জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ভূতত্ত্ব ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট জেলা প্রশাসক, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার।
নোটিশে স্থায়ীভাবে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সারাদেশের গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি, সিলিকা কোয়ারি, নূরীপাথর, সাদামাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য সকল কোয়ারি ইজারা বন্ধ বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ইতোমধ্যে পাথর উত্তোলনে আহত-নিহত শ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতপূর্বক যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সিলেটের সকল নদীর ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বজায় রেখে নদী কেন্দ্রিক টেকসই পর্যটন গড়ার রুপরেখা প্রণয়ন ও তা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ যা সমগ্র দেশের পর্যটকদের একটি আকর্ষণীয় স্থান। সিলেটের জাফলং নামে খ্যাত পিয়াইন ও ডাউকী নদীসহ ধলাই, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, লোভাছড়া ও ভোলাগঞ্জ পাথরের উপর প্রবাহিত স্ফটিক পানির জন্য অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান যা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত পর্যটনস্থল।
তবে উল্লেখিত পর্যটন এলাকাসমূহ থেকে যান্ত্রিকভাবে বোমা মেশিনের মাধ্যমে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটের উল্লেখিত এলাকাসমূহ সৌন্দর্য হারিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। অনিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী পাথর উত্তোলনের ফলে সমগ্র নদী ব্যবস্থা, বন, কৃষিজমি ও আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিয়াইন ও ডাউকী তীরবর্তী সংগ্রামপুঞ্জি ও লামাপুঞ্জির অংশবিশেষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে এখানকার অতি মূল্যবান সুপারি বাগান। ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী জাফলং চা বাগান।
পরিবেশগত ক্ষতি ছাড়াও পাথর উত্তোলনকালে বিগত সময়ে প্রাণ হারিয়েছে ১০৯ জন শ্রমিক। উত্তোলিত পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক চলাচলের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ এবং কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক ১৫০০ পাথরবাহী ট্রাক প্রতিদিন চলাচল করে থাকে এ এলাকায়। শুধুমাত্র ২০২০-২০২১ সাল পর্যন্ত পাথরবাহী যানবাহন কর্তৃক সৃষ্ট ২৮টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন প্রাণ হারায়।