, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ডাক্তারী পেশা পৃথিবীর অন্যতম মহৎ ও মানবিক পেশা : ফখরুল ইসলাম মৌলভীবাজারে প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করায় প্রেমিক গ্রেপ্তার রাষ্ট্র ও জনগণের যে কোন প্রয়োজনে পুলিশ পাশে থাকবে :  এসএমপি কমিশনার সিলেট-ঢাকা ৬ লাইন মহাসড়ক কাজের দ্রুত অগ্রগতির ব্যাপারে প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক : ইউএনও ঊর্মি রায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস খাদে পড়ে আহত ৩০ ইলিয়াস আলীকে কারা গুম করেছিল, ‘বের করা হয়েছে’ : ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের ঘোষণা সিলেটে ঘর থেকে তুলে নিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১ আজ রোববার সিলেটে একঘন্টার জন্য বন্ধ থাকবে দোকানপাট, চলবে না যানবাহন উইমেন ফর উইমেন রাইটস’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে : এডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম

সিলেটে বন্যা : আশ্রয়কেন্দ্রে নেই ঈদের হাসি

সিলেটের জকিগঞ্জে এবারের ঈদুল আজহা কেটেছে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যাদুর্গত মানুষের সীমাহীন কষ্ট আর চোখের জলে। কোরবানির ঈদ—ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হলেও বাস্তবতা যেন এখানে শুধুই দুর্ভোগ।

জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামের মানুষ এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বহু গ্রাম প্লাবিত করে ফেলেছে। অনেকের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র এমনকি জামাকাপড়ও ভেসে গেছে। ফলে ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা, জীবনের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

শনিবার (৭ জুন) ঈদের সকালে খলাছড়া ইউনিয়নের ঈদগাহ বাজার এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক মানুষের মুখে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। সকালের নাস্তা বলতে পান্তা বা মুড়ি, কোনো বাড়তি খাবার নেই। কেউ কেউ অস্থায়ী চুলায় হাড়ি চাপিয়ে চাল-ডাল জোগাড় করেছেন কোনোমতে, কিন্তু কোরবানির গোশতের দেখা নেই।

“ঈদ মানেই আনন্দ, কিন্তু এবার আমাদের ঈদ মানে কষ্টের আরেকটি দিন,”—বললেন ধলিগাঁও গ্রামের জামিল আহমদ। তাঁর ঘরে এখনো পানি, বেড়া ভেঙে গেছে, তাই পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলঘরে।

একই গ্রামের ফয়জুর রহমান জানালেন, “ঘরের ভেতর পলিমাটি ঢুকে সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো পানি জমে আছে। ঈদ কিভাবে করব, ভাবতেই পারছি না।”

পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, “৪৪ বছরে এই প্রথম আমি আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ করলাম। ঘরে ঢোকার উপায় নেই। কোরবানির ঈদে গোশত খাওয়াও কপালে নেই!”

বিধবা সুনিয়া বেগমের কণ্ঠে শোনা গেল দীর্ঘশ্বাস: “একটা সন্তানকে নিয়ে কোনোভাবে টিকে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে কোরবানির গোশত পাওয়ার আশা করিও না। গ্রামের লোকজন আগে দিত, এখন তো সবাই পানিবন্দি।”

আফিয়া বেগম নামের এক নারী জানান, “ছয় সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারীও কাজ হারিয়েছে বন্যায়। ঘর হারিয়ে এখন সবাই মিলে এ কেন্দ্রে থাকছি। ঈদের কিছুই বুঝতে পারছি না, শুধু দিন পার করছি।”

মুজিবুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, “কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না। ঘর তো নেই, কোথায় ফিরব?”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি। দ্রুত সহায়তা পৌঁছাতে চেষ্টা করছি।”

জনপ্রিয়

ডাক্তারী পেশা পৃথিবীর অন্যতম মহৎ ও মানবিক পেশা : ফখরুল ইসলাম

সিলেটে বন্যা : আশ্রয়কেন্দ্রে নেই ঈদের হাসি

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

সিলেটের জকিগঞ্জে এবারের ঈদুল আজহা কেটেছে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যাদুর্গত মানুষের সীমাহীন কষ্ট আর চোখের জলে। কোরবানির ঈদ—ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হলেও বাস্তবতা যেন এখানে শুধুই দুর্ভোগ।

জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামের মানুষ এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বহু গ্রাম প্লাবিত করে ফেলেছে। অনেকের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র এমনকি জামাকাপড়ও ভেসে গেছে। ফলে ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা, জীবনের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

শনিবার (৭ জুন) ঈদের সকালে খলাছড়া ইউনিয়নের ঈদগাহ বাজার এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক মানুষের মুখে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। সকালের নাস্তা বলতে পান্তা বা মুড়ি, কোনো বাড়তি খাবার নেই। কেউ কেউ অস্থায়ী চুলায় হাড়ি চাপিয়ে চাল-ডাল জোগাড় করেছেন কোনোমতে, কিন্তু কোরবানির গোশতের দেখা নেই।

“ঈদ মানেই আনন্দ, কিন্তু এবার আমাদের ঈদ মানে কষ্টের আরেকটি দিন,”—বললেন ধলিগাঁও গ্রামের জামিল আহমদ। তাঁর ঘরে এখনো পানি, বেড়া ভেঙে গেছে, তাই পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলঘরে।

একই গ্রামের ফয়জুর রহমান জানালেন, “ঘরের ভেতর পলিমাটি ঢুকে সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো পানি জমে আছে। ঈদ কিভাবে করব, ভাবতেই পারছি না।”

পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, “৪৪ বছরে এই প্রথম আমি আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ করলাম। ঘরে ঢোকার উপায় নেই। কোরবানির ঈদে গোশত খাওয়াও কপালে নেই!”

বিধবা সুনিয়া বেগমের কণ্ঠে শোনা গেল দীর্ঘশ্বাস: “একটা সন্তানকে নিয়ে কোনোভাবে টিকে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে কোরবানির গোশত পাওয়ার আশা করিও না। গ্রামের লোকজন আগে দিত, এখন তো সবাই পানিবন্দি।”

আফিয়া বেগম নামের এক নারী জানান, “ছয় সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারীও কাজ হারিয়েছে বন্যায়। ঘর হারিয়ে এখন সবাই মিলে এ কেন্দ্রে থাকছি। ঈদের কিছুই বুঝতে পারছি না, শুধু দিন পার করছি।”

মুজিবুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, “কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না। ঘর তো নেই, কোথায় ফিরব?”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি। দ্রুত সহায়তা পৌঁছাতে চেষ্টা করছি।”