সিলেটের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই নতুন জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা তাঁর বিচক্ষণতা ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতির এক অগ্নিপরীক্ষা। তাঁর পূর্বসূরি শের মাহবুব মুরাদের সময়ে সংঘটিত সাদাপাথর পাথরক্ষেত্র থেকে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর লুটের ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। এই গুরুতর অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
সাদাপাথর কেলেঙ্কারি: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি
দেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক সম্পদ, সাদাপাথর, থেকে সংঘটিত এই বিশাল লুটপাট কেবল একটি অর্থনৈতিক চুরিই নয়, বরং এটি পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতারও এক নগ্ন চিত্র। জাতীয় পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল, তা দূর করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এই ঘটনার গভীরে গিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, এই অপরাধের সাথে যেই জড়িয়ে থাকুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এই পদক্ষেপ সিলেটবাসীর মনে ন্যায়বিচার ও সুশাসনের প্রতি নতুন করে আস্থা জাগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নগর জীবনযাত্রার উন্নয়নে নতুন উদ্যম: ফুটপাত উদ্ধার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ
গুরুতর জাতীয় ইস্যুর পাশাপাশি, জেলা প্রশাসক সিলেট মহানগরীর দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানেও সমানভাবে মনোযোগী। নগরীর প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফুটপাত দখল এবং অবৈধ স্থাপনা। এই অবৈধ দখলদারিত্ব একদিকে যেমন নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করছে, তেমনি পথচারীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে এবং যানজট সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই অচলাবস্থা ভাঙতে জেলা প্রশাসক এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি নগরীর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের সাথে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেছেন। এই খোলামেলা আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে তিনি একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন, যার মূল লক্ষ্য হলো ফুটপাতকে পথচারীদের জন্য ফিরিয়ে দেওয়া এবং অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নগরীকে আরও সুশৃঙ্খল করে তোলা।
তাঁর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে, যা নগরবাসীর মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। তবে, উচ্ছেদ প্রক্রিয়াকে মানবিক রাখতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসনেরও আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর এই সমন্বিত উদ্যোগ নগরীর যানজট নিরসনে এবং নাগরিক জীবনযাত্রার মানে একটি বড় পরিবর্তন আনবে বলে নগরবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।
ভবিষ্যতের পথে সিলেট: আশার আলো ও পরিবর্তনের ডাক
নতুন জেলা প্রশাসকের এই দ্বিমুখী নীতি – অতীত অপরাধের বিচার এবং বর্তমানের নাগরিক সমস্যা সমাধান – সিলেটকে এক নতুন পথে চালিত করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। সাদাপাথর লুটপাটের মতো গুরুতর বিষয়ে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং নগরীর যানজট ও দখলদারিত্বের মতো জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানে তাঁর কার্যকর উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, তিনি একজন দূরদর্শী ও কর্মঠ প্রশাসক। সিলেটবাসীর আশা, তাঁর নেতৃত্বে এই অঞ্চল একদিকে যেমন অপরাধমুক্ত হবে, তেমনই নাগরিক জীবনেও আসবে এক নতুন গতি ও স্বাচ্ছন্দ্য।