, বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বালাগঞ্জে অপরিকল্পিত সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ, নতুন নকশায় করা হবে উঁচু সিলেট থেকে নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ স্বরাজ পার্টি’র আত্মপ্রকাশ সিলেটে বিয়ের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বরের মৃত্যু  সুনামগঞ্জে এক শিশুর ছুরিকাঘাতে আরেক শিশু নিহত সিলেটে কমেছে চাহিদা ও উৎপাদন : কুরবানীর জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৮ হাজার ৮১৫টি পশু বৃহৎ জনগোষ্ঠির কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটান : মো: জয়নাল আবেদীন সিলেটে আইনজীবী হত্যায় ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বিশ্বনাথে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ৮ দিন পর থানায় অভিযোগ  সিলেটে বিভিন্ন দাবিতে আদালতপাড়ায় দুই ঘন্টার কর্মবিরতি নিজের সন্তান হত্যা কোন রাষ্ট্র ও সরকারের কাজ হতে পারেনা : বিভাগীয় কমিশনার
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে
পতিত সরকারের দোসর

ব্রিটেনের শীর্ষ ধনী সিলেটের ইকবালের অর্থ পাচারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঝড়

পতিত শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্থ পাচারের অভিযোগে ঝড় বইছে। ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) এর এক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তাকে দ্রত বিচারাধীন করতে প্রদান করেছে পরামর্শ। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছে তাকে। জুলাই বিপ্লবের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ হাসিনার এমন চিহ্নিত দোসরকে একটি ব্যাংকের দায়িত্বে দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। হাসিনার সে দোসর ব্রিটেনে শীর্ষ ধনীদের একজন। তিনি ছিলেন মূলত একজন উদ্যোক্তা। চিংড়ি ব্যবসার সফলতা তাকে নিয়ে যায় অনেক দূর। এছাড়া তার রয়েছে আরো অনেক ব্যবসা। সানডে টাইমস রিচ তালিকাতে অবস্থান করা শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ সিলেটি তিনি। তার নাম ইকবাল আহমেদ ওবিই। সিলেট ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের ইকবাল আহমেদ ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্য। সেখারে পড়ালেখা শেষে ভাইদের সাথে ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি। কিন্তু এবার ভিন্ন এক নেতিবাচক ঘটনা ঘিরে ধরেছে তাকে। তার বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থ পাচারের অভিযোগ। এনিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

সম্প্রতি ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) এর এক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে ওবিই’র কেলেংকারি দ্রত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে ২০০ হাজার পাউন্ড গায়েবের অভিযোগে দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদকে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করেছিল। এবং চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় তাকে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসি) এর একাধিক মেম্বার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে, চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে গত ১২ মার্চ। সুশাসন ফেরাতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আল হারামাইন পারফিউমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান। আওয়ামী লীগের পতনের তিনি আর দেশে ফিরছেন না। এজন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালক করা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে। অথচ এই ওবিই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শীর্ষ ২০ জন অর্থদাতাদের একজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্ক গ্রুপের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা-রেহানার ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি। সেই সাথে শেখ হাসিনার একান্ত সহচর হয়ে উঠেন ইকবাল। পতন পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমলে সীমার্ক গ্রæপের মাছের ব্যবসার আড়ালে ভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে ছিলেন ইকবাল। সীমার্ক কোম্পানির গুদামে মাছ রফতানির নামে যেতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও সোনার বার। ওই সময় বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সম্পদের মালিকানা গড়ে তোলেন তিনি। পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থন ও সহযোগীতার দরজা ছিল ইকবালের জন্য খোলা। শুধু লন্ডনেই তার প্রায় দুই ডজন খানেক বাড়ি ও অত্যাধুনিক প্রপার্টি রয়েছে। যা মূলত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে উঠেছে অভিযোগ। ইকবাল আহমদের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্কের নিজস্ব কারখানা রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রফতানি করে ইউরোপ-আমেরিকায়। আর ইবকো পুরো ইউরোপে ফ্রোজেন ফুড সরবরাহকারী। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ইকবালের ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের অন্যান্যরা মোট ১৪টি কোম্পানি পরিচালনা করে আসছে। এই কোম্পানিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত। শেখ রেহানাসহ শেখ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামেও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে এই কোম্পানিগুলোতে।

অর্থ পাচার ঘটনা ছাড়াও ইতোপূর্বে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির গোপন অর্থ দাতা ইকবাল আহমেদ ওবিই দলটিকে ১২ হাজার পাউন্ড ডোনেশন দেওয়ার পর পরবর্তীতে তা খরচের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি ব্রিটেনের ডেইলি মেইলর এক প্রতিবেদন অনুযায়ি, এই দাতা তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পার্টির তহবিল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। জনগণের করের টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হয়েছিল। এই ঘটনাটি ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিমালা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কঠোর নিয়মকানুন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল।

এছাড়া যুক্তরাজ্য পলাতক সিলেটের এক নেতা জানান, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইকবালের গভীর সখ্যতা ছিল শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভীর সাথে। ওই সময় তার সিন্ডিকেটের অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যেম ছিলেন ইকবাল। তার তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, সুইস ব্যাংকে গওর রিজভীর নামে ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪০ শতাংশ ইকবালের মাধ্যেম পাচার হয়েছে। আর্থিক গোয়েন্দা সূত্র মতে, ভ‚য়া কোম্পানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, রেমিট্যান্স হস্তান্তর, ভ‚য়া ডকুমেন্টেশন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর এড়িয়ে অর্থ পাচারে জড়িয়ে থাকেন ইকবাল।

এছাড়া এস কে সুর চৌধুরীর ব্যাংকিং খাতে অর্থ লুটপাটের যে নেটয়ার্ক ছিল তাতেও ইকবাল ছিলেন একজন শক্তিশালী সদস্য। সেই সময়েও একটি ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ লুটপাট করেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ থাকায় এসব অভিযোগ উঠলেও ইকবাল ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুতর। স্বাধীনতা বিরোধীদের চেয়েও এরা জগন্যতম। মুখোশের আড়ালে ওই বেনিয়ারাই সর্বনাশ করছে দেশ ও জাতির। তারাই দেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা পাচারের টানেলে পরিণত হয়েছিল, আগামীতেও হতে পারে। তারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই ইকবালদের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই তাদের ব্যাপারে সর্তক থাকা উচিত। অপরাধে জড়িত থাকলে অবশ্যই ছাড় দেয়া অনুচিত। তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার অভিশাপে যেন দেশ ক্ষতির মধ্য না পড়ে সেই দিকে নজর দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একজন ব্যক্তির মাধ্যমে বড় আকারের দুর্নীতি অসম্ভব। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা।

সূত্র : ইনকিলাব

জনপ্রিয়

বালাগঞ্জে অপরিকল্পিত সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ, নতুন নকশায় করা হবে উঁচু

পতিত সরকারের দোসর

ব্রিটেনের শীর্ষ ধনী সিলেটের ইকবালের অর্থ পাচারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঝড়

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

পতিত শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্থ পাচারের অভিযোগে ঝড় বইছে। ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) এর এক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তাকে দ্রত বিচারাধীন করতে প্রদান করেছে পরামর্শ। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছে তাকে। জুলাই বিপ্লবের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ হাসিনার এমন চিহ্নিত দোসরকে একটি ব্যাংকের দায়িত্বে দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। হাসিনার সে দোসর ব্রিটেনে শীর্ষ ধনীদের একজন। তিনি ছিলেন মূলত একজন উদ্যোক্তা। চিংড়ি ব্যবসার সফলতা তাকে নিয়ে যায় অনেক দূর। এছাড়া তার রয়েছে আরো অনেক ব্যবসা। সানডে টাইমস রিচ তালিকাতে অবস্থান করা শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ সিলেটি তিনি। তার নাম ইকবাল আহমেদ ওবিই। সিলেট ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের ইকবাল আহমেদ ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্য। সেখারে পড়ালেখা শেষে ভাইদের সাথে ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি। কিন্তু এবার ভিন্ন এক নেতিবাচক ঘটনা ঘিরে ধরেছে তাকে। তার বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থ পাচারের অভিযোগ। এনিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

সম্প্রতি ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) এর এক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে ওবিই’র কেলেংকারি দ্রত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে ২০০ হাজার পাউন্ড গায়েবের অভিযোগে দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদকে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করেছিল। এবং চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় তাকে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসি) এর একাধিক মেম্বার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে, চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে গত ১২ মার্চ। সুশাসন ফেরাতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আল হারামাইন পারফিউমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান। আওয়ামী লীগের পতনের তিনি আর দেশে ফিরছেন না। এজন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালক করা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে। অথচ এই ওবিই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শীর্ষ ২০ জন অর্থদাতাদের একজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্ক গ্রুপের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা-রেহানার ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি। সেই সাথে শেখ হাসিনার একান্ত সহচর হয়ে উঠেন ইকবাল। পতন পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমলে সীমার্ক গ্রæপের মাছের ব্যবসার আড়ালে ভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে ছিলেন ইকবাল। সীমার্ক কোম্পানির গুদামে মাছ রফতানির নামে যেতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও সোনার বার। ওই সময় বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সম্পদের মালিকানা গড়ে তোলেন তিনি। পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থন ও সহযোগীতার দরজা ছিল ইকবালের জন্য খোলা। শুধু লন্ডনেই তার প্রায় দুই ডজন খানেক বাড়ি ও অত্যাধুনিক প্রপার্টি রয়েছে। যা মূলত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে উঠেছে অভিযোগ। ইকবাল আহমদের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্কের নিজস্ব কারখানা রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রফতানি করে ইউরোপ-আমেরিকায়। আর ইবকো পুরো ইউরোপে ফ্রোজেন ফুড সরবরাহকারী। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ইকবালের ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের অন্যান্যরা মোট ১৪টি কোম্পানি পরিচালনা করে আসছে। এই কোম্পানিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত। শেখ রেহানাসহ শেখ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামেও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে এই কোম্পানিগুলোতে।

অর্থ পাচার ঘটনা ছাড়াও ইতোপূর্বে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির গোপন অর্থ দাতা ইকবাল আহমেদ ওবিই দলটিকে ১২ হাজার পাউন্ড ডোনেশন দেওয়ার পর পরবর্তীতে তা খরচের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি ব্রিটেনের ডেইলি মেইলর এক প্রতিবেদন অনুযায়ি, এই দাতা তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পার্টির তহবিল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। জনগণের করের টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হয়েছিল। এই ঘটনাটি ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিমালা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কঠোর নিয়মকানুন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল।

এছাড়া যুক্তরাজ্য পলাতক সিলেটের এক নেতা জানান, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইকবালের গভীর সখ্যতা ছিল শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভীর সাথে। ওই সময় তার সিন্ডিকেটের অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যেম ছিলেন ইকবাল। তার তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, সুইস ব্যাংকে গওর রিজভীর নামে ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪০ শতাংশ ইকবালের মাধ্যেম পাচার হয়েছে। আর্থিক গোয়েন্দা সূত্র মতে, ভ‚য়া কোম্পানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, রেমিট্যান্স হস্তান্তর, ভ‚য়া ডকুমেন্টেশন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর এড়িয়ে অর্থ পাচারে জড়িয়ে থাকেন ইকবাল।

এছাড়া এস কে সুর চৌধুরীর ব্যাংকিং খাতে অর্থ লুটপাটের যে নেটয়ার্ক ছিল তাতেও ইকবাল ছিলেন একজন শক্তিশালী সদস্য। সেই সময়েও একটি ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ লুটপাট করেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ থাকায় এসব অভিযোগ উঠলেও ইকবাল ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুতর। স্বাধীনতা বিরোধীদের চেয়েও এরা জগন্যতম। মুখোশের আড়ালে ওই বেনিয়ারাই সর্বনাশ করছে দেশ ও জাতির। তারাই দেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা পাচারের টানেলে পরিণত হয়েছিল, আগামীতেও হতে পারে। তারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই ইকবালদের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই তাদের ব্যাপারে সর্তক থাকা উচিত। অপরাধে জড়িত থাকলে অবশ্যই ছাড় দেয়া অনুচিত। তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার অভিশাপে যেন দেশ ক্ষতির মধ্য না পড়ে সেই দিকে নজর দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একজন ব্যক্তির মাধ্যমে বড় আকারের দুর্নীতি অসম্ভব। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা।

সূত্র : ইনকিলাব