মাত্র ১৭ বছর বয়সেই যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি পাইলট সার্টিফিকেট অর্জন করেছে সিলেটের সন্তান আহনাফ আবিদ মাহির।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) থেকে গত ৩০ আগস্ট এই সনদ অর্জন করে সে। এর মাধ্যমে আহনাফ এখন থেকে অ–বাণিজ্যিক একক ইঞ্জিন বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছে।
অর্জনের পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আহনাফ বলেন, ‘যেই মুহূর্তে আমি বিশ্বের আকাশে উড়োজাহাজ ওড়ানোর বেসরকারি পাইলট সনদ পেলাম, তখন আমি একদিকে নার্ভাস ছিলাম, অন্যদিকে মন খুশিতে ভেসে যাচ্ছিল। সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছিল, আমি শুধু আমার নিজের নয়, বাবা-মায়েরও স্বপ্ন পূরণ করেছি।’
প্রায় এক যুগ আগে আহনাফের বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে যান। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। মাত্র দশ বছর বয়সে, লস অ্যাঞ্জেলসের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে উড়োজাহাজ নিয়ে বক্তৃতা দেয় সে। সেখান থেকেই শুরু হয় আকাশ ছোঁয়ার যাত্রা।
১৪ বছর বয়সে স্থানীয় এভিয়েশন ক্যাডেট প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে বিমানবিজ্ঞান, নেভিগেশন, ককপিট নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেয়।
১৫ বছর বয়সে শুরু করে আনুষ্ঠানিক ফ্লাইট ট্রেনিং, আর ১৬তম জন্মদিনে প্রথমবার একা আকাশে উড়ে যায়-যা ছিল তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
আহনাফের স্কুলজীবন শুরু হয় লস অ্যাঞ্জেলসের আর্ভিন স্টিম ম্যাগনেট স্কুলে, যেখানে বিজ্ঞান, রোবোটিকস ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করে। পরে ভর্তি হয় ডাউনটাউন বিজনেস ম্যাগনেটে। পড়াশোনার চাপের মধ্যেও নিয়মিত ফ্লাইট ট্রেনিং চালিয়ে যায় সে।
স্কুল ও প্রশিক্ষণের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে সপ্তাহে একবার বা মাসে একবারই উড়ার সুযোগ হতো। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে নিয়মিত ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয় প্রথম ক্রস–কান্ট্রি ফ্লাইটের, যা সফলভাবে সম্পন্ন করে প্রায় ১০২ মাইল দূরের সান্তা ইনেজ পর্যন্ত।
উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০ ঘণ্টা করে গ্রাউন্ড স্কুলে অধ্যয়ন করত আহনাফ। বিমানবিজ্ঞান, আবহাওয়া, নেভিগেশন ও নিরাপত্তা বিষয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করে।
গত মার্চে এফএএ-এর লিখিত পরীক্ষায় প্রথমবার ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সন্তুষ্ট হয়নি; দ্বিতীয়বার আরও কঠোর পরিশ্রম করে ৯০ শতাংশ স্কোর করে। অবশেষে আগস্টে চূড়ান্ত চেকরাইডে উত্তীর্ণ হয়ে বেসরকারি পাইলট সনদ অর্জন করে।
আহনাফের এই অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও আনন্দের জোয়ার এনেছে।
অনেকেই বলছেন, মাত্র ১৭ বছর বয়সে আহনাফের সাফল্য তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক।