সিলেট নগরীতে একটি হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে এক বিএনপি নেত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকালের ঘটনায় রাতে এয়ারপোর্ট থানার একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান।
নগরীর সুবিদবাজার এলাকার হাজিপাড়া এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী অসীম কুমার দাশের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকালে সিলেট মহানগর মহিলা দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি জেসমিন বেগম ও তার ভাই কামাল আহমেদ (৪০), কাওছার (২৬), রায়হান মিয়া (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন ইট-পাথর নিক্ষেপ করে আমার বাসার জানালার কাচ ভাঙে। তখন আমার বাবা-মা ঘর থেকে বের হয়ে তাদের বাধা দিতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার বসতঘরের ভেতরে গিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং লোহার পাইপ, হকিস্ট্রিক ও কাঠের রুল দিয়ে আমার বাবা-মাকে বেধড়ক আঘাত করে। এ সময় তারা আমার বাবা-মাকে বলে, বাসার জায়গা না ছাড়লে তারা যেকোনো সময়ে চাকু দিয়ে আঘাত করে খুন করবে।
শনিবার বিকালে এয়ারপোর্ট থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার পরই আমি জায়গাটা পরিদর্শন করেছি। দুটি পরিবারই বাগানের জায়গায় বসবাস করছে। রাস্তার জায়গা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর দুটি পরিবারই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তবে পাড়ার বাসিন্দরা এটি সমাধন করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থতি স্বাভাবিক রয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ঘটনাটি আমরা জেনেছি। দুটি পক্ষ থেকে দুই রকম কথা শুনেছি। আর ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নাম আসায় আজ ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তিন দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা হিন্দু পরিবারের পাশে আছি, তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
ঘটনার সময় অসীম কুমার দাশের পরিবারের সদস্যদের চিৎকার শুনে সেখানে যাওয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ মিলন বলেন, মঙ্গলবার ঘটনাটি শুনে আমি অসীমের বাসায় এসেছিলাম। এখানে বিএনপি নামদারী একজন মহিলা থাকেন তিনি একবার নয়, তিনবার অসীমের বাসায় হামলা করেছে। এর আগে অসীম তার ঘর ভেঙে রাস্তার জন্য জায়গা দিয়েছে। এরপর আবার লাল দাগ দিয়েছে জায়গা ভাঙার জন্য। আসল উদ্দেশ্য অসীমের ঘরটি উচ্ছেদ করা। রাস্তার নামে জায়গাটি দখল করা। আমরা বিএনপি-জামাতসহ পাড়ার সবাই অসীমের পক্ষে রয়েছি। আমরা নির্যাতিত ব্যক্তির পক্ষে।
এ বিষয়ে তারাপুর চা বাগানের বাগানের ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী বলেন, গত ৫ তারিখ রাতে ওই মহিলা বাগানের জায়গাতে দেয়াল তুলেছিল। গত মঙ্গলবার এলাকাবাসী বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ওই দেওয়াল ভেঙে দিয়েছেন। আর অসীম দাশের পিতা বাগানে চাকরি করতেন; সেই সুবাধে তাদের বাগানের জায়গাতে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে। তারা অনেকদিন ধরে বাগানের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করছে।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট মহানগর মহিলা দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি জেসমিন বেগমের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে, শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পূজা উদযাপন ও ঐক্য পরিষদ নেতারা।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব বলেন, অসীমের পরিবার প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে। ৫ অগাস্টের পর জোর করে এই বিএনপি নেত্রী দেওয়াল ভেঙে ২ ফুট জায়গা নিয়ে নেন পরে আরও ৫ ফুট দাবি করেন। সে জায়গা না দেওয়ার কারণে তার ঠাকুরঘর বসত-ঘরে হামলা চালানো হয়। সেটারও প্রমাণ পেয়েছি। ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ও এলাকার মানুষ তাকে রক্ষা করায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “অসীম দাসের বাড়িতে যে হামলা হয়েছে, সেটা জেনে আমরা আজ এখানে এসেছি। আমরা যেটা জানতে পেরেছি। ৫ অগাস্টের পরে ওরা জোরপূর্বক এসে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে দেয়। এখন সে আবার দাবি করছে আরও ৫ ফুট অতিরিক্ত ভেঙে দিতে হবে। অর্থাৎ অসীমের পুরো ঘরটাই তাদের দিয়ে দিতে হবে। একটা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই মহিলা এটা দাবি করছে। সে পাঁয়তারা করে নিরীহ পরিবারটিকে উৎখাত করার জন্য।”
এ সময় আরো ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপীকা শ্যাম পুরকায়স্থ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুদীপ রঞ্জন দেব বাপ্পু, ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কৃপেষ পাল, পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক লাল দে, সদস্য সমর কুমার দাস, এয়ারপোর্টে থানা ঐক্য পরিষদের সভাপতি জিডি রুমা, পূজা উদযাপন পরিষদ এয়ারপোর্টে থানা সাধারণ সম্পাদক ভৈরব দেবনাথ, পূজা উদযাপন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি হিমাংশু দেবনাথ।