সিলেটের কানাইঘাটে জোড়া খুনের মামলার রায়ে দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড, আরেকজনের যাবজ্জীবন এবং আরো দুইজনকে ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক ঝলক রায় এ রায় ঘোষণা করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সালেহ আহমদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাকিবারা পৈত গ্রামের মৃত আবু শহীদের ছেলে বোরহান উদ্দিন (৪৬) ও তার সহোদর আব্দুন নুর (৫৩)। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়। তাদের ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড ও ৫ হাজার জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ৩২৬ ধারায় বোরহান উদ্দিনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড, আরো ১০ হাজার জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং আব্দুন নুরকে ৩২৪ ধারায় আরো এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের সহোদর আব্দুস শুকুরকে (৫০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
অপর দুই আসামি মৃত সুলেমানের ছেলে ছইদুল (৫৮) ও পাশ্ববর্তী ভাটিপাড়ার মৃত আবু শহীদের ছেলে সুলতানকে (৩৮) ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ওই ৪ জনকে ৪৪৭ ধারায় আরো একমাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বিচার চলাকালে ২০০৯ সালের ১৬ জুন ১নং আসামি আব্দুল কাশিম মারা যাওয়ায় তাকে এই মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা পলাতক এবং অপর ৩ জন জেল হাজতে রয়েছেন।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ২২ জুলাই দুপুর ১টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার বাকিবারা পৈত গ্রামে বাড়ির সীমানা প্রাচীন নিয়ে বিরোধের জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন বাদি আব্দুল্লার স্ত্রী সাজিদা বেগমের সাথে আসামিদের ঝগড়া হয়। অকথ্য গালিগালাজ করে ঘরে ঢুকে ভাঙচুর ও হামলা করেন তারা। সাজিদা প্রতিবাদ করলে আবুল কাশিম ঘরে ঢুকে দা দিয়ে কোপ দেন। কাশিমের সহোদর ২নং আসামি রড দিয়ে আঘাত করেন। স্ত্রীর চিৎকার শুনে বাড়ির পাশে ক্ষেত থেকে উঠে আসেন আব্দুল্লাহ। তখন ২ ও ৪ নম্বর আসামি এসে তাকেও মারধর করেন। আব্দুল্লাহকে রক্ষায় বৃদ্ধ বাবা আবু বকর (৭১) এগিয়ে আসলে তাকেও আসামিরা দা, রুল ও রড দিয়ে এলাপাতাড়ি মারপিঠ করেন। তখন তার শ্বশুর মাওলানা মঈন উদ্দিন (৬০) মাদরাসা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন, চিৎকার শুনে বাড়িতে উঠলে তাকেও মারপিঠ করা হয়। এরপর বাদির শ্যালক হাবিবুর রহমান চিৎকার শুনে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে নিয়ে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদির বাবা আবু বকরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আহত অন্যদের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় পরদিন (২৩ জুলাই) নিহত আবু বকরের ছেলে আব্দুল্লাহ বাদি হয়ে কানাইঘাট থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর চিকিৎসধীন অবস্থায় তার শ্বশুর মাওলানা মঈন উদ্দিন ঘটনার ৪ দিন পর ২৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলাটি তদন্ত শেষে কানাইঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর ৫ সহোদরসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য অত্র আদালতে স্থানান্তর হলে ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি ও ১৯ জন সাক্ষীর ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি নজরুল ইসলাম এবং আসামি পক্ষে ছিলেন আব্দুল খালিক।