, রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে সহকারী উদ্যোক্তা রাহাতকে সংবর্ধনা সুনামগঞ্জে কনে দেখতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২ সিলেটে লুট হওয়া সাদাপাথর ফেরত দিতে তিন দিনের আলটিমেটাম হবিগঞ্জে বিসিআইসি, বিএডিসি ও পেস্টিসাইড ডিলার এবং নার্সারী মালিকদের সাথে মতবিনিময় বিশ্বনাথে ‘লামাকাজী ইউনিয়ন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে’র খাদ্য সামগ্রী বিতরণ নার্সিং সেবা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেবার অন্যতম : মো: আমিনুল ইসলাম মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর সিলেটের উদ্যোক্তা জয়নালের চার চাকার ব্যাংকিং এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিলেটের জাফলংয়ে পাথর লুটের মামলায় দুই শ্রমিক গ্রেফতার সীমান্তে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবির কঠোর অবস্থান

সিলেটের উদ্যোক্তা জয়নালের চার চাকার ব্যাংকিং এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে

সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোক্তা জয়নাল আবেদিনের চার চাকার ব্যাংকিং এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চার চাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম স্হান পেয়েছে জাতিসংঘের সাময়িকীতে। ফলে তাকে নিয়ে অন্যান্য উদ্যোক্তাদের আগ্রহের কমতি নেই।

সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করা ছোট একটি দল বদলে দিচ্ছে দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার ধারণা। দলটি বিশেষভাবে সাহায্য করছে তাদেরই, যাদের পক্ষে ব্যাংকে যাওয়া সহজ নয়। ৩৫ বছর বয়সী জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে চার চাকার এই ব্যাংকিং উদ্যোগটি বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা পাওয়া মায়েদের জন্য নির্ধারিত ভাতা সরাসরি তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। আর এতে সুবিধাভোগীদের সময় বাঁচছে, অটুট থাকছে তাদের মর্যাদা ও নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা।

২০১৯ সালে এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় এই আইডিয়াটির জন্ম এবং ২০২০ সালের আগস্টে থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দিনে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে যান, সুবিধাভোগীর পরিচয় যাচাই করেন এবং সাথে সাথেই নগদ অর্থ বা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে তাদের টাকা বুঝিয়ে দেন। এই সহজ ব্যবস্থাটার পেছনে রয়েছে একটা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অবকাঠামো; সুবিধাভোগীদের নির্ভুল তালিকা, ফলোআপের জন্য প্রাথমিক তথ্য এবং ছোট একটি উদ্ভাবনী ডেটা টিম, যারা সেবাটিকে বাস্তব চাহিদার সাথে প্রাসঙ্গিক রাখতে সহায়তা করছে।

চার চাকার এই ব্যাংকের কাজের পরিধি ইতোমধ্যে স্পষ্ট। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো বা জটিল কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়াই প্রায় ৩২ হাজার ভাতাগ্রহীতা এখন বাড়িতে বসেই টাকা গ্রহণ করছেন।একই সাথে দলটি কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ সুবিধাও পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে পরিবারগুলো শুধু টিকে না থেকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে। উদ্যোগটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে এবং সেবার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে আরও ২০০টি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার পরিবারের কাছে সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমাজের সবার অন্তর্ভুক্তিকে ব্যতিক্রম নয়, বরং একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করা।

শুধু সুবিধা নয়, উপকারভোগীদের আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এনেছে এই উদ্যোগটি। যারা আগে ব্যাংকে যেতে মানুষের সহায়তার ওপর নির্ভর করতেন, তারা এখন নিজেদের লেনদেন নিজেরাই সম্পন্ন করছেন। স্থানীয় তরুণদের জন্য তৈরি হয়েছে আয়ের সুযোগ। আর ডেটাভিত্তিক পরিকল্পনার ফলে সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

এ বিষয়ে চার চাকার ব্যাংকিং এর জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষের বাড়িতে সরাসরি ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া শুধু কোনো অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের একটি উপায়। এটি সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণের পথে কাউকে পেছনে না ফেলে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে নেওয়ার একটি অঙ্গীকার।’

উল্লেখ্য, জয়নাল আবেদিন চার চাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রথমে সিলেট সদর উপজেলা ও  নগরীর ১৮টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩ হাজার উপকারভোগী নিয়ে শুরু করেন। পরে সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনভুক্ত সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ও ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চার চাকার ব্যাংকিং সেবা চালু করেন । সিলেট জেলা পরিষদ, সিলেট মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার সহযোগিতায় ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এতে অনলাইন ডাটা বেজ থেকে/ভাতা গ্রহীতাগণের কাছ থেকে/বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একাউন্ট খোলাসহ  অসুস্থ/প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীগণ তাদের সুবিধামতস্থানে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেন।  তিনি তার নিজস্ব কর্মীবাহিনী দ্বারা সিলেট সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বয়স্ক, মাতৃত্বকালিন ও প্রতিবন্ধিভাতা উপকার ভোগীদের হাতে তুলে দেন।তার এ নতুন উদ্যোগ ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। যার ফলে চার চাকার ব্যাংকিং নতুন মাত্রা পেয়েছে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এ সেবার সুফল ভোগ করছে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধি মানুষ।  তারা নিরাপদে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। স্হানীয় তরুনদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা সংযুক্তি এবং তথ্য ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সামাজিক সমতা বাস্তবে পরিনত হয়েছে।

জনপ্রিয়

সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে সহকারী উদ্যোক্তা রাহাতকে সংবর্ধনা

সিলেটের উদ্যোক্তা জয়নালের চার চাকার ব্যাংকিং এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে

প্রকাশের সময় : ১৫ ঘন্টা আগে

সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোক্তা জয়নাল আবেদিনের চার চাকার ব্যাংকিং এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চার চাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম স্হান পেয়েছে জাতিসংঘের সাময়িকীতে। ফলে তাকে নিয়ে অন্যান্য উদ্যোক্তাদের আগ্রহের কমতি নেই।

সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করা ছোট একটি দল বদলে দিচ্ছে দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার ধারণা। দলটি বিশেষভাবে সাহায্য করছে তাদেরই, যাদের পক্ষে ব্যাংকে যাওয়া সহজ নয়। ৩৫ বছর বয়সী জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে চার চাকার এই ব্যাংকিং উদ্যোগটি বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা পাওয়া মায়েদের জন্য নির্ধারিত ভাতা সরাসরি তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। আর এতে সুবিধাভোগীদের সময় বাঁচছে, অটুট থাকছে তাদের মর্যাদা ও নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা।

২০১৯ সালে এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় এই আইডিয়াটির জন্ম এবং ২০২০ সালের আগস্টে থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দিনে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে যান, সুবিধাভোগীর পরিচয় যাচাই করেন এবং সাথে সাথেই নগদ অর্থ বা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে তাদের টাকা বুঝিয়ে দেন। এই সহজ ব্যবস্থাটার পেছনে রয়েছে একটা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অবকাঠামো; সুবিধাভোগীদের নির্ভুল তালিকা, ফলোআপের জন্য প্রাথমিক তথ্য এবং ছোট একটি উদ্ভাবনী ডেটা টিম, যারা সেবাটিকে বাস্তব চাহিদার সাথে প্রাসঙ্গিক রাখতে সহায়তা করছে।

চার চাকার এই ব্যাংকের কাজের পরিধি ইতোমধ্যে স্পষ্ট। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো বা জটিল কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়াই প্রায় ৩২ হাজার ভাতাগ্রহীতা এখন বাড়িতে বসেই টাকা গ্রহণ করছেন।একই সাথে দলটি কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ সুবিধাও পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে পরিবারগুলো শুধু টিকে না থেকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে। উদ্যোগটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে এবং সেবার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে আরও ২০০টি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার পরিবারের কাছে সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমাজের সবার অন্তর্ভুক্তিকে ব্যতিক্রম নয়, বরং একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করা।

শুধু সুবিধা নয়, উপকারভোগীদের আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এনেছে এই উদ্যোগটি। যারা আগে ব্যাংকে যেতে মানুষের সহায়তার ওপর নির্ভর করতেন, তারা এখন নিজেদের লেনদেন নিজেরাই সম্পন্ন করছেন। স্থানীয় তরুণদের জন্য তৈরি হয়েছে আয়ের সুযোগ। আর ডেটাভিত্তিক পরিকল্পনার ফলে সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

এ বিষয়ে চার চাকার ব্যাংকিং এর জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষের বাড়িতে সরাসরি ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া শুধু কোনো অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের একটি উপায়। এটি সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণের পথে কাউকে পেছনে না ফেলে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে নেওয়ার একটি অঙ্গীকার।’

উল্লেখ্য, জয়নাল আবেদিন চার চাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রথমে সিলেট সদর উপজেলা ও  নগরীর ১৮টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩ হাজার উপকারভোগী নিয়ে শুরু করেন। পরে সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনভুক্ত সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ও ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চার চাকার ব্যাংকিং সেবা চালু করেন । সিলেট জেলা পরিষদ, সিলেট মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার সহযোগিতায় ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এতে অনলাইন ডাটা বেজ থেকে/ভাতা গ্রহীতাগণের কাছ থেকে/বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একাউন্ট খোলাসহ  অসুস্থ/প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীগণ তাদের সুবিধামতস্থানে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেন।  তিনি তার নিজস্ব কর্মীবাহিনী দ্বারা সিলেট সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বয়স্ক, মাতৃত্বকালিন ও প্রতিবন্ধিভাতা উপকার ভোগীদের হাতে তুলে দেন।তার এ নতুন উদ্যোগ ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। যার ফলে চার চাকার ব্যাংকিং নতুন মাত্রা পেয়েছে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এ সেবার সুফল ভোগ করছে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধি মানুষ।  তারা নিরাপদে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। স্হানীয় তরুনদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা সংযুক্তি এবং তথ্য ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সামাজিক সমতা বাস্তবে পরিনত হয়েছে।