, রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে সহকারী উদ্যোক্তা রাহাতকে সংবর্ধনা সুনামগঞ্জে কনে দেখতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২ সিলেটে লুট হওয়া সাদাপাথর ফেরত দিতে তিন দিনের আলটিমেটাম হবিগঞ্জে বিসিআইসি, বিএডিসি ও পেস্টিসাইড ডিলার এবং নার্সারী মালিকদের সাথে মতবিনিময় বিশ্বনাথে ‘লামাকাজী ইউনিয়ন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে’র খাদ্য সামগ্রী বিতরণ নার্সিং সেবা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেবার অন্যতম : মো: আমিনুল ইসলাম মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর সিলেটের উদ্যোক্তা জয়নালের চার চাকার ব্যাংকিং এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিলেটের জাফলংয়ে পাথর লুটের মামলায় দুই শ্রমিক গ্রেফতার সীমান্তে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবির কঠোর অবস্থান

সীমান্তে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবির কঠোর অবস্থান

সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও লালাখাল এলাকায় জাতীয় সম্পদ বালু ও পাথরের অবাধ লুটপাট বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।

স্থানীয়ভাবে আলোচিত এ প্রসঙ্গ নিয়ে শনিবার (২৩ আগস্ট) লালাখাল বিওপিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের কারণেই এ এলাকায় বর্তমানে কোনো অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলন হচ্ছে না। বিজিবির উপস্থিতির ফলে সীমান্তঘেঁষা এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্পট এখনও পর্যটকদের জন্য সুরক্ষিত রয়েছে।

তিনি জানান, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি ও জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শূন্যরেখা থেকে আনুমানিক ৩০০ গজ পর্যন্ত এখনও বিপুল পরিমাণ পাথর অক্ষত আছে। ফলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন। একইভাবে লালাখাল এলাকায় বিজিবির টহল অব্যাহত থাকায় আসন্ন শীত মৌসুমেও পর্যটকরা নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক জানান, শুধুমাত্র গত চার মাসে বিজিবি প্রায় চারশ থেকে ছয়শ অবৈধ বালু-পাথরবাহী নৌকা আটক করেছে। শুধু লালাখাল নয়, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর অঞ্চল থেকেও অসংখ্য নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে গভীর রাতেও বিজিবি সদস্যরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, যেখানে অনেকেই আহত হয়েছেন। তারপরও দায়িত্বের জায়গা থেকে তারা পিছপা হননি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বিজিবিকে সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের সদস্যরা বছরের ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ পণ্য প্রবাহ এবং পুশ-ইন প্রতিরোধে আমরা এককভাবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও সীমান্তের নিরাপত্তায় আমাদের সদস্যরা অবিচল।

অধিনায়ক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিজিবির অর্জিত সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

অবৈধ পাথর ও বালু পাচারে কারা জড়িত-এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত করছে এবং বিজিবি তাদের নিয়মিত সহযোগিতা করছে। সদর দপ্তর থেকেও তদন্ত টিম কাজ করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, আমরা শুধু সীমান্ত নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায়ও কাজ করছি। এ দায়িত্ব কোনো বাহিনীর জন্য সহজ নয়, তবুও বিজিবি সদস্যরা দেশকে রক্ষা করতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। জনসাধারণ আমাদের পাশে থাকলে দেশের সম্পদ কখনও অবৈধভাবে লুটপাট হতে পারবে না।

বিজিবির এ দৃঢ় অবস্থান স্থানীয় জনসাধারণ ও দেশপ্রেমিক মানুষদের আশ্বস্ত করেছে। অবৈধ লুটপাট বন্ধ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের এক অনন্য নজির। আজকের এই ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হয়েছে, সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি যেমন বিজিবির অক্লান্ত ত্যাগে সুরক্ষিত, তেমনি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদও তাদের নজরদারিতে নিরাপদ।

শেষে অধিনায়ক বলেন, আমাদের শপথ-সীমান্তকে রক্ষা করব জীবন দিয়ে, দেশের এক বিন্দু মাটিও হাতছাড়া হতে দেব না। বাংলাদেশ বিজিবির হাতে নিরাপদ, ইনশাআল্লাহ সবসময় নিরাপদই থাকবে।

জনসাধারণের প্রত্যাশা, বিজিবির এই অটল অবস্থান ও আত্মত্যাগ দেশের সীমান্ত ও সম্পদকে আগামীতেও সুরক্ষিত রাখবে।

জনপ্রিয়

সিলেট জেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে সহকারী উদ্যোক্তা রাহাতকে সংবর্ধনা

সীমান্তে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবির কঠোর অবস্থান

প্রকাশের সময় : ১৬ ঘন্টা আগে

সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও লালাখাল এলাকায় জাতীয় সম্পদ বালু ও পাথরের অবাধ লুটপাট বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।

স্থানীয়ভাবে আলোচিত এ প্রসঙ্গ নিয়ে শনিবার (২৩ আগস্ট) লালাখাল বিওপিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের কারণেই এ এলাকায় বর্তমানে কোনো অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলন হচ্ছে না। বিজিবির উপস্থিতির ফলে সীমান্তঘেঁষা এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্পট এখনও পর্যটকদের জন্য সুরক্ষিত রয়েছে।

তিনি জানান, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি ও জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শূন্যরেখা থেকে আনুমানিক ৩০০ গজ পর্যন্ত এখনও বিপুল পরিমাণ পাথর অক্ষত আছে। ফলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন। একইভাবে লালাখাল এলাকায় বিজিবির টহল অব্যাহত থাকায় আসন্ন শীত মৌসুমেও পর্যটকরা নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক জানান, শুধুমাত্র গত চার মাসে বিজিবি প্রায় চারশ থেকে ছয়শ অবৈধ বালু-পাথরবাহী নৌকা আটক করেছে। শুধু লালাখাল নয়, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর অঞ্চল থেকেও অসংখ্য নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে গভীর রাতেও বিজিবি সদস্যরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, যেখানে অনেকেই আহত হয়েছেন। তারপরও দায়িত্বের জায়গা থেকে তারা পিছপা হননি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বিজিবিকে সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের সদস্যরা বছরের ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ পণ্য প্রবাহ এবং পুশ-ইন প্রতিরোধে আমরা এককভাবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও সীমান্তের নিরাপত্তায় আমাদের সদস্যরা অবিচল।

অধিনায়ক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিজিবির অর্জিত সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

অবৈধ পাথর ও বালু পাচারে কারা জড়িত-এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত করছে এবং বিজিবি তাদের নিয়মিত সহযোগিতা করছে। সদর দপ্তর থেকেও তদন্ত টিম কাজ করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, আমরা শুধু সীমান্ত নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায়ও কাজ করছি। এ দায়িত্ব কোনো বাহিনীর জন্য সহজ নয়, তবুও বিজিবি সদস্যরা দেশকে রক্ষা করতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। জনসাধারণ আমাদের পাশে থাকলে দেশের সম্পদ কখনও অবৈধভাবে লুটপাট হতে পারবে না।

বিজিবির এ দৃঢ় অবস্থান স্থানীয় জনসাধারণ ও দেশপ্রেমিক মানুষদের আশ্বস্ত করেছে। অবৈধ লুটপাট বন্ধ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের এক অনন্য নজির। আজকের এই ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হয়েছে, সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি যেমন বিজিবির অক্লান্ত ত্যাগে সুরক্ষিত, তেমনি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদও তাদের নজরদারিতে নিরাপদ।

শেষে অধিনায়ক বলেন, আমাদের শপথ-সীমান্তকে রক্ষা করব জীবন দিয়ে, দেশের এক বিন্দু মাটিও হাতছাড়া হতে দেব না। বাংলাদেশ বিজিবির হাতে নিরাপদ, ইনশাআল্লাহ সবসময় নিরাপদই থাকবে।

জনসাধারণের প্রত্যাশা, বিজিবির এই অটল অবস্থান ও আত্মত্যাগ দেশের সীমান্ত ও সম্পদকে আগামীতেও সুরক্ষিত রাখবে।